রাজনীতিতে স্বস্তি, গণতন্ত্রের সুযাত্রা
বন্দি-গৃহবন্দি থেকে অর্ধযুগেরও বেশি সময় পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কাতারের আমীরের রাজকীয় বহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেলেন। ছাত্রজনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুঝুঁকি থেকে বেঁচে মুক্ত বাতাসে ফিরে এসেছেন সাবেক এই সেনাপ্রধানের স্ত্রী। এ নিয়ে রাজনীতিতেও উচ্ছ্বাসের হাওয়া বইছে। দেশের উল্লেখযোগ্য দলগুলোর শীর্ষ ব্যাক্তিরা বলছেন, নতুন বাংলাদেশ অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্রের সুযাত্রা ঘটছে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার মাধ্যমে। তিনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে অতীতের মতো রাজনীতির মাঠে ভূমিকা পালন করবেন। আগামী নির্বাচনের নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় পর জিয়া পরিবারের মিলনমেলা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে লাখো মানুষ।
জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জনকণ্ঠকে বলেছেন , নানা ঘাত -প্রতিঘাত পেরিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ যাচ্ছেন তার এই বিদেশ যাত্রা শুভ হোক। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আক্রোশের শিকার হয়ে সুচিকিৎসা পাননি। আওয়ামীলীগ তার উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে। তবে বেগম জিয়া কোনো পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কাছে মাথা নত করেননি । ছাত্র জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার সরকার পতন হয়েছে , বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতিতে আবারও দেশজনতার সেবায় অংশগ্রহণ করবেন আমি এই প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জনকণ্ঠকে বলেছেন, নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে যাচ্ছেন । একজন রাজনৈতিক হিসেবে আমি এতে খুবই খুশি । খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিদেশ যাত্রার মাধ্যমে আমি মনে করছি দেশে গণতন্ত্রের সুযাত্রা বইতে শুরু করেছে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে ইনশাআল্লাহ! খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন। আবারও রাজনীতির মাঠে ফিরে আসবেন, আমি এমন প্রত্যাশাই করি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগীয় সম্পাদক অ্যাড. মতিউর রহমান আকন্দ জনকণ্ঠকে বলেছেন, আপনারা নিশ্চয় জানেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমিরের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে একাধিকবার দলীয় স্টেটমেন্ট দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন। এটি অবশ্যই জামায়াতে ইসলামের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আনন্দের বিষয়। আমরা খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি এবং আশা করছি তিনি সুস্থ হয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরবেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন , খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিদেশ যাত্রা এটি অবশ্যই রাজনীতিতে স্বস্তির। আশা করছি তিনি উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল বিএনপির চেয়ারপারসন। দীর্ঘদিন হাসিনা সরকারের আক্রোশের শিকার হয়ে তিনি সাজানো মামলায় কারাগারে ছিলেন তাই দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভূমিকা পালন করতে পারেননি। আশা করছি তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে রাজনীতির অনেক ভূমিকা পালন করবেন। আগামী নির্বাচনে সুস্থতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিবেন। তিনি আরো বলেন সবচাইতে অবাক করার বিষয় গত ৫ তারিখের পর তার সাথে তার সাথে আমাদের কয়েকটা মিটিং হয়েছে কিন্তু কখনোই আক্রোশের শিকার হয়ে প্রতিশোধের বিষয় নিয়ে তাকে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি এটি অবশ্যই খালেদা জিয়ার বড় উদারতার বিষয়
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা সবসময় বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয় নিয়ে সতর্ক ছিলাম । বারবার তার মুক্তি কামনা করেছিলাম। অবশেষে ছাত্র আন্দোলনের নতুন বাংলাদেশে সেই সুযোগ ঘটেছে। নতুন বাংলাদেশে সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত হতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার মাধ্যমে অধিকারের পূর্ণতার পথ আরও মজবুত হচ্ছে। আল্লাহপাক তাকে পূর্ণ সুস্থ করে দিক। রাজনীতির মাঠে সুস্থ হয়ে ভূমিকা পালনের তাওফিক দিক।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সবাই দোয়া করবেন ম্যাডাম যাতে দ্রুতই উন্নত চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন।
৮ জানুয়ারি, বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশটিতে পৌঁছার পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাকে বরণ করে নেবেন তারেক রহমান। রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরেও আলোচনায় দীর্ঘ সময় পর জিয়া পরিবারের আসন্ন পুনর্মিলনীর কথা। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে জিয়া পরিবারের জীবিত সদস্যদের গ্রুপ ছবি আবেগঘন ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ কল্পনার রাজ্যে ছবি আঁকছেন কেমন হতে পারে পুরো পরিবারের মিলনমেলা।