৮০ লাখ স্মার্টফোনে ম্যালওয়ারের আক্রমণ, অর্থ ও তথ্য চুরির শঙ্কা
বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন এক বড় হুমকির কথা জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যাকআফি। ‘স্পাইলোন’ নামের ম্যালওয়ারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ চুরি করার পাশাপাশি তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ম্যাকআফির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ম্যালওয়ারের শিকার হয়েছে অন্তত ৮০ লাখ স্মার্টফোন। এই ম্যালওয়ারযুক্ত ক্ষতিকর অ্যাপগুলো গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো পরিচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, রং ও নকশা নকল করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীরা প্রতারণার শিকার হন।
স্পাইলোনযুক্ত ভুয়া এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর যন্ত্রে ইনস্টল হওয়ার পর তাঁদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাবের তথ্য, কর্মস্থলের বিবরণ এবং ফোন–সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জমা দিতে বলা হয়। এসব তথ্য ভুক্তভোগীর যন্ত্র থেকে সরাসরি চুরি করা হয়।
ম্যাকআফি জানিয়েছে, এসব তথ্য দিয়ে ব্যবহারকারীকে ব্ল্যাকমেইল করার পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া ছবি বা ভিডিও তৈরি করা হয়, যা ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
স্পাইলোন ম্যালওয়ারে আক্রান্ত এই অ্যাপগুলো অনেক সয়ম ভুয়া ঋণের প্রস্তাবও দেয়। পরে প্রতিশ্রুত ঋণের চেয়ে কম অর্থ দেওয়া হয়, কিন্তু ব্যবহারকারীকে পুরো ঋণ পরিমাণের সঙ্গে উচ্চ সুদ ও গোপন ফি পরিশোধে বাধ্য করা হয়। কিছু অ্যাপ ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ কেটে নেয়।
ম্যালওয়ারের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ম্যাকআফি কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলছে, ফোনে ইনস্টল করা অ্যাপগুলোকে যন্ত্রের যেসব তথ্য সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে এর বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সন্দেহজনক কোনো কার্যকলাপ দেখলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা অ্যাপ স্টোরে রিপোর্ট করতে হবে।
এই ম্যালওয়ারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। বিশেষ করে ভারত, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কেনিয়া, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, চিলি ও নাইজেরিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালওয়ারের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তিগত সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে তা যাচাই করে নেওয়া এবং ফোনের ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে সহায়ক হতে পারে।