Bangladesh

অভিযোগের পাহাড় টেলিকম সেবায়

দেশের টেলিকম সেবায় চলছে হযবরল অবস্থা। গ্রাহকসেবার মান কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ কারণে প্রতি মাসে কমছে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা।

অন্যদিকে মোবাইল সেবার ওপর সাত মাসের ব্যবধানে পর পর দুবার ভ্যাট আরোপ করায় খরচ বেড়েছে গ্রাহকদের। বিষয়টি নিয়ে টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি ভ্যাট কমানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অপারেটররা।

এ ছাড়া বাড়তি ভোগান্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে কলড্রপ। এ নিয়ে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। মোবাইলে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই কেটে যাচ্ছে কল। আবার নতুন করে সংযোগ নিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এতে ঠিকই টাকা কাটছেন অপারেটররা। অথচ গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এ অভিযোগ নতুন নয়। প্রতিদিন হাজার হাজার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে। তাই প্রশ্ন উঠছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভূমিকা নিয়ে। ২৯টি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজারের বেশি লাইসেন্স দিয়েছে বিটিআরসি। বলা হয়েছিল, এতে গ্রাহকসেবার মান বাড়বে। মূলত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব লাইসেন্সের বেশির ভাগই হাতিয়ে নেন প্রভাবশালীরা। সব মিলিয়ে এ খাতে দেখা দিয়েছে হযবরল অবস্থা।

নতুন কর আরোপে এ খাতে দেখা দিয়েছে আরও বিশৃঙ্খলা। বিষয়টাকে সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ২০২৪ সালের জুনে ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবারও ৩ শতাংশ বাড়ানো হলো। সেক্ষেত্রে মাত্র সাত মাসের মাথায় গ্রাহকদের ওপর পরোক্ষ করের বোঝা বাড়ল ৯ দশমিক ২ ভাগ। এখন থেকে গ্রাহকরা প্রতি ১০০ টাকার সেবা গ্রহণ করলে প্রদান করতে হবে ১৪২ দশমিক ৪৫ টাকা (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জসহ)। গত বাজেটের আগে যা ছিল ১৩৩ দশমিক ২৫ টাকা। এ ব্যাপরে প্রযুক্তিবিদ এবং বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, কারও সঙ্গে আলোচনা না করে এভাবে ইন্টারনেট সেবায় কর আরোপ করা এক ধরনের স্বৈরাচারী আচরণ। নতুন করে কর বৃদ্ধি করলে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবা খাত হুমকির মুখে পড়বে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি তো দূরে থাক, গ্রাহকরা এই সেবা গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে নতুন করে কর আদায় করার যে সিদ্ধান্ত তা হোঁচট খাবে।

মোবাইল অপারেটররা যা বলছেন : এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় আমরা বিস্মিত। এমন পরিস্থিতিতে এটি বাড়ানো হলো যখন ধকল কাটিয়ে উঠছে অর্থনীতি, দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে, দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য সংকল্পবদ্ধ টেলিযোগাযোগ শিল্প। কিন্তু এমন পদক্ষেপ এ অগ্রগতি ব্যাহত করবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য বাড়াবে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টেলিকম সেবা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। এ ছাড়া ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে অপরিহার্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এ খাত। মোবাইল ফোনের সেবার ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে গ্রাহকের খরচ বাড়ছে। ইতোমধ্যে গ্রাহক ও টেলিকম খাতের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এ পদক্ষেপ ডিজিটাল বৈষম্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এই খাতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত এবং সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাস করবে।

রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম টেলিকম সেবা নিয়ে বিটিআরসির ঘোষিত ইন্টারনেট প্যাকেজ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রাহকের স্বার্থে ডেটা প্যাকেজ সেবায় অপারেটরদের বাণিজ্যিক স্বাধীনতা প্রদান করা হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত আরও গ্রাহককেন্দ্রিক, উদ্ভাবনী এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে। এ ছাড়া রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কোনো ডেটা প্যাক সুবিধা না থাকায় ফ্রিল্যান্সারসহ বিভিন্ন খাতে যারা রাতে ইন্টারনেট ডেটানির্ভর কাজ করেন তারা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না। সময় নির্ধারণ না করে শুধু নেটওয়ার্কনির্ভর ডেটা সরবরাহ করার সুযোগ থাকলে অপারেটররা আরও সুলভমূল্যে ডেটা দিতে পারতেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button