Bangladesh

ভারতের ‘শর্ত’ মেনে ৯২ জেলের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু

নতুন-পুরাতন মিলে ভারতের কারাগারে থাকা ৯২ বাংলাদেশি জেলে ও নাবিককে মুক্ত করে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা। ‘নিরপরাধ’ ওই জেলে ও নাবিকদের দ্রুত মুক্ত করতে ভারতের শর্তপূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ৩ দিন আগে বাংলাদেশে আটক ৯৫ ভারতীয় জেলের মুক্তির বিনিময়ে দেশটিতে আটকা নতুন-পুরাতন মিলে ৯২ জেলে-নাবিককে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল নয়াদিল্লি। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুস ছাত্তার আগেই জানান, সমপ্রতি বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন ৯৫ জন ভারতীয় জেলে। তাদের খুলনা অঞ্চলের একাধিক কারাগারে রাখা হয়েছে। গত ১৪ই অক্টোবর থেকে ৩রা নভেম্বরের মধ্যে তাদের আটক করা হয়। মূলত তাদের ছাড়িয়ে নিতে চাপ বা কার্ড হাতে নিতে ভারতীয় কোস্ট গার্ড বাংলাদেশি নাবিক ও জেলেদের অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে যায়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জেলেদের বিনিময়ের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আহূত জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন- সদ্য সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি ও মিশনগুলোর কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। সভায় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ছাড়াও কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকার ভারতের জলসীমার কাছ থেকে গত ৯ই ডিসেম্বর দুপুরে এফভি মেঘনা-৫ ও এফভি লায়লা-২ নামের মাছ ধরার দু’টি ট্রলার ৮০ নাবিকসহ ধরে নিয়ে যায় ভারত। বাংলাদেশের নৌযান দু’টি খুলনা বেল্টের হিরণ পয়েন্ট এলাকায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় তাদের জলসীমায় ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ করে নয়াদিল্লি। তাদের দাবি এ কারণেই নাকি নৌযান দু’টি নাবিক ও জেলেসহ ধরে নিয়ে গেছে তারা। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ১২ জন জেলে ভারতীয়দের হাতে আটক হয়। তাদের বিরুদ্ধে দেশটির জলসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগ খণ্ডন করা যায়নি। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় সংঘটিত অপরাধগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেখানে দুই দেশে আটক জেলে ও নাবিকদের বিনিময়ের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বলা হয়, বাংলাদেশ যেমন এ দেশের জেলে ও নাবিকদের ফেরত চায়, ভারতও কাছাকাছি সময়ে তাদের আটক জেলে ও নাবিকদের ফেরত চাইছে। বৈঠকে উপস্থিত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জলসীমা অতিক্রম করে এক দেশের জেলেদের অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়াটা এবারই প্রথম নয়। ফলে অতীতেও এক দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে আলোচনার মাধ্যমে ফেরত আনার নজির রয়েছে। কিন্তু ৫ই আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুই দেশের আলোচনার গতিটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। যেহেতু গত সপ্তাহে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় জেলে ও নাবিকদের ফেরানোর প্রক্রিয়ায় জটিলতা হবে না বলেই আশা করছে সরকার। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে- এখন নৌযানসহ নাবিক ও জেলেসহ দুই পক্ষ কীভাবে একে- অন্যকে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে মতবিনিময় করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা। এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস গত বৃহস্পতিবার জানায়, সাগরে মাছ ধরার সময় ভারতীয় কোস্ট গার্ডের হাতে আটক বাংলাদেশি ৮০ জেলে ও মাঝিমাল্লাকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সে দেশের পুলিশ। তাদের ওড়িশা রাজ্যের পারাদ্বীপ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পারাদ্বীপের উপ-পুলিশ সুপার সন্তোষ কুমার জেনা জানান, আটক বাংলাদেশি জেলেদের পারাদ্বীপ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচয় যাচাইয়ের জন্য তাদের পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ এটি। সন্তোষ কুমার জেনা বলেন, সাগরে মাছ ধরার জন্য প্রয়োজনীয় প্রটোকল অনুসরণ করে এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার বেলা ১১টায় সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টের অদূরে ফেয়ারওয়ে বয়াসংলগ্ন এলাকা থেকে ৮০ জেলে-মাঝিমাল্লাসহ দু’টি ট্রলার ধরে নিয়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ড দাবি করে বাংলাদেশি জেলেরা ভারতের জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই ভারতীয় কোস্ট গার্ডের অভিযোগ নাকচ করে আসছে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর। তারা জানায়, মাছ ধরার ট্রলার এফভি মেঘনা-৫ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জলসীমার ২১ ডিগ্রি ১৩৫ থেকে ৮৯ ডিগ্রি ১৩.৫ পজিশনে ছিল। এফভি লায়লা-২ ট্রলারটিও একই পজিশনে ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে জেলে, নাবিকসহ দু’টি মাছ ধরার জাহাজ নিয়ে যাওয়া হয়েছে অভিযোগ করে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে সচিব জানান, কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকার ঘটনাটির কড়া প্রতিবাদ করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button