Trending

মোটরসাইকেল বিক্রিতে ৫ বছরের সর্বনিম্ন রেকর্ড

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিক্রি ২০২৪ সালে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।

এসিআই মোটরসের সামগ্রিক বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের চেয়ে ২ শতাংশ কমে ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬১০টি মোটরসাইকেল। এমনকি করোনা মহামারি সময়কালের চেয়েও বেশি বিক্রি কমেছে।

এসিআই মোটরসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস এর কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে মোটরসাইকেলের দামও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে।’

যদিও প্রিমিয়াম মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এই চিত্র ভিন্ন। ২০২৪ সালে প্রিমিয়াম মোটরসাইকেলের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

সুব্রত রঞ্জন দাস উল্লেখ করেন, ধনী ক্রেতাদের ওপর অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব না পড়ায় উচ্চমানের মোটরসাইকেল মডেলগুলোর চাহিদা ঠিক ছিল।

তিনি সতর্ক করে বলেন, সামগ্রিক বাজারে প্রবৃদ্ধির সুযোগ খুবই সীমিত।

তার ভাষ্য, ‘অর্থনীতি চাপে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রস্তুতকারক ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই কম।’

সর্বশেষ বিক্রয় তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোটরসাইকেল বাজারে কিছু ব্র্যান্ড উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখালেও বাকিদের বিক্রি কমেছে, যা ক্রেতাদের পছন্দ ও বাজারের গতিশীলতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

এসিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হিরো মোটরসাইকেল ২০২৪ সালে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে হিরো মোটরসাইকেলের বিক্রি ৫৮ হাজার ১৮৯ ইউনিটে পৌঁছেছে এবং এর মাধ্যমে বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব পৌঁছেছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশে।

এই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেড়েছে মূলত সাশ্রয়ী মডেল ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ডিজাইনের ওপর মনোযোগ দেওয়ায়। বাজেট-সচেতন ক্রেতাদের কাছে তারা জনপ্রিয় হয়েছে।

এসিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুজুকি ও ইয়ামাহাও যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। ব্র্যান্ড দুটিরই এখন বাজার অংশীদারিত্ব ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ করে। মধ্যম মানের মোটরসাইকেলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ইয়ামাহার আগ্রাসী প্রচারণা ও উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যের কারণে চাহিদা বেড়েছে। আর সুজুকি ধারাবাহিকভাবে নির্ভরযোগ্য হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করায় ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পেরেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রয়েছে বাজাজ। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল একসময় এ দেশের মোটরসাইকেল বাজারের শীর্ষ অবস্থানে। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি কমেছে ১০ শতাংশ।

কোম্পানিটি ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার ৬৯৬ ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যার ফলে তাদের বাজার অংশীদারিত্ব ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তারপরও তারা এখনো বাজারে বড় অংশীদার।

হোন্ডার বিক্রিও সামান্য কমেছে। আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে তাদের বিক্রি ১ শতাংশ কমেছে। ফলে সামান্য কমে বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব এখন ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্রেতাদের পরিবর্তিত প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হোন্ডার লাইনআপ পুনর্গঠন করা দরকার।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাজারে নতুন মডেল কম আসায় বিক্রি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

সামগ্রিকভাবে মোটরসাইকেলের বাজারে গতিশীল প্রেক্ষাপট লক্ষণীয়। ব্র্যান্ডগুলো উদ্ভাবন, মূল্য নির্ধারণ কৌশল ও প্রচারণার মাধ্যমে বাজার ধরার প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

মোট বিক্রয় পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ক্রেতারা স্টাইল ও পারফরম্যান্সের সঙ্গে আপস না করে সাশ্রয়ী মূল্যের মোটরসাইকেল বেছে নেওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় জানান, ভারতের টিভিএস মোটর কোম্পানির স্থানীয় পরিবেশক ও নির্মাতা হিসেবে তাদের বিক্রি গত বছর প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে ২৯ হাজার ৯৩২ ইউনিটে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও দুর্বল অর্থনীতি বাজারে প্রভাব ফেলেছে।’

তার মতে, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক সংযোগের সুবিধা নেওয়া ক্রেতাদের সুবিধা পাওয়ার পরিমাণ শূন্যে নেমে যাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর খুচরা বিক্রেতারা এক মাসের বেশি সময় আউটলেট খুলতে পারেনি।

২০২৪ সালের পড়ন্ত বাজারেও হোন্ডার সন্তোষজনক বিক্রির জন্য নিজেদের উদ্ভাবন ও গ্রাহককেন্দ্রিক ডিজাইনের দিকে নজর দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মডেলগুলো হোন্ডার রেসিং ডিএনএ থেকে অনুপ্রাণিত এবং ক্রমাগত গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে এর পারফরমেন্স উন্নত করা হচ্ছে।’

বিএইচএল জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

আশেকুর রহমান এই চ্যালেঞ্জিং বাজারে হোন্ডার উদ্ভাবন ও নির্ভরযোগ্যতার ঐতিহ্য কাজে লাগিয়ে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button