Science & Tech

মঙ্গলের পৃষ্ঠের ৫০ বছরের পুরনো রহস্যের সমাধানে নতুন তত্ত্ব

বিজ্ঞানীরা অবশেষে মঙ্গলের উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধের পৃষ্ঠের বিশাল পার্থক্যের রহস্যের সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। এই বিভাজন, ‘মার্টিয়ান ডাইকটমি’ নামে পরিচিত। এটি প্রথম ১৯৭০-এর দশকে নাসার ভাইকিং অরবিটারের পাঠানো ছবি থেকে জানা যায়।   

মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের ভূমি প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার নিচু এবং এর ভূত্বক তুলনামূলকভাবে পাতলা। অন্যদিকে, দক্ষিণ গোলার্ধের ভূমি প্রাচীন, উঁচু, এবং অনেক বেশি গর্তপূর্ণ।

জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা জানায়, এই বিভাজনের পেছনে সম্ভবত মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ তাপ সঞ্চালন বা ম্যান্তল কনভেকশন দায়ী। আগে ধারণা করা হতো, কোনো মহাজাগতিক সংঘর্ষ এর কারণ। তবে নতুন তত্ত্ব অনুযায়ী, মঙ্গলের টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া এবং এর নিচের গলিত পাথরগুলোর অবস্থানই এই বিভাজন সৃষ্টি করেছে।  

গবেষণায় নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের মাধ্যমে সংগৃহীত মার্সকোয়েক বা মঙ্গলে ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এই তথ্য মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ গঠনের অন্তর্দৃষ্টি দেয়।  

গবেষকরা জানিয়েছেন, একসময় মঙ্গলে পৃথিবীর মতো টেকটোনিক প্লেট সক্রিয় ছিল। পরে এই প্লেটগুলোর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ তাপ প্রবাহ থেমে যায় এবং তা ‘স্ট্যাগন্যান্ট লিড’ নামের স্থায়ী অবস্থা সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়া পৃষ্ঠের উত্তর-দক্ষিণ পার্থক্য স্থায়ী করে।  

দক্ষিণ গোলার্ধে প্রাচীন ম্যাগনেটিক ফিল্ডের চিহ্ন পাওয়া যায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে, মঙ্গল একসময় বৈশ্বিক চৌম্বক ক্ষেত্রযুক্ত ছিল। এটি সম্ভবত ৩.৯ বিলিয়ন বছর আগে পর্যন্ত ছিল, যা আগের অনুমান ৪.১ বিলিয়নের তুলনায় দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী ছিল।  

তবে উত্তর গোলার্ধ তুলনামূলকভাবে তরুণ এবং এতে কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।  

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই তত্ত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত করতে আরও মার্সকোয়েক এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজন। তাছাড়া মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রাচীন জলবায়ুর প্রমাণ, যা নাসার পাঠানো রোভারগুলো আবিষ্কার করেছে, এর সঙ্গে আরও সম্পর্কিত গবেষণা করতে হবে।  

মঙ্গলের পৃষ্ঠ ও অভ্যন্তরীণ গতিবিধি নিয়ে গবেষণায় এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি ভবিষ্যতের মঙ্গল-মিশনের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button