বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ ছিল দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয় দ্বিতীয় প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ ছিল বিগত সরকারের বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির প্রকল্প। সেই সঙ্গে যেভাবে চুক্তির প্রস্তুতি চলছিল তা ছিল পুরোপুরি দেশের স্বার্থবিরোধী। সে কারণে ওই প্রকল্প এখন প্রায় অনিশ্চিত। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। বৈঠকের বার্তা পৌঁছানো হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের কাছেও। আপাতত বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় বলে জানান বিএসসিএলের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তারা বলেন, এ নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হতে যাচ্ছিল তা ছিল অনেকটা অস্বাভাবিক। এখানে লেনদেনের যে শর্ত ছিল তা মোটেই গতানুগতিক নয়। কেন এ ধরনের চুক্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল আমরা এখন তা জানার চেষ্টা করছি। আর্থিক লেনদেনের শর্তের পাশাপাশি অনেক অসংগতি পেয়েছি। সেগুলো এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ধরনের একপেশে ও দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া চুক্তি করার নেপথ্যে কারা জড়িত, তাদের উদ্দেশ্যই বা কী ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রকল্পটি কতদিনের মধ্যে আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে জানান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের নাম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নামের একটি রয়েছে। তাই পরবর্তী স্যাটেলাইটের নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন তারা। তবে ওই প্রকল্পের নাম এখনো পরিবর্তন করা হয়নি বলে জানান বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ভাবার বিষয় রাশিয়ার সঙ্গে যাব নাকি ফ্রান্সের সঙ্গে যাব? এর মধ্যে আবার আর্থিক ইস্যুও রয়েছে। আমরা যদি সফট লোন পাই তাহলে কার কাছ থেকে পাব সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আগের সরকারের আমলে বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে অনেকদূর এগিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া যে লোন অফার করেছিল সেটার ইন্টারেস্ট রেট অনেক হাই ছিল। ৫ ভাগেরও বেশি। কিন্তু সফট লোন হয় সাধারণত এক থেকে দেড় পার্সেন্টের মধ্যে।
এদিকে বিএসসিএলের কর্মকর্তারা জানান, যৌক্তিক কারণে বর্তমান সরকার হয়তো প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করতে চায় না। তারা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। এ ধরনের বড় প্রকল্পর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তির একটি যোগসূত্র থাকে। কারণ একটি রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে অপর দেশের রাজনৈতিক সরকারের বোঝাপড়া থাকে। যেহেতু বিশাল অঙ্কের প্রকল্প তাই রাজনৈতিক বোঝাপড়া থাকলে প্রকল্পের কাজ অনেকটা সহজ হয়। বিশেষ করে ঋণ পাওয়া ও তা পরিশোধের ক্ষেত্রে দুই পক্ষের জন্য সহায়ক হয়। তা ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদের হয়ে থাকে। তাই নির্বাচিত সরকারের জন্য এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ভালো বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন সরকার।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য রুশ ফেডারেশনের গ্লাভকসমসের সঙ্গে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয় ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। মহাকাশ বিষয়ক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমসের সঙ্গে স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ বিষয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আর্থ অবজারভেটরি ক্যাটাগরির ওই স্যাটেলাইটটির নির্মাণের অভিযাত্রা শুরু হয়। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ওই প্রকল্পের কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিলম্ব হয়। এটি ২০২৩ সালে উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের অভিযানের সময়কাল নির্ধারণ করা ছিল ১৮ বছরের মতো। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ওপরে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করত। ফলে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট প্রয়োজন ছিল না। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয় ২০১৮ সালে। টিভি চ্যানেলগুলোর সেবা নিশ্চিত করাই এ স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ। এর সাহায্যে চালু করা হয় ডিশ টিভির ডিরেক্ট টু হোম সার্ভিস-ডিটিএইচ। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।