USA

অন্তত ২৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে, মৃত বেড়ে ১৬

শত চেষ্টার পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস এবং আশপাশের অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দাবানল ইতোমধ্যেই শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং অভিজাত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া এবং অগ্নিনিরোধক রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। খবর আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের। 
লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। এরপর কয়েকটি জায়গায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। শত চেষ্টার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না আগুন। পুড়ে ছারখার হচ্ছে এলাকার পর এলাকা।
দাবানল পালিসেইডস এলাকায় শুরু হয়ে ইতোমধ্যেই প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ি গেছে। মান্ডেভিলে ক্যানিয়ন এবং ব্রেন্টউডের বিভিন্ন এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রেন্টউড এলাকায় অনেক তারকার বাড়ি রয়েছে, যেমন অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার, ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব ইগার এবং এনবিএ তারকা লেব্রন জেমসের মতো ব্যক্তিত্বদের বাসস্থান। তাদের সম্পত্তিও হুমকির মুখে রয়েছে। 
এ ছাড়াও গেটি সেন্টার নামে পরিচিত বিখ্যাত হিলটপ মিউজিয়ামও ঝুঁকির মুখে। এই মিউজিয়ামে ভ্যান গঁগ, রুবেনস, মনে এবং ডেগাসের মতো বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের কাজসহ ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম রয়েছে। তবে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে এখনো পর্যন্ত মিউজিয়ামটি কোনো ক্ষতির শিকার হয়নি।
যদিও দাবানলের কারণ এখনো চিহ্নিত হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামজনিত ত্রুটি বা মানবসৃষ্ট অবহেলার কথা উল্লেখ করেছেন। কোনো কোনো এলাকাতে বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটির কারণে আগুন লেগেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত এই দাবানলে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দাবানলে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্যাসিফিক পালিসেইডস এলাকায় এক রিয়াল এস্টেট এজেন্ট জানিয়েছেন, তাদের দায়িত্বে থাকা ৬০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ৬টি অক্ষত রয়েছে, বাকি সব পুড়ে গেছে। রিয়াল এস্টেট থেকে শুরু করে পর্যটন শিল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই দাবানলের ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের পুনর্নির্মাণ এবং অবকাঠামো মেরামতের জন্য শত কোটি ডলার খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই দাবানলের সময় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে ফায়ার হাইড্রেন্টে পানি না থাকার সমস্যা। ফলে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি এ বিষয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বাজেট কাটছাঁটের ফলে বহু অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়েছে। গভর্নর গেভিন নিউসন পানি সংকট এবং গুরুত্বপূর্ণ পানি সংরক্ষণাগার কাজ না করার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে সমালোচনা চলছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস, দাবানলের সময় ঘানায় অবস্থান করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তার পদত্যাগ দাবি করে ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। দাবানল মোকাবিলায় ক্যালিফোর্নিয়ার পাশাপাশি কানাডা, মেক্সিকো, ফেডারেল সরকার এবং সাতটি পার্শ্ববর্তী রাজ্য সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। লুটপাট ঠেকাতে আক্রান্ত এলাকায় সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কার্ফু বলবৎ করা হয়েছে।

কার্ফু ভঙ্গ এবং লুটপাটের অভিযোগে ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, বাতাস আরও বৃদ্ধি পেলে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষকে সতর্ক করে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই দাবানল নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সহায়তার প্রস্তাব এসেছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জোরদার হয়েছে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য কানাডা, মেক্সিকো এবং সাতটি পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে দল পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাসস্থান হারানো মানুষদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে এবং তাদের খাবার, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
দাবানলের ফলে স্থানীয় বনাঞ্চল এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনাঞ্চল পুড়ে যাওয়ায় বহু বন্যপ্রাণী তাদের আবাসস্থল হারিয়েছে এবং অনেক প্রাণীর মৃত্যুও হয়েছে। ধোঁয়ার কারণে বাতাসের গুণগতমান এতটাই খারাপ হয়েছে যে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষত যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগ আছে।

ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

এছাড়া, হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভর্তির হারও বেড়ে গেছে। যদিও দাবানলের কারণ এখনো চিহ্নিত হয়নি, তবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামজনিত ত্রুটি বা মানবসৃষ্ট অবহেলার কথা সন্দেহ করা হচ্ছে। 
বিশেষজ্ঞরা দাবানল প্রতিরোধে নিয়মিত বন পরিচ্ছন্নতা, অগ্নি-প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের এই ভয়াবহ দাবানল শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকি নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পরিস্থিতি এখনো শঙ্কাজনক। সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ এবং জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button