বিদ্রোহীদের দখলে সিরিয়ার আলেপ্পো
আট বছর পর আবার আসাদ সরকারের হাতছাড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি
আকস্মিক আক্রমণের তিন দিন পর সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে প্রবেশ করেছে। ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনী শহরটি পুনরুদ্ধারের পর প্রথমবারের মতো তারা সেখানে পা রাখে। আলেপ্পো এবং এর আশপাশে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে কয়েক ডজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষেরও প্রাণ গেছে।
শনিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, বিদ্রোহীরা শহরের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। গত বুধবার বিদ্রোহীরা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে শহরের বাইরের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রবেশ করে। এর মধ্য দিয়ে বেশ কয়েক বছর স্তিমিত থাকা সংঘাতের পুনর্জাগরণ ঘটেছে।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, কট্টর ইসলামপন্থি সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা এ আক্রমণ চালায়। বেসামরিক মানুষের জানমাল রক্ষায় তারা পুনরায় সেনা মোতায়েন প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছেন।
সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা আলেপ্পোয় নির্দিষ্ট কোনো অবস্থানে যেতে পারেননি। কারণ, তারা বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিমান বিদ্রোহীদের টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরের কেন্দ্রে পৌঁছায়। ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে দেখা গেছে, জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত যোদ্ধারা শহরের কেন্দ্রস্থলের একটি চত্বরে সিরিয়ার সরকারবিরোধী পতাকা ওড়াচ্ছে।
আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের প্রবেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের জন্য এক বড় ধাক্কা।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী বলছে, তারা একটি ‘বড় হামলার’ জবাব দিয়েছে। তাদের দাবি, শহরটির বিভিন্ন পয়েন্টে সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করা হয়েছে। তবে শহরের একাধিক বাসিন্দা জানান, আলেপ্পোর পশ্চিমাংশের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে সরকারি বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার নবগঠিত সশস্ত্র বিরোধী জোটের সামরিক শাখার প্রধান বলেন, তারা ‘শাসক বাহিনী ও ইরানের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষের পর’ আলেপ্পোর উপকণ্ঠে সিরিয়া সরকারের সামরিক
বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। পরে বিদ্রোহী বাহিনী একটি ভিডিও শেয়ার করে। এতে দেখা গেছে, বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলো আলেপ্পো ছাড়ছে।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী বাহিনী আলেপ্পোতে প্রবেশ করতে থাকে। এতে শহরটিতে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়।
শহরের কেন্দ্রীয় সাদুল্লাহ আল-জাবিরি স্কয়ারে ধারণ করা দুটি ভিডিওতে দেখা গেছে, জলপাই রঙের পোশাকে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার বিরোধী দলের পতাকা নাড়ছে; প্রায় জনশূন্য চত্বরে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে স্লোগান দিচ্ছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, এদিন আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আঘাত হানে আর্টিলারি শেল। এতে অন্তত চারজন নিহত হন। এ ঘটনার জন্য বিদ্রোহীদের দায়ী করা হলেও তারা তা অস্বীকার করেছে।
আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি আর্টিলারি শেল ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলায় আঘাত করেছিল। তখন ছাত্ররা ভেতরেই ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটসের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে বৃহস্পতিবার আলেপ্পো ও ইদলিবের গ্রামাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ছয় শিশু, দুই নারীসহ অন্তত ১৫ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। আহত হন ৩৬ জন। এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) এক জেনারেল নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আকস্মিক উত্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তিনি সিরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি ইরানের ‘নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন’ অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন। ২০১১ সালে বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানের পর ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থনে রাশিয়া সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন করে।