Science & Tech

প্যাসিফিক মহাসাগরের তলে ‘ডুবে যাওয়া পৃথিবী’র সন্ধান

প্যাসিফিক মহাসাগরের তলে পৃথিবীর প্রাচীন ভূত্বকের সম্ভাব্য অংশ বা তথাকথিত ‘ডুবে যাওয়া পৃথিবী’র সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অত্যাধুনিক ভূ-অভ্যন্তর মানচিত্র তৈরির প্রযুক্তি এবং ভূমিকম্প তরঙ্গ বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে এই বিস্ময়কর আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।  

বিজ্ঞান সাময়িকী Scientific Reports-এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, টেকটনিক পাতের অবশেষ শুধু জলে নিমজ্জিত এলাকায় নয়, মহাদেশীয় অভ্যন্তরেও লুকিয়ে রয়েছে। তবে এই অবশেষগুলোর অবস্থান এমন কিছু এলাকায় যেখানে অতীতে কোনো টেকটনিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বিশেষ করে পশ্চিম প্যাসিফিক মহাসাগরের নিচে এই ধরনের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েছে।  

গবেষক দলের মতে, এই অবশিষ্ট অংশগুলো কীভাবে সেখানে পৌঁছেছে, তা এখনো রহস্যময়।  

এই গবেষণায় গবেষকরা ভূমিকম্প তরঙ্গের সাহায্যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের একটি স্পষ্ট মানচিত্র তৈরি করেছেন। নতুন এই পদ্ধতিকে ফুল-ওয়েভফর্ম ইনভার্শন বলা হয়, পৃথক ভূমিকম্পের সিসমোগ্রাফগুলোর তথ্য একত্রিত করে একটি সুস্পষ্ট ছবি তৈরি করে।  

এছাড়া, গবেষণায় সুইজারল্যান্ডের পিজ ডেইন্ট সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতির ফলে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, মহাসাগরের তলদেশ এবং মহাদেশীয় অভ্যন্তরে নিমজ্জিত টেকটনিক পাতের মতো অংশ রয়েছে।  

গবেষকরা ধারণা করছেন, এই অংশগুলো হয়তো পৃথিবীর ভূত্বকের সৃষ্টি হওয়ার প্রাথমিক সময় থেকে বেঁচে থাকা প্রাচীন পদার্থ, যা প্রায় চার বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল। অথবা এগুলো হতে পারে এমন ঘন পদার্থ, যা গত কয়েক শো মিলিয়ন বছরে পৃথিবীর অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে।  

তবে এগুলো নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গবেষণার প্রধান গবেষক থমাস স্কাউটেন বলেছেন, আমরা এখনো জানি না এগুলো ঠিক কী, তবে আমরা বিভিন্ন উপাদানের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে দেখছি।  

গবেষকরা আরও বলেন, ভূমিকম্প তরঙ্গের গতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই অংশগুলো নিমজ্জিত টেকটনিক পাতের মতো। তবে এগুলো আসলেই একই ধরনের কি না, তা নিশ্চিত করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।  

স্কাউটেন আরও বলেন, তরঙ্গ গতির মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন উপাদানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চাই। এটি আমাদের এই গঠনগুলোর প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে সাহায্য করবে। 

এই আবিষ্কার পৃথিবীর অভ্যন্তর নিয়ে নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই গবেষণার মাধ্যমে ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের অজানা অধ্যায়গুলো আরও স্পষ্টভাবে জানা যাবে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button