পাঠ্যবইয়ে ঠাঁই পেয়েছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-গৌরবগাঁথা, আছে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ
নতুন পাঠ্যবইয়ে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গল্প-কবিতা রাখা হয়েছে। এছাড়া যুক্ত করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কথা। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নামে গল্প যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে শহিদ তিতুমীর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ভাষা সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের নাম রাখা হয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীরশ্রেষ্ঠদের নামও। গল্পের শেষে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের নাম ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘অধিকারের দাবি ও বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে এ দেশের শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালে আবার রাস্তায় নামে। সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়। পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।’
নতুন পাঠ্যবইয়ে জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর বাড্ডায় ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপটার থেকে গুলি করার বিষয়টিও পাঠ্যবইয়ে কার্টুনে তুলে ধরা হয়েছে। ‘ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন। নিহত হন (গোলাম) নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অগণিত প্রাণ। মায়ের কোলের শিশু, বাবার সঙ্গে খেলতে থাকা শিশু, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, চাকরিজীবী, মা, পথচারী কেউ বাদ যায় না। সারা দেশে হত্যা করা হয় হাজারো মানুষকে।’ নতুন পাঠ্যবইয়ে গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। তবে বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গল্প। সেলিনা হোসেনের পাঁচটি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের দুটি, সৈয়দ শামসুল হকের একটি, রোকনুজ্জামান খানের একটি, নির্মলেন্দু গুণের একটি ও সাবেক আমলা কামাল চৌধুরীর একটি লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান নিয়ে হাসান রোবায়েতের লেখা আলোচিত ‘সিঁথি’ কবিতাটি পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে। পুরোনো পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি। সেগুলো বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ের মলাটে স্থান পেয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আলোচিত গ্রাফিটি। পাশাপাশি আগের মতো চিরন্তন বাণীও বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় রাখা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে গ্রাফিটির পাশাপাশি আগের মতো ‘বড়দের সম্মান করো’ বাণী রাখা হয়েছে।
নবম ও দশম শ্রেণি:
নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ বইয়ে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে নতুন গদ্যে যুক্ত করা হয়েছে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে লেখা। এই লেখায় গণভবন দখল এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঘটনা তুলে ধরা হয়। লেখায় উল্লেখ আছে ‘সেদিন ৫ই আগস্ট ২০২৪-৩৬ শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইতে থেমে গেছে। শুধু দেশ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে।’ এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসককে। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিলল। যাত্রাবাড়ীর দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। নামল মানুষের ঢল। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচার সরকারপ্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।’
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের রবীন্দ্রনাথের ‘দেনাপাওনা’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’, জহির রায়হানের ‘বাঁধ’ গল্প বাদ গেছে। জহির রায়হানের বাঁধ গল্পটি বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘একুশের গল্প’। সেলিনা হোসেনের ‘রক্তে ভেজা একুশ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ এবং জাফর ইকবালের ‘তথ্য প্রযুক্তি’ বাদ দেওয়া হয়েছে। কবিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’, সৈয়দ শামসুল হকের বাঙালির আত্মপরিচয়ের ইতিহাস নিয়ে লেখা ‘আমার পরিচয়’। কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘সাহসী জননীর কথা’। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘আমাদের গৌরবগাঁথা’।
অষ্টম শ্রেণি:
অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোক শিল্প’ ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে ‘গণঅভ্যুত্থানের কথা’। অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্রুতপঠন পাঠ্যবইয়ের শুরুতে ছিল জাতীয় চার নেতার ছবি, পরিমার্জিত নতুন বইয়ে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সপ্তম শ্রেণি:
২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে প্রণীত ২০২২ সালের সপ্তম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই ‘সপ্তবর্ণা’ ২০২৫ সালে পরিমার্জন করা হয়েছে। এই পাঠ্যবই থেকে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’ ও সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতা দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে হাসান রুবায়েতের কবিতা ‘সিঁথি’। হাসান রুবায়েতের কবিতার বিষয় হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন। কবি লিখেছেন, ‘ভাই মরলো রংপুর/সেই রংপুরই তো বাংলাদেশ/নুসরাতেরা আগুন দিল/দোজখ যেন ছড়ায় কেশ/কওমি তরুণ দাঁড়ায় ছিল/কারবালারই ফোরাতে/শাহাদতের আগুন দিলে/খুনির আরশ পোড়াতে/।
ষষ্ঠ শ্রেণি:
ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ে ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিতুন কুণ্ডের আঁকা একটি পোস্টার ‘সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৮২ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে পটুয়া কামরুল হাসানের ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের ব্যঙ্গচিত্র যুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই অন্দোলনের পোস্টারও আছে এই অধ্যায়ে। তবে পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে পটুয়া কামরুল হাসানের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘এই জানোয়ারটা আবার আক্রমণ করতে পারে’, পরবর্তীকালে ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’ শিরোনামের চিত্রকর্মটি ব্যবহার করা হয়নি। তবে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্যবহার করা হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার একটি দৃশ্য। ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘কত দিকে কত কারিগর’ শিরোনামের গদ্য লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোকশিল্প’। রোকনুজ্জামান খানের ছড়া ‘মুজিব’ বাদ দিয়ে তারই লেখা ‘চিঠি বিলি’ যুক্ত করা হয়েছে।
বাদ পড়েছে ‘ফেব্রুয়ারি গান’ ছড়া:
২০২২ সালে প্রণীত পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এর প্রথম প্রচ্ছদে ছিল বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের ছবি। এবার সেখানে স্থান পেয়েছে ফুল-পাখিসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য। এই বই থেকে গল্প ও কবিতার মধ্য থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে লুত্ফর রহমান রিটনের ছড়া ‘ফেব্রুয়ারি গান’, সেখানে যুক্ত করা হয়েছে নির্মল বসুর কবিতা ‘সবার আমি ছাত্র’। ‘স্মরণীয় যাঁরা বরণীয় যাঁরা’ গদ্যের শিরোনামটি পালটে দেওয়া হয়েছে। এখনকার শিরোনাম হচ্ছে, ‘স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন’। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে লেখা গদ্য ‘মাটির নিচে যে শহর’ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নতুন গদ্য যুক্ত করা হয়েছে, ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’। এই গদ্যে শহিদ তিতুমীর, শহিদ প্রীতিলতা, শহিদ আমানুল্লা মো. আসাদুজ্জামান, শহিদ মতিউর রহমান মল্লিক, শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, শহিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহার পরে যুক্ত করা হয়েছে শহিদ নূর হোসেন, শহিদ ডা. মিলন, শহিদ নাসির উদ্দিন জেহাদের নাম। এরপর যুক্ত করা হয়েছে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদ আবু সাঈদ ও শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম।
‘দেখে এলাম নায়াগ্রা’ গল্পটি বাদ দিয়ে ঈশপের গল্প ‘জলপরী ও কাঠুরের গল্প’ যুক্ত করা হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানের ‘রৌদ্র লেখে জয়’ কবিতা বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে কবি আল মাহমুদের জনপ্রিয় ‘নোলক’ কবিতাটি। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে লেখা গদ্যটি বাদ দিয়ে সেখানে যুক্ত করা হয়েছে ‘কুমড়ো ও পাখির কথা’ গদ্য। শহিদ তিতুমীরকে নিয়ে লেখা বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে আরব্য উপন্যাসের আলিফ লায়লার গল্প ‘দৈত্য ও জেলে’। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প সেলিনা হোসেন ‘অপেক্ষা’ বাদ পড়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মমতাজউদ্দীন আহমেদের লেখা গদ্য ‘বাংলার খোকা’ এবং সানাউল হকের ‘মুক্তি ছড়া’। যুক্ত হয়েছে নতুন গদ্য ‘টুনুর কথা’ ও রজনী কান্তের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতা। ‘মোবাইল ফোন’ শিরোনামের গদ্যটি বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘বই পড়ায় অনেক মজা’। ২০২৩ সালে প্রণীত তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বই পরিমার্জন করে যুক্ত করা হয়েছে ‘ঘাসফড়িং ও পিঁপড়ার গল্প’। বাদ দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলা নিয়ে লেখা ‘সেই সাহসী ছেলে’, যুক্ত করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’।
দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘সিংহ আর ইঁদুরের গল্প’। ‘পহেলা বৈশাখ’ গল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নববর্ষ’। লেখা ও ছবিতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। মঙ্গল শোভাযাত্রা বা পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার ছবি বাদ দিয়ে বৈশাখের অন্যসব উপকরণের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘সোনার ছেলে’ গল্প বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘দুখু মিয়ার জীবন’ গল্পটি। পাঠ্যবইয়ের পেছনে যুক্ত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের দেওয়াল লিখন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, ৫২ থেকে ২৪ ইতিহাস এভাবেই ফিরে আসে-সহ বিভিন্ন নীতিকথাও যুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন বইয়ে। বইয়ের শেষ মলাটে পেছনে শেখ হাসিনার ছবি ছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের পরিচয় নিয়ে যত সমালোচনা:
এবার পরিমার্জিত পাঠ্যবইয়েও উপস্থাপন করা হয়েছে আওয়ামী লীগকে দেশের ‘সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল’ হিসেবে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জন্ম ‘সামরিক শাসনামলে’ বলে উল্লেখ রয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ক্ষুব্ধ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এবার নবম-দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে আছে ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনব্যবস্থা’। এ অধ্যায়ে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সেখানে ‘বাংলদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ’ নামে রয়েছে একটি অনুচ্ছেদ। তাতে তুলে ধরা হয়েছে ছয়টি দলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। প্রথমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে পুরাতন ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।’ আওয়ামী লীগের পরই পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে বিএনপি। দলটি সম্পর্কে শুরুতে লেখা হয়েছে, ‘সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হয়।’ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাপা বইয়েও বিএনপি সম্পর্কে একই তথ্য ছিল। তবে পুরোনো বইয়ে থাকা একটি অংশ এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তা হলো—‘বিভিন্ন দল ও আদর্শের নেতাকর্মীদের একত্রিত করে গঠিত।’ বইয়ের পুরোনো সংস্করণে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) দেশের তৃতীয় বৃহৎ দল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে এবার সেই ‘তকমা’ বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামের আগে ‘সামরিক শাসক’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে এবার জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ভারতে মাওলানা আবুল আলা মওদুদির নেতৃত্বে এ দলের প্রতিষ্ঠা। তখন এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলাম হিন্দ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এর নাম হয় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান। বাংলাদেশর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দলটি পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে কাজ করেছে।’