USA

শীতকালে কেন আগুনে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়া?

অন্তত ১১ জনের প্রাণহানি, এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত, ১০ হাজারেরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস এবং প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা; স্মরণকালের সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানলগুলোর একটিতে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া।

কাঠামোগত ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির ভিত্তিতে এটি আধুনিক ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন আকুওয়েদারের প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার।

জানুয়ারি মাসে সাধারণত শীত ও বর্ষাকাল থাকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাই দাবানল-প্রবণ এলাকা হলেও বছরের এই সময়ে সাধারণত এমন দুর্যোগ হয় না। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৪ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় আকারের দাবানল হয়েছে ৪২৩টি, এর মধ্যে মাত্র চারটি হয়েছে শীতকালে।

এবারের শীতে এমন ভয়ংকর দাবানল ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের।

অনাবৃষ্টি ও খরা

এপি জানায়, গত দুই শীতে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। যার ফলে এ অঞ্চলে গাছপালাও বেড়েছে বহুগুণ।

তবে গত আট মাসে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে। সংবাদমাধ্যম এনবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মে মাসে সর্বশেষ এক ইঞ্চির দশ ভাগের এক ভাগ বৃষ্টি দেখেছে লস অ্যাঞ্জেলস।

এই অনাবৃষ্টিই ডেকে এনেছে খরা। মার্কিন ড্রট মনিটর জানাচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল মাঝারি থেকে গুরুতর খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

‘শয়তান বাতাস’

প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলঘেঁষা ক্যালিফোর্নিয়ায় দীর্ঘ পাহাড়ি অঞ্চল এবং মরুভূমি রয়েছে। মরু থেকে এক ধরনের গরম বাতাস দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল পেরিয়ে সাগরের দিকে যায়। এই বাতাসকে ‘সান্তা আনা বাতাস’ বা ‘শয়তান বাতাস’ (ডেভিল উইন্ডস) বলা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণত ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ মাইল গতিতে প্রবাহিত হয় এই বাতাস। দাবানল শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় সান্তা আনা বাতাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

এই বাতাসের ফলে একটি অঞ্চলের আর্দ্রতা কমে যায়, সব গাছপালা শুকিয়ে যায়। যে কারণে ঘরের বাইরে যে কোনো আগুনই মিনিটের মধ্যে বড় অগ্নিকাণ্ডে রূপ নিতে পারে।

কীভাবে দাবানল শুরু হয়েছে, তা এখনো বের করতে পারেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এর পেছনে একাধিক কারণও থাকতে পারে। তবে এই দাবানল এত বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এই সান্তা আনা বাতাসের বড় ভূমিকা আছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

জলবায়ু পরিবর্তন

‘জলবায়ু পরিবর্তন খরা এবং উচ্চ তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে তুলেছে। দুটিই দাবানলের পক্ষে যায়’, ফরাসি পত্রিকা লা মনকে বলেন জলবায়ুবিদ ডেভিড ফারান্ডা।

এ ছাড়া, সান্তা আনা বাতাস আসার সময়কালও প্রতিবছর পেছাচ্ছে। এটি হেমন্ত (ফল) থেকে শীতের দিকে যাচ্ছে বলে এপিকে জানান মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভের অগ্নিবিজ্ঞানী জন কিলি।

বর্ষার সময় বৃষ্টি না পড়া এবং এর ফলে সৃষ্ট খরা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরার মাত্রা এমনিতেও বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে। দুই বছর আগে শেষ হওয়া গোটা একটি দশক খরায় ভুগেছে ক্যালিফোর্নিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের সাগর ও বায়ুমণ্ডল প্রশাসন তাদের গবেষণায় স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বড় ও গুরুতর দাবানলের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

সাধারণত মে থেকে অক্টোবরকে দাবানলের মৌসুম বলা হয় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আর সেই হিসাবও মিলছে না। 
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের কণ্ঠেও তাই একই হতাশা।

‘এখন আর দাবানলের মৌসুম বলতে কিছু নেই। এখন আসে দাবানলের বছর’, বলেন নিউসম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button