ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যেই কিয়েভে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
খেরসনে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, নিহত ১৬
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সফর করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি কিয়েতে পা রাখেন। তার এই সফরের মধ্যেই কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠে এবং ভয়াবহ বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে ইউক্রেনের খেরসনে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
কিয়েভের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমান বাহিনী শত্রুদের ড্রোন হামলার বিষয়ে সতর্ক করার পর শহরের কেন্দ্রস্থলে শত্রুদের লক্ষ্যবস্তু প্রতিহত করতে কাজ করছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কিয়েভ থেকে সাংবাদিকরা জানান, তারা একটি ড্রোন উড়ে যেতে দেখেছেন।
এর আগে রাশিয়ার এঙ্গেলস শহরে সামরিক বিমান ঘাঁটির তেলের ডিপোয় হামলা চালায় ইউক্রেন। সে সময় আগুন নেভাতে গিয়ে দুই দমকল কর্মীর মৃত্যু হয়। বুধবার উভয় পক্ষই একে অপরের বিদ্যুৎ ও সামরিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত জায়গায় হামলার দাবি করে। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের ঝাপোরিজ্জিয়াতে ১৩ জন নিহত হয়। গত মাসের শেষদিকে রাশিয়ার ওরিওল অঞ্চলে দূরপাল্লার শাহেদ ড্রোনের একটি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ডিপোতে হামলা চালানোর দাবি করে ইউক্রেন।
সে সময় ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এই হামলা রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বৃহৎ আকারের ড্রোন হামলা পরিচালনার সক্ষমতা ‘গুরুতরভাবে কমিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, দেশটির বিমান বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে। এই হামলার ফলে শাহেদ কামিকাজে ড্রোনের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের জন্য ব্যবহৃত সুরক্ষিত কংক্রিট কাঠামোতে একটি ডিপো ধ্বংস হয়ে গেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই সামরিক অভিযানে শত্রুপক্ষের বিমান হামলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এটি ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার ড্রোন হামলা চালানোর ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে মস্কো প্রায় প্রতিদিন শতাধিক ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। রাশিয়া গত প্রায় ৩৫ মাস ধরে ইউক্রেনে নিয়মিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।
এদিকে দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসনে রুশ ড্রোন আক্রমণে বেসামরিকদের ওপর চরম ত্রাস চলছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অঞ্চলে ড্রোন হামলার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে অন্তত ১৬ জন নিহত এবং ১৪৪ জন আহত হয়েছেন।
খেরসনের ডেপুটি মেয়র আন্তন ইয়েফানোভ বলেন, রুশ বাহিনী খেরসনে কেবল সন্ত্রাস চালাচ্ছে না, তারা বেসামরিকদের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। রুশ সেনারা ড্রোনের মাধ্যমে বেসামরিক যানবাহন ও জনপরিবহন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। ডিসেম্বর ও নভেম্বর মাসে রুশ ড্রোন হামলা শহরের গভীরে প্রবেশ করেছে এবং সামাজিক ও গণপরিবহনের ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। এই সময়কালে, ড্রোন হামলার কারণে শহরের আঘাতের ৬০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে, যা আগে ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। খেরসনের জনসংখ্যা যুদ্ধের আগে ছিল ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি। এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৮৩ হাজারে। যুদ্ধের কারণে শহরটিতে জন্মহার কমেছে। ডিসেম্বরে মাত্র ১৫ জন শিশু জন্ম নেয়, যেখানে ২৫৬ জন মারা যায় এবং ৩১১ জন শহর ছেড়ে চলে যান।
২২ বছর বয়সি মারিয়া তার নবজাতক সন্তান ইভানের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমার পাঁচ বছরের মেয়ে বলে, ‘মা, দেখো, ড্রোন গুঞ্জন করছে।’ শিশুরাও এখন সব বুঝে। আমরা একধরনের বন্দি জীবন কাটাচ্ছি। খেরসন শহরের অনেক অংশ এখন ভূতের নগরীর মতো। জনশূন্য রাস্তায় কদাচিৎ গাড়ি চলাচল করে। যেসব পেশাদার শহরে ফিরে এসেছেন, তাদের বেশির ভাগই মানবিক সংকট মোকাবিলায় কাজ করছেন। পোলিশ সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের কর্মী আলেক্সান্ডার দোরোফেইভ জানান, ড্রোনগুলো আমাদের অনুসরণ করে। শহরে ড্রোনের হাত থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই।
খেরসনকে দখলের প্রচেষ্টা রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। তবে বর্তমানে ডিনিপ্রো নদীর দুই প্রান্তে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বাহিনী অবস্থানগত যুদ্ধের মধ্যে আটকে রয়েছে।