Bangladesh

ভার্চুয়াল অপপ্রচার যুদ্ধ: গণমাধ্যমগুলোর ব্যর্থতার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দুই দলের নারীদের বিরুদ্ধে নোংরা অপপ্রচার আরো বাড়তে পারে, সামাজিক যোগাযোগের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই

ডিজিটালের এই যুগে অনলাইনের ব্যবহার বাড়ছে। দেশের মিডিয়াগুলো যথাযথভাবে ‘গণমাধ্যমের দায়িত্ব’ পালনে ব্যর্থ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ বলেছেন, ‘আগে মানুষ মিথ্যা বলতো, ‘গণমাধ্যম সত্য খুঁজে বের করতো; আর এখন গণমাধ্যম মিথ্যা বলে মানুষ সত্য খুঁবে বের করে’। এই যখন অবস্থা তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ভাবের আদান-প্রদান বেশি হচ্ছে। এরই সুযোগে একদিকে যেমন অপরাধীরা ভার্চুয়ালি অপরাধ করছে; অন্যদিকে অনলাইনে অপতথ্য, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ভাবেই যেন ভার্চুয়াল অপপ্রচারযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

মূলত নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক দল ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। চলছে বাকযুদ্ধ, মাঠে শোডাউনে লড়াই। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ভার্চুয়াল জগতে বাড়ছে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে অপপ্রচার (প্রপাগান্ডা), মিথ্যা-বানোয়াট সংবাদ, চরিত্র হননের তথ্য ও সংবাদের বিস্তার। এক্ষেত্রে লক্ষ্য হচ্ছেন সরকার ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ব্যক্তি, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নারী নেত্রীগণ। গুজব বা মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করতে কাজ এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে কেন্দ্র করে। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ব্যক্তি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও রয়েছেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে। আর এসব অপপ্রচার ও মিথ্যা সংবাদ এমনভাবে তৈরি এবং ছড়ানো হচ্ছে যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীরা সহজেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এসব অপপ্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের প্যাড, এআই দ্বারা তৈরি ছবি, বার্তা, ডিপফেক ভিডিও, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড।

জানতে চাইলে এএফপি’র ফ্যাক্টচেক এডিটর কদরুদ্দীন শিশির বলেন, সরকারি দল ও বিরোধী দল একে অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সিস্টেমেটিকভাবে ছড়ানো হয় এবং এটি বেশি হচ্ছে। বিএনপিপন্থী পেজ ও কিছু ব্যক্তিও সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছড়াচ্ছে। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধেও সরকারি দলের পক্ষ থেকে চড়াচ্ছে। তার পোস্টগুলোতে বট দিয়ে হা হা রিঅ্যাক্ট দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে দুই দলের নারীদের বিরুদ্ধে এআই ও এডিটেড নোংরা অপপ্রচার আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানকে নিয়ে ছড়ানো হয় মিথ্যা তথ্য। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষর ও দলটির প্যাডে একটি ভূয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাড়িয়ে দেয়া হয়। যেখানে বলা হয়, রুমিন ফারহানাকে শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগের ভিত্তিতে শায়রুল কবির খানকে দলের সকল পর্যায় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, তাদের দলের প্যাড ও স্বাক্ষর নকল করে ভূয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হয়েছে।

গত ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এই সংবাদ সম্মেলনের আগে একাত্তর টেলিভিশনের ফটোকার্ডের আদলে একটি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়, যাতে লেখা ছিল, ‘পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।’

এর আগে গত সপ্তাহেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে একটি মিথ্যা বা সাজানো তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। যেখানে বলা হয়, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসার জন্য ৫০ লাখ টাকা অনুদানের চেক নিয়েছেন। তথ্য যাচাইসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা জানিয়েছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঘিরে ছড়ানো চেকটি বার কাউন্সিলের একটি প্রণোদনার চেক থেকে সম্পাদনা করা এবং এর নম্বরটি ভুল ছিল।

অনলাইন যাচাই ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের নামে ভুয়া ভিডিও প্রচারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের এমন দুটি ভিডিও যাচাই করে ডিসমিসল্যাব দেখেছে, ভিডিওগুলো ডিপফেক ও এআই-এর মাধ্যমে সম্পাদিত। গত ৩০ জুলাই একটি ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়ের মুখ বসিয়ে তৈরি করা একটি ডিপফেক ভিডিও প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায় পোস্ট ও রিলস আকারে (১, ২, ৩)। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমবঙ্গের একটি ওয়েব সিরিজ, শ্রীকান্ত এর অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের অভিনীত একটি দৃশ্য। মূল ভিডিওটি বিকৃত করে নিপুন রায়ের বলে দাবি করা হয়। অন্যদিকে, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবালের একটি ছবি এআই টুলের মাধ্যমে সম্পাদিত করে ভুয়া অডিও সংযোজনের মাধ্যমে ভিডিও আকারে (১, ২, ৩) সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ভিডিওটির এক কোণায় ডি-আইডি লেখা একটি লোগো দেখা যায়। ডি-আইডি মূলত একটি জেনারেটিভ এআই টুল। এর মাধ্যমে যেকোনো স্থিরচিত্রকে এআই অ্যাভাটারের ভিডিওতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। রাশেদ ইকবাল খানের ভিডিওটি এই টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাশেদ ইকবাল খান তাঁর ফেসবুক পেজে মূল ছবিটি পোস্ট করেন। পরবর্তীতে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমও (১, ২, ৩) তাঁর এই ছবিটি ক্রপ করে ব্যবহার করে। এই ছবিটিই ডি-আইডি অ্যাপে আপলোড করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে কম্পিউটার-জেনারেটেড অডিও যুক্ত করে ভিডিওটি বানানো হয়েছে।

এছাড়া ভিডিওটিতে রাশেদ ইকবাল খানের বয়স ৪৭ বছর বলে দাবি করা হলেও জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে এই ছাত্রদল নেতার জন্ম ১৯৮৭ সালে। এর আগে আরেক ইন্সটাগ্রাম মডেলের ভিডিও বিকৃত করে তৈরি একটি ডিপফেক ভিডিও বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার নামে প্রচারিত হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা।

অন্যদিকে ‘ইসলামপন্থী’ হওয়ায় ও নিজেদের ‘মুসলিম দাবি করায়’ চার ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কারের একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হয়। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তিটি সম্পাদিত এবং মূল বিজ্ঞপ্তিতে ‘ইসলামপন্থী’ বা ‘মুসলিম দাবি করায়’ বহিষ্কারের কোনো উল্লেখ নেই। সম্প্রতি বেশ কিছু ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে (১, ২, ৩, ৪) ‘ইসলামপন্থী, শৃঙ্খলা পন্থী, অপরাধমূলক এবং নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়, এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে’ চার ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে- এমন একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। সম্পাদনা করা এই বিজ্ঞপ্তির ছবিটি আপলোড করে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে বিষয়টির নিন্দা জানানো হয়। চাঁন্দিশকরা সচেতন নাগরিক ফোরাম পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হলো যারা নিজেদেরকে ইসলামপন্থী বা মুসলিম দাবি করে তারা ছাত্রলীগ হতে পারবে না, আর যারা নিজেদেরকে ছাত্রলীগ দাবি করে তারা মুসলিম নয়। টেইক-ব্যাক বাংলাদেশ নামে একটি পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘তাহলে ছাত্রলীগ কখনো মুসলিম হতে পারে না’। শাহজাদাপুর আল-হেরা ছাত্র সংগঠন নামে একটি পেজ লিখেছে, ‘ইন্নালিল্লাহি, কী সংঘাতিক ব্যাপার! একটু ভাবুন তো! আসলেই কি বিষয়টি সত্য? ইসলামপন্থী এবং নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়, এমন কার্যকলাপে জড়িয়ে থাকার অভিযোগে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো! আপনি ছাত্রলীগ করলে নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারবেন না?’

ডিসমিস্যাব বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভ, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পুরোনো ছবি-ভিডিও বা খবরের স্ক্রিনশট শেয়ারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত ২৮ ও ২৯ জুলাই, সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘটনায়ও এমনটিই দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে পুরোনো খবরের স্ক্রিনশট, অথবা পুরোনো ছবি ও ভিডিওকে সাম্প্রতিক বলে প্রচার করেছে দুই পক্ষই। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে এমন অন্তত ৮টি নজির পাওয়া গেছে, যা একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তিও শেয়ার করেছেন। ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের এমপি মোহাম্মদ এ আরাফাত গত ২৯ জুলাই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির ছবি হিসেবে টুইটারে চারটি ছবি টুইট করেন। যার ক্যাপশনে বলেন, ‘আজকে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকা-ের এক ঝলক। তারা তাদের আসল চরিত্রে ফিরে আসছে!’ কিন্তু যাচাই করে দেখা যায়, তাঁর টুইট করা চারটি ছবির অন্তত তিনটিই পুরোনো। একাধিক ফ্যাক্টচেকার বিষয়টি তখনই তুলে ধরেন।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের আরেকটি পোস্টে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রক্তাক্ত ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয় যে সেটি সাম্প্রতিক সময়ের। কিন্তু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এই রক্তাক্ত ছবিটি আসলে তোলা হয়েছিল ২০১৮ সালে, কেরানীগঞ্জে বিএনপির গণসমাবেশ চলাকালে।

এছাড়াও ‘বাংলাদেশ বিএনপি নিউজ‘-সহ আরও কিছু ফেসবুক পোষ্টে জেরার মুখে বাসে আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করে এক কিশোর নিজেকে ছাত্রলীগের সদস্য দাবি করছে– এমন একটি ভিডিও ছড়াতে দেখা গেছে। তবে ভিডিওটি অন্তত চার বছর আগের। এর বাইরে, ‘বাসে আগুনের চেষ্টা, ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মী আটক’ শিরোনামে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি সংবাদকে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচির খবর বলে প্রচার করে। মূলত ২০১৪ সালে মাগুরায় একটি বাসে আগুন দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন তারা।

এছাড়া ২৮ জুলাই গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানের দলীয় শ্লোগানের একটি ভিডিও এডিট করে সেটিকে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়। ড. ইউনূসের হাতে থাকা একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নগ্ন ছবি বসিয়ে প্রচারণা, তাকে সমকামী হিসেবে আখ্যা দেয়া, বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে তোলা ছবিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন, কোন কোন ছবি এডিট করে ছড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। জাতিসংঘের জরিপে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি, ড. ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হচ্ছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর পবিত্র কাবার ভেতরে তার প্রবেশের একটি ছবি প্রবেশের একটি ছবি ছড়ানো হয়। সেটিও ছিল এডিটেড ছবি। সউদী প্রিন্সের সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যকে সাঈদীর জানাজার ঘোষণা বলে অপপ্রচার চালানো হয়। একটি শর্ট ফিল্মের দৃশ্যকে বাংলাদেশি ব্লগারকে মারধরের ঘটনা বলে ছড়ানো হয়।

ফ্যাক্ট চেকাররা বলছেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে অনলাইনে অপতথ্য, গুজব তত বাড়ছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ই সবচেয়ে বেশি। ডিসমিসল্যাবের হিসাবে গত জুলাই থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত যত মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে, তার ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশই হচ্ছে রাজনীতিবিষয়ক।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরেও এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নারী নেত্রীগণ এর লক্ষ্য বা ভিকটিম হবেন বেশি। এর মূল কারণ দেশের গণমাধ্যমগুলোর ব্যর্থতা। দেশের গণমাধ্যমগুলো প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার চেয়ে সরকারের তোষামোদী করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষ তথ্য আদান প্রদানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এবং এরই সুযোগ নিচ্ছেন অসৎ ব্যাক্তিরা। যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিপক্ষ্যে চরিত্র হনন করছে।

গুজব শনাক্ত করতে কাজ করে, রিউমার স্ক্যানার নামের এমন একটি সংগঠনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যম মিলে প্রায় দেড় হাজার গুজব ছড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন বহু মানুষের হাতে রয়েছে মোবাইল, ফলে সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার আশংকা এখন বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা এরকম গুজব ছড়িয়ে থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তাদের রাজনৈতিক একটা মতাদর্শ রয়েছে। তারা সেই আদর্শ থেকে গুজব ছড়াতে শুরু করেন।

এজন্য একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা অন্য দলকে, দলের নেতাদের লক্ষ্য করে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য তৈরি করে ছড়িয়ে দেন। যারা এসব দলের অনুসারী, তারাও সেগুলো বেশি বেশি করে শেয়ার করার কারণে দ্রুত এসব বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়।

অতীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের কারণে মানুষজকে পিটিয়ে হত্যা, পদ্মা সেতুতে মাথা লাগার মতো তথ্য, ধর্মীয় সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ব্যাপকভাবে গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা তো এরকম প্রোপাগান্ডায় অভ্যস্ত না। এগুলো নিয়ে আমাদের মিডিয়া সেল আছে, সেখানে আমাদের লোকজন কাজ করছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে আমরা বেশি চিন্তিত না, এগুলো খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ মানুষ তো এগুলো বিশ্বাস করে না। এ ধরনের কোন গুজব বিএনপি ছড়ায় না বলে দাবি করে তিনি বলেন, সবারই এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরেই প্রোপাগান্ডা হচ্ছে। বিদেশে কিছু সংঘবদ্ধ ব্যক্তি নানারকম ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। দল হিসাবে এবং আমাদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা দায়িত্বরত আছেন, তারা কাজ করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, এগুলো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। মানুষ এগুলো বিশ্বাস করে না, গুরুত্বও দেয় না। মির্জা ফখরুলের চেক বা বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর সাথে আওয়ামী লীগের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি জানান। বরং সামাজিক মাধ্যমে তারাই আমাদের বিরুদ্ধে নগ্ন, বাজে ভাষায় প্রচারণা করছে। এগুলো তারাই করছে। এগুলো শুনতে শুনতে এবং দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সামাজিক যোগাযোগের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা যেসব বিষয়ে অভিযোগ পাই সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠাই। এক্ষেত্রে কোনটি ২৪ ঘণ্টা বা কোনটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করা হয়। আবার সব বিষয় যে তারা আমলে নেয় তেমনটি নয়। তারা যেটিকে মনে করে সেটি সলভ করে, তারা মনে না করলে সেটি করে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto