USA

বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার

জিমি কার্টার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বয়স (১০০ বছর) পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। স্থানীয় সময় রবিবার তিনি জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতে মারা যান। 

জর্জিয়ার সাবেক এই বাদাম চাষিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনও নেতা যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন তিনি। তবে ইরান জিম্মি সংকট নিয়ে চুক্তি করতে এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। 

হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়ের পর তিনি শান্তি, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ে বিরামহীনভাবে কাজ করে গেছেন। এ কারণেই তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র ১৯২৪ সালের পহেলা অক্টোবর জর্জিয়ার ছোট শহর প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়। তার বাবা পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে বাদাম চাষ করতেন, আর তার মা লিলিয়ান ছিলেন একজন নার্স। স্কুলজীবনে তিনি ছিলেন একজন তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড়।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সাত বছর কাজ করে সাবমেরিন কর্মকর্তা হয়েছিলেন। সেসময়েই তার বন্ধুর বোন রোজালিনকে বিয়ে করেন। তবে ১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরতে ফিরে আসেন।

তার রাজনীতিতে প্রবেশ একেবারে তৃণমূল থেকে। জর্জিয়ার দুই দফায় সিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর হন। এ সময় তিনি প্রকাশ্যেই নাগরিক অধিকারের পক্ষে আরও বেশী কথা বলতে শুরু করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করেন তখন আমেরিকা উত্তাল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে। এ সময় তিনি নিজেকে পেশাদার রাজনীতিকের চেয়ে একজন বাদাম চাষি হিসেবেই তুলে ধরেন। শুরুতে জনমত জরিপগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তার মাত্র চার শতাংশ সমর্থনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নয় মাস পর তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে দেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। তিনি তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়ে এসেছিলেন।

তিনি তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এরপর ২০১৫ সালে তার ক্যান্সার শনাক্ত হয়। তার বাবা-মা ও তিন বোনও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তার রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে উদারপন্থার ছাপ যেমন ছিল তেমনি তিনি আবার ধর্ম বিশ্বাস থেকে সরে যাননি। তিনি বলেছেন, ‘আপনি ধর্ম বিশ্বাস ও পাবলিক সার্ভিসকে আলাদা করতে পারেন না। আমি কখনোই ঈশ্বরের ইচ্ছা আর আমার রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখিনি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button