International

হামাসের কাছে নিজেদের জন্য ‘সুবিধাজনক’ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েলের

মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের কাছে নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইসরায়েল। এই চুক্তিতে বাকি ১০০ জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।

সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফায়দা নিয়ে নিজেদের সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি চুক্তি হামাসের কাছে উপস্থাপন করছে ইসরায়েল। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখনো চুক্তির বিস্তারিত জানা যায়নি।

যেভাবে এগিয়েছে চুক্তির আলোচনা

অক্টোবর মাসে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা, লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জানুয়ারিতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক—সব মিলিয়ে, পরিস্থিতি হামাসের অনুকূলে নেই বললেই চলে।

এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, ‘মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতমূলক হলেও হামাস এখন জিম্মি-মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির চুক্তি মেনে নিতে পারে।’

এর আগে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছিল কাতার। তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, এই ভূমিকায় ফিরে আসতে রাজি হয়েছে দোহা। 

এই চুক্তিতে আগের খসড়া চুক্তির বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

রমজান মাসে খাবারের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছে ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

রমজান মাসে খাবারের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছে ফিলিস্তিনিরা।

এই প্রস্তাবিত চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানরা অংশ নেন। এই বৈঠকে চুক্তির শর্তগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর তা মিসরের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে পাঠানো হয়। তাদের মাধ্যমেই এটি কায়রোতে হামাসের প্রতিনিধিদলের হাতে পৌঁছায়।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ‘মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মূল দায়িত্ব পালন করছে মিসর। তবে কাতারও সঙ্গে আছে।’

নতুন প্রস্তাবে ৪২ থেকে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে হামাস ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও সব নারী জিম্মিদের মুক্তি দেবে। পাশাপাশি, যাদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন, তারাও মুক্তি পাবেন।

শুরুতে ৩৩ জন জিম্মি মুক্তির দাবি করলেও ইসরায়েল তাদের সেই প্রত্যাশা থেকে সরে এসেছে।

উল্লেখ্য, এই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরাও আছেন।

হামাসের জবাবের অপেক্ষায় ইসরায়েল

ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা হামাসের জবাবের অপেক্ষা আছি। মিসরীয়দের কাছ থেকে আমরা সেই বার্তা পাব।’

‘কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে নীতিগতভাবে নতুন চুক্তি মেনে নিয়ে এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে হামাস দরকষাকষি করতে আগ্রহী কী না’, যোগ করেন তিনি।

হামাসের কাছ থেকে ইতিবাচক জবাব পেলে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা কায়রো যেয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করবেন। বিরতির সময়সীমা, জিম্মি ও বন্দির সংখ্যা নির্ধারণ ও কোন কোন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন, সে বিষয়গুলো নির্ধারণ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ জানান, ট্রাম্প গাজায় জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছেন।

এর আগে ট্রাম্প হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, ২০ জানুয়ারি তিনি ক্ষমতা গ্রহণের আগে হামাস সব জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ‘মধ্যপ্রাচ্যে নারকীয় পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হবে এবং তিনি যুদ্ধ বন্ধে এমন সব উদ্যোগ নেবেন যা নজিরবিহীন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button