Trending

শিল্প-বাণিজ্যে অশনিসংকেত

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাবে ব্যবসায়ীমহলে উৎকণ্ঠা, দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের শনির দশা কাটছে না; বরং আরো কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ডলার সংকট, আমদানি কড়াকড়ি, সুদের উচ্চহার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, হামলা-মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই শিল্পে গ্যাসের দাম নতুন করে ১৫২ শতাংশ পর্যন্ত বা আড়াই গুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনিতেই আগে থেকে বাড়তি দর দিয়েও ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছে না শিল্প। এখন আবার নতুন করে ব্যাপক হারে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে রীতিমতো স্তম্ভিত ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।

শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশে আর কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে না। গ্যাসের আড়াই গুণ মূল্যবৃদ্ধি হলে টিকবে না শিল্প খাত। এর মাধ্যমে শিল্পের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহী হবেন। বড় ধরনের প্রভাব পড়বে রপ্তানিশিল্পে। এতে শিল্পের প্রসারের স্থলে বরং শিল্প সঙ্কুচিত হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার অস্থিতিশীলতা, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন অপ্রতুলতায় বিপুলসংখ্যক কলকারখানা বন্ধ হয়েছে।

যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও অস্তিত্বের সংকটে ধুঁকছে। এমতাবস্থায় গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব শিল্প খাতকে আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, গ্যাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারী শিল্প। আর এসব শিল্পে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ থাকে। শিল্পটির ক্ষতি হলে, ঋণখেলাপি হওয়ার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে।

অনেকে চাকরি হারাবেন। এরই মধ্যে বহু শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। নতুন করে শিল্পের ওপর চাপ এলে, দেশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশে ভুল বার্তা যাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অন্য গন্তব্যে চলে যাবেন। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এসব কর্মকাণ্ড রীতিমতো শিল্প ধ্বংসের লক্ষণ। এর পেছনে কোনো চক্রের ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। এ ধরনের কোনো অপচেষ্টা থাকলে সরকারে উচিত যেকোনো মূল্যে তা থামানো।

এরই মধ্যে গ্যাসের নতুন দরের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। প্রস্তাবটি এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) রয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে নতুন কারখানার জন্য গ্যাসের দাম হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি ব্যয়ের সমান। ফলে নতুন কারখানাগুলোকে বর্তমান দরের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে। পুরনো শিল্প-কারখানায় লোড বাড়াতে চাইলেও গুনতে হবে আড়াই গুণ মূল্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে শিল্প-কারখানার গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনতে ৩০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে ব্যবহূত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা দিতে হয়। গত সোমবার বিইআরসিতে পেট্রোবাংলার পাঠানো প্রস্তাবে প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পের গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিল্পে গ্যাসসংকট কাটেনি; বরং গ্যাসসংকটে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংকটের মধ্যে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়ানো হলে শিল্পে বিনিয়োগ পুরো বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি ও মুন্নু সিরামিকস ইন্ডাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসসংকটে শিল্প খাত অনেকটাই থমকে আছে। এই অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা কেমনে আসে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারছি না। আমাদের সিরামিক খাতের প্রধান জ্বালানিই হলো গ্যাস। গ্যাসের স্বল্পচাপের কারণে সক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিল্প খাত যাতে টিকতে না পারে সেই চিন্তা করেই গ্যাসের মূল্য আড়াই গুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি দেশের স্বার্থের বিপক্ষের সিদ্ধান্ত হচ্ছে। যদি মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে এই খাতের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের এসব সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে, উদ্যোক্তারা উৎপাদন থেকে সার্ভিস সেক্টরে চলে যাবে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত বাংলাদেশে থাকুক এই সরকার সেটি চাচ্ছে না। এই দেশে যেহেতু বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা, তাই ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ছাড়া বিকল্প চিন্তা করাটাই ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের অর্থনীতির জন্য।’

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলার মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী সেটি পর্যালোচনা করতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। তারপর শুনানির মাধ্যমে এটি করা হবে।’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই প্রস্তাব পাস হলে শিল্পায়ন থমকে যাবে। নতুন করে বিনিয়োগ আসবে না। বর্তমানের দরটাই অনেক বেশি। এতেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে কষ্ট হচ্ছে। তবু আমরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব, যদি পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। চাহিদার তুলনায় অনেক কম গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’

শিল্পে গ্যাস ব্যবহারের একটি চিত্র তুলে ধরেছে পেট্রোবাংলা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, শিল্পে অনুমোদিত লোডের চেয়ে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বাড়তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর ক্যাপটিভে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বাড়তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে পুরনো কারখানায় বাড়তি এমন ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে।

পেট্রোবাংলা দেশীয় কূপের পাশাপাশি এলএনজি আমদানি করেও জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করে। দেশীয় কূপ থেকে পাওয়া প্রতি ঘনমিটারে তাদের গড়ে খরচ হয় ছয় টাকা সাত পয়সা। কিন্তু এলএনজি আমদানি করতে খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকার বেশি। এতে লোকসানে আছে সংস্থাটি। ভর্তুকি দিতে রাজি নয় সরকার। তাই এখন এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পের ওপর চাপাতে চাইছে পেট্রোবাংলা। এলএনজি আমদানি করে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে একটি হিসাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেনা এলএনজির খরচ হিসাব করে প্রতি ইউনিটের দাম প্রস্তাব করেছে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। এর মধ্যে আমদানি খরচ ৬৩ টাকা ৫৮ পয়সা। আর বাকিটা শুল্ক, কর ও পরিচালন খরচ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়লেও সরবরাহ তেমন বাড়বে না। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ক্রমে কমছে। এটা শিগগিরই খুব বেশি বাড়ানোর সুযোগ নেই। এলএনজি থেকে সর্বোচ্চ আমদানির সক্ষমতা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না হলে আমদানি আর বাড়ানো যাবে না। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। টার্মিনাল নির্মাণে কোনো চুক্তি হয়নি। আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া একটি চুক্তি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাসের যে উচ্চমূল্য ধরা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা যদি এই মূল্যে টাকা দেনও, তাও কিন্তু জ্বালানির নিশ্চয়তা দেওয়া এই সরকারের পক্ষে সম্ভব না। কারণ ব্যবসায়ীরা বিল দেবেন টাকায়, সরকারকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে ডলারে। সরকারের কাছে ডলারের সংকট রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে জ্বালানির ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এখন যে গ্যাসসংকট পরিস্থিতি রয়েছে, অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদনে সরকারের প্রবল উদ্যোগ না থাকলে জ্বালানিসংকট ব্যবসায়ীদের ভোগাবে। একদিকে তাঁরা গ্যাসের উচ্চমূল্য দেবেন কিন্তু জ্বালানির সরবরাহ কম থাকবে। প্রকারান্তরে সেটা পরিস্থিতিটিকে আরো জটিল করবে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাসের সরবরাহটা কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা ঠিক করতে হবে। অভ্যন্তরীণ গ্যাস দিয়ে স্বল্পমেয়াদে গ্যাসের সরবরাহ ধরে রাখা যাবে, দ্বিতীয় বিকল্প হলো আমদানি। এ ক্ষেত্রে আবার অবকাঠামোগত পর্যাপ্ততাও বিবেচনায় আনতে হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ের খরচ বাড়াবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে যদি তাঁরা একটু সাশ্রয়ী হন, তাহলে কাজে আসবে।’

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘প্রস্তাবিত দাম শিল্পের জন্য খুবই কঠিন হবে। রপ্তানিমুখী শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসে মুনাফা করার কোনো সুযোগ নেই সরকারের। গ্যাসনির্ভর স্থানীয় কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়বে এতে। এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা যেতে পারে। প্রস্তাবের যৌক্তিকতা বিইআরসি নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবে।’

এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জারি করা নির্বাহী আদেশে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করা হয়। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করে দুই হাজার ৭০৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে দেশীয় কূপ থেকে পাওয়া আছে এক হাজার ৯২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং বাকি ৭৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয়। চাহিদা ও সরবরাহে দৈনিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto