International

প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে চাপে ক্ষুব্ধ জার্মানি, ‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে একটি ভারী সামরিকায়িত অঞ্চলে পরিণত করতে চান, এই অঞ্চলটি ব্যবহার করে আর্কটিক অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি সম্প্রসারণ করতে চান, রাশিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ব্যুরোর প্রধান আলেকজান্ডার মিখাইলভ বলেছেন।
এর আগে, ট্রাম্প বলেছিলেন যে, চীনা ও রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়া উচিত। একই সাথে, ট্রাম্প এই গ্যারান্টি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন না। মিখাইলভের মতে, ট্রাম্পের সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনাগুলি আর্কটিকের সামরিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কিছু ঝুঁকি নিয়ে পরিপূর্ণ, বিশেষ করে গ্রিনল্যান্ডকে ‘একটি নতুন গুরুতর সামরিকায়িত অঞ্চলে’ রূপান্তরিত করা। ‘এ মুহুর্তে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই অঞ্চলটি মার্কিন সামরিক-প্রযুক্তিগত উপস্থিতি সম্প্রসারণের জন্য ব্যবহার করা হবে,’ বিশ্লেষক বলেন, ‘ডেনিশ রাজনীতিবিদরা ইতিমধ্যেই একটি বিবৃতিতে বলেছেন যে তারা ট্রাম্পকে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে তারা আমেরিকান অস্ত্র স্থাপনের বিষয়ে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে হাত মেলানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।’
ভূ-রাজনৈতিক সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা করেছেন, আর্কটিক ট্রাকে আসন্ন মার্কিন প্রশাসনের তৎপরতা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক সম্ভাবনা থেকে উদ্ভূত। ‘আজ, রাশিয়া, তার বিশাল অঞ্চল সহ, এই আর্কটিক অঞ্চলের প্রায় অর্ধেকের মালিক। এছাড়াও, রাশিয়া খুব সক্রিয়ভাবে উত্তর সমুদ্র রুট বিকাশ করছে,’ বিশ্লেষক বলেন। ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি অনুমোদন করতে পারে না। আবারও, আমরা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে আর্কটিককে শক্তিশালী করার জন্য খুব সক্রিয়। ফ্রাঞ্জ-জোসেফ ল্যান্ডে একটি রাশিয়ান ঘাঁটি রয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে সামরিক বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা সুদূর পূর্ব এবং কুরিলগুলিকে শক্তিশালী করছি। স্বাভাবিকভাবেই, ট্রাম্প এই সবকিছুর উপরে নজর রাখছেন। তিনি বিশ্বের পরিস্থিতি সত্যিই পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন যে তিনি আমেরিকাকে আবার মহান করতে চান। তিনি ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে বর্তমান মার্কিন সীমান্তের মধ্যে আমেরিকা আর কখনও মহান হবে না।’
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ন্যাটোর দেশগুলোকে জিডিপি-র পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষাখাতে খরচ করতে হবে। তবে ন্যাটোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস তার এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। সোমবার পশ্চিম জার্মানিতে একটি নির্বাচনী ইভেন্টে তিনি বলেছেন, ‘জার্মানির ক্ষেত্রে জিডিপি-র পাঁচ শতাংশ খরচ করা মানে প্রতিরক্ষায় ২০ হাজার কোটি ইউরো খরচ করা। জার্মানির ফেডারেল বাজেটই ৫০ হাজার কোটি ইউরো হয় না।’
শলৎস বলেছেন, ‘প্রচুর কর বাড়িয়ে বা অন্য সব খরচ ছাঁটাই করে প্রতিরক্ষাখাতে খরচ বাড়াতে হবে। কিন্তু অন্য সব খাতে খরচ করাটা জার্মানির জন্য খুব জরুরি। আমি কখনই পেনশন কমাব না, স্থানীয় সরকার বা যানবাহন পরিকাঠামোর জন্য খরচ ছাঁটাই করব না।’ তিনি জানিয়েছেন, গতবছর জিডিপি-র দুই শতাংশ প্রতিরক্ষায় খরচ করা হয়েছিল। শীতল যুদ্ধের পর এই প্রথমবার জার্মানি প্রতিরক্ষায় জিডিপি-র দুই শতাংশ অর্থ খরচ করলো। এই খরচ বহাল রাখা হবে বলে শলৎস জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা জিডিপি-র দুই শতাংশের বেশি অর্থ খরচ করার প্রস্তাব দিচ্ছেন, তারা এটাও জানান, ওই অর্থ কোথা থেকে পাওয়া যাবে?’
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর জর্মানির পার্লামেন্টে শলৎস জানিয়েছিলেন, জার্মানির সেনা বাহিনীর জন্য তিনি ১০ হাজার কোটি ইউরোর বিশেষ তহবিল তৈরি করবেন। কিন্তু বাজেট পরিস্থিতি ও ঘাটতি নিয়ে কড়া সাংবিধানিক নিয়মের মধ্যে পড়ে শলৎস তা করতে পারেননি। উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড ২০২৪ সালে তাদের জিডিপি-র চার দশমিক দুই শতাংশ প্রতিরক্ষায় খরচ করেছে। এস্তোনিয়া জিডিপি-র তিন দশমিক চার, লাটভিয়া তিন দশমিক ১৫, লিথুয়ানিয়া দুই দশমিক ৮৫, ফিনল্যান্ড দুই দশমিক ৪১ শতাংশ অর্থ প্রতিরক্ষায় খরচ করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষাখাতে খরচ করে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button