বকেয়া সাড়ে ৭ কোটি ডলার পরিশোধে শেভরনের চিঠি
♦ বহুজাতিক কম্পানি শেভরন তিনটি গ্যাসক্ষেত্র জালালাবাদ, মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানা থেকে উত্তোলন করে সরবররাহ করছে ♦ গতকাল মোট দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন ১৯৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট, শেভরনের উত্তোলন ১১৪২ মিলিয়ন ঘনফুট
মার্কিন বহুজাতিক কম্পানি শেভরন বাংলাদেশের কয়েকটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলন করে আসছে, যা মোট দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং দেশীয় কনডেনসেট উৎপাদনের ৮৩ শতাংশের মতো। প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস ও কনডেনসেট বিক্রির বিপুল পরিমাণ বকেয়া জমে পেট্রোবাংলার কাছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৭৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার জন্য সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে শেভরন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বহুজাতিক কম্পানি শেভরন বাংলাদেশের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র জালালাবাদ, মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানা থেকে উত্তোলন করে সরবররাহ করছে।
এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গতকাল বুধবার ১১৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছে। দেশীয় মোট গ্যাসের ৬০ শতাংশের বেশি গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে শেভরনের এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করছে সিলেটের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। গতকাল এই একটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই ৯৭৭.৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়।
এক সময় বিবিয়ানার এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৩০০ মিলিয়নের ওপর উত্তোলন করা হতো। এখন মজুদ কমে যাওয়ায় গ্যাসের উত্তোলনের পরিমাণ কমে আসছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কম্পানিটির এমডি ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার স্বাক্ষরিত চিঠি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে দ্রুত বকেয়া পরিশোধে সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
বর্তমানে পেট্রোবাংলার কাছে শেভরনের গ্যাস বিল বাবদ কী পরিমাণ বকেয়া জমেছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ জাহিদুর রহমান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘শেভরন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো বকেয়া বিল পাবে। বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস ও কনডেনসেট সরবরাহ দিচ্ছে তাতে কম্পানিটির মাসিক বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের মতো।’
বহুজাতিক কম্পানি শেভরন বাংলাদেশের বকেয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু অর্থ ছাড়ও দিয়েছে বাংলাদেশ।
তার পরও কম্পানিটির সরবরাহ করা কয়েক মাসের গ্যাসের বিল বকেয়া পড়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক বছর আগে দেশীয় কূপগুলো থেকেই দৈনিক দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা যেত। কূপগুলো থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে গ্যাসের উত্তোলন। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে ২০১৮ সাল থেকে উচ্চমূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। গতকাল দেশীয় কূপগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৯৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ৮৬২ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, দেশীয় উত্স থেকে পাওয়া গ্যাসের গড় দর পড়ছে ছয় টাকা সাত পয়সার মতো। অন্যদিকে আমদানিকৃত এলএনজির গড় দর (গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) পড়ছে প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা।
কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে। পাশাপাশি স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে এলএনজি কেনা হয়। সম্প্রতি কাতার সরকারও এলএনজির বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে কাতার থেকে বছরে ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বকেয়া পড়েছে বলে জানা গেছে।