গাজাবাসীকে পানি না দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল
গাজার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর হামলা চালিয়ে সেখানকার মানুষকে পানি থেকে বঞ্চিত করছে ইসরায়েল, যা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, গত ১৪ মাসে ফিলিস্তিনি উপত্যকার পানি সরবরাহ কাঠামোয় ইসরায়েল যত হামলা চালিয়েছে, সেগুলো নিয়ে তদন্ত করেছে তারা।
এতে দেখা গেছে, গাজাবাসী যেন সুপেয় পানি না পায়, সে জন্য ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃত হামলা চালিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে দূষিত জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করেছেন। যার ফলে সেখানে পানিবাহিত রোগের মহামারি সৃষ্টি হয়ে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা গণহত্যা। এই মহামারিতে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক বিল ভন এসভল্ড বলেছেন, তারা ১১৫ জনের জবানবন্দি নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। যার মধ্যে আছে সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক এবং সেবাকর্মী। এ ছাড়া প্রতিবেদন তৈরিতে স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবে সুপেয় পানির অবকাঠামোয় হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি বসতিতে হামলা চালায়। এর পর শুরু হয় যুদ্ধ, যা ১৪ মাস ধরে চলছে। যুদ্ধের শুরুতে তৎকালীন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে গাজায় পানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য গণহত্যা সংঘটিত করার ইচ্ছার সুস্পষ্ট প্রমাণ। গাজাবাসীকে পানি থেকে বঞ্চিত করায় ইসরায়েলের ওপর নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে গতকাল ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এর পরই ইয়েমেনের রাজধানী সানা, হোদেইদা বন্দর ও তেল পরিশোধনাগার লক্ষ্য করে পাল্টা বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ৯ জন নিহতের তথ্য জানিয়েছে হুতিরা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ইয়েমেনে এই হামলার জন্য কয়েক সপ্তাহ প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। দুই হাজার কিলোমিটার দূরের হামলায় অংশ নিয়েছিল কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান, রিফুয়েলার এবং গোয়েন্দা বিমান।
এক হুতি কর্মকর্তা বলেছেন, বন্দরের মতো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল গুরুতর অপরাধ করেছে। যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া একই দিন গাজার বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচার হামলা চালিয়েছে দখলদাররা। এতে জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে ছয়জন, আল-শাতি ক্যাম্পে তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে মৃতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে।
ইসরায়েলিদের এসব বর্বর হামলার মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গত বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স কয়েকটি সূত্রের বরাতে জানায়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি হতে পারে। এ নিয়ে মিসরের কায়রোতে আলোচনা চলছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি নতুন কোনো শর্ত জুড়ে না দেয়, তাহলে তারা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত আছে।
এদিকে জার্মানির সরকারি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের ১৩ সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনে ইসরায়েলের পক্ষে লেখার জন্য তাদের ভয়ভীতি এবং চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অফিসের ভেতর ফিলিস্তিনিবিরোধী এবং ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড কোনো বাধা ছাড়াই করা হয় বলে জানিয়েছেন তারা।
আলজাজিরার হাতে আসা একটি নথিতে দেখা গেছে, ডয়চে ভেলের কর্মীদের সংবাদ লেখার সময় ‘ফিলিস্তিনি’ শব্দটি ব্যবহার না করতে উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ ফিলিস্তিন এখনও স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়নি। তাই ফিলিস্তিনের জায়গায় ‘ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।