রাজধানীতে বেড়েছে ছিনতাই, শিগগিরই বিশেষ অভিযান পুলিশের
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় যানজটে স্থবির সড়কে চাপাতি হাতে তিন যুবককে ঘুরতে দেখা যায়। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে একটি প্রাইভেট কারের জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আজ রোববার একটি ব্যাংক থেকে ফিরছিলেন কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের। পথে অজ্ঞাত এক যুবক তার গতিরোধ করে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করেন। একটু পরেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আরও দুই যুবক তার দিকে আসতে শুরু করেন। ছিনতাইয়ের আশঙ্কায় দ্রুত সেখান থেকে চলে যান এ লেখক।
পেছন থেকে তখন তাকে উদ্দেশ্য করে ওই যুবকরা বলেন, ‘ওই, তুই না বুইড়া…..বুঝলি ক্যামনে?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মঈনুল আহসান সাবের।
আরেকটি ঘটনার কথা বলা যাক। গত ১৮ ডিসেম্বর বন্ধুদের সাথে সাজেকে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন হাফেজ কামরুল হাসান। রাত পৌনে ৯টার দিকে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে হেঁটে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে ছিনতাইকারীরা তার পেটে ছুরিকাঘাত করে মুঠোফোন ও নগদ সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে হঠাৎ করেই চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। গত দেড় মাসে অন্তত ৩৬টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত এক সপ্তাহে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
এর মধ্যে ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর মগবাজারে ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারান হাবিব উল্লাহ নামের আরেক তরুণ। ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় ওয়াজেদ আলম সীমান্ত (২০) ছিনতাইকারীর হাতে ছুরিকাঘাতের শিকার হন। দুদিন পর ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারা আজ ডিএমপির আওতাধীন বিভিন্ন ডিভিশনের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং অপরাধ দমনে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ”আমারা পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছি, কারও এরিয়ার মধ্যে অপরাধ সংগঠিত হলে, ওই এরিয়ার পুলিশ কর্মকর্তাদের দায় নিতে হবে।”
চলতি মাসের শেষ দিকে বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ”অপরাধীদের ধরতে আমরা এ মাসের শেষ দিকে অভিযান শুরু করব। আশা করছি, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় যানজটে স্থবির সড়কে চাপাতি হাতে তিন যুবককে ঘুরতে দেখা যায়। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে একটি প্রাইভেট কারের জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ১৬ ডিসেম্বর রাতের। মাজহারুল ইসলাম মহসিন নামে ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
একই সড়কে ১৮ ডিসেম্বর রাতের আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেন জুনায়েদ চৌধুরী নামের আরেক ব্যবহারকারী।
ডিএমপি ও আদদালত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহনগরীর আওতাধীন ৫০টি থানায় গত ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৫ জন ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেছেন। সবমিলিয়ে গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন। সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে নিহত হন কামরুল হাসান। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মগবাজারে হাবিব উল্লাহ নামের এক তরুণ ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ছিনতাইয়ের (রবারি বা দস্যুতা) ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬৫টি। গত বছরের একই সময়ে মামলা হয়েছিল ৬৭টি।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের সঙ্গে এ বছরের তুলনা যথার্থ নয়। এ বছরের আগস্ট মাসে পুলিশি কার্যক্রম একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। এখনও পুলিশি কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, বিগত বছরের তুলনায় অপরাধ বাড়ছে। তিনি বলেন, অনেক সময় পুলিশ সব অপরাধের রেকর্ড নেয় না। তাছাড়া আগস্ট মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। গণমাধ্যমের খবর ও সার্বিক পরিস্থিতি স্পষ্ট করছে যে অপরাধ বাড়ছে।
চাঁদা না পেয়ে অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ যুবদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক ধানমণ্ডি ১০-এ পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কার্যালয়ে ভাঙচুর করছে।
অভিযোগ উঠেছে, যুবদলের নেতা-কর্মীরা চাঁদা না পেয়ে এ ভাঙচুর চালিয়েছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেন করেননি।
সার্বিক বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ফিরে না আসার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
তিনি বলেন, ‘দুটি কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। প্রথমত; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকেই এসব কাজে যুক্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয় উঠতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ছিতাইনকারীরা ব্যবহার করছে।