এক বছরে বেকার অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক
যে খাতের হাত ধরে বাংলাদেশ বৃহদাকারে রপ্তানিতে নাম লেখায় সেই তৈরি পোশাক খাত আজ সংকটে পড়েছে। গত এক বছরে বন্ধ হয়েছে কমপক্ষে ৭৬টি তৈরি পোশাক কারখানা। বন্ধ হওয়ার উপক্রম আরও শতাধিক কারখানা। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানান সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের ক্রমান্বয়ে দাম কমার কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের। ফলে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে শ্রমবাজারেও। গত এক বছরে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। অধিকাংশ নারী। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আরও কারখানা বন্ধের শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, ‘দেশের তৈরি পোশাক খাত ধুঁকে ধুঁকে চলছে। বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা ছাড়া কেউ লাভের মুখ দেখছে না। কারখানার মেশিন যত ঘুরছে, দেনা তত বাড়ছে মালিকদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরে আরও বন্ধ হবে অসংখ্য কারখানা।’
জানা যায়, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ইন্টারনেটব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়ে তৈরি পোশাক খাতে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শ্রমিক অসন্তোষ ঘিরেও দেখা দেয় অস্থিরতা। এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, গ্যাসসংকট ও গ্যাট ট্যারিফ বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে এ খাতে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃহৎ ক্রেতা দেশগুলোতে রপ্তানি ভাটা এবং প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোর পোশাকের মূল্য কমানো। গত এক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দাম কমিয়েছে ৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পোশাকের দাম কমিয়েছে ৮ শতাংশ।
একই সঙ্গে সার্বিকভাবে গত বছর রপ্তানি অর্ডার কমেছে ৩ শতাংশ। তাই চরম সংকটে পোশাক কারখানা মালিকরা। লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হয়েছে কমপক্ষে ৭৬টি করাখানা। তবে এমন সংকটের মধ্যেও ২০২৪ সালে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন দেশের গার্মেন্টস মালিকরা। এ রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রেখেছে নিটওয়ার পণ্য। এক বছরে নিটওয়ার পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। একই সময়ে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলারের।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, পুরো দেশে তাদের আওতাধীন কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৫৬৪টি। এর বাইরে আট ইপিজেডে কারখানা রয়েছে ৬ শতাধিক। ২০২৪ সালে সংগঠনটির সদস্যভুক্ত ৭৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, ‘দেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে স্থিতিশীল সরকারের বিকল্প নেই। শিল্প খাতে সংকট মোকাবিলায় নির্বাচিত সরকার দরকার।’