পৃথিবীর আবরণ দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণ জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীর ম্যান্টল বা অভ্যন্তরীণ স্তর দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: আফ্রিকান এবং প্যাসিফিক ডোমেইন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সুপারকন্টিনেন্ট প্যানজিয়া ভেঙে যাওয়ার পর এই বিভাজন সৃষ্টি হয়।
আফ্রিকান ডোমেইনটি পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থলভাগকে আচ্ছাদিত করেছে। এটি এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে শুরু করে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে, প্যাসিফিক ডোমেইনটি মূলত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুক দুসেট জানিয়েছেন, আফ্রিকান ডোমেইনের নিচের ম্যান্টলে প্যাসিফিক ডোমেইনের তুলনায় বেশি পরিমাণে বিভিন্ন উপাদান ও আইসোটোপ পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি গত এক বিলিয়ন বছরে দুইটি সুপারকন্টিনেন্টের গঠনের প্রভাবকে তুলে ধরে।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ১.২ বিলিয়ন বছর আগে রডিনিয়া নামে একটি সুপারকন্টিনেন্ট গঠিত হয় এবং এটি ৭৫০ মিলিয়ন বছর আগে ভেঙে যায়। এরপর ৩৩৫ মিলিয়ন বছর আগে প্যানজিয়া গঠিত হয় এবং এটি ২০০ মিলিয়ন বছর আগে ভেঙে যায়। এই ভাঙাগড়ার প্রক্রিয়ার ফলেই পৃথিবীর বর্তমান ভূতাত্ত্বিক গঠন তৈরি হয়েছে।
লুক দুসেট বলেন, রডিনিয়া থেকে প্যানজিয়া এবং পরে প্যানজিয়ার ভেঙে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আজকের ভূতাত্ত্বিক চিত্র গড়ে উঠেছে।
সুপারকন্টিনেন্ট গঠনের সময় সাবডাকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমুদ্রতলীয় ভূত্বক (oceanic crust) মহাদেশীয় ভূত্বকের নিচে ঠেলে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে মহাদেশীয় শিলার কিছু অংশ ম্যান্টলে মিশে গিয়ে সেখানে নতুন উপাদান ও আইসোটোপের মজুদ তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্যানজিয়ার ভাঙার পরও তার রাসায়নিক চিহ্ন গভীর এবং অগভীর ম্যান্টলে রয়ে গেছে।
লুক দুসেট এবং অধ্যাপক ঝেং-জিয়াং লি ৩,৯৮৩টি ভলকানিক শিলার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। এগুলো সমুদ্রের মাঝখানে প্লেট সরে যাওয়ার জায়গা থেকে সংগৃহীত। গবেষণায় উঠে এসেছে, ম্যান্টল ডোমেইনগুলোর রাসায়নিক গঠন শুধু ভূতলের পরিবর্তন নয়, বরং পৃথিবীর গভীরের সক্রিয়তাকেও নির্দেশ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ম্যান্টলের এই পরিবর্তন থেকে আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত বিরল উপাদান যেমন কার্বন ও জিঙ্কের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
লুক দুসেট বলেন, প্লেট টেকটনিকস পৃথিবীকে জীবনের জন্য উপযোগী রাখতে সহায়তা করে। আমরা এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং এর বিশেষত্ব আরও ভালোভাবে বুঝতে চাই।