Bangladesh

ভয় নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভবিষ্যৎ গড়ার ঐতিহাসিক সুযোগ!

নতুন মার্কিন প্রশাসন: বাংলাদেশের জন্য খুলবে সম্ভাবনার নতুন দরজা

প্রেসিডেন্ট হয়ে বিদেশে মার্কিন সহায়তা কমিয়ে আনছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে দিয়ে সাজাচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্রনীতি।

কিন্তু এতে বাংলাদেশের নতুন মার্কিন প্রশাসনকে ভয় পাওয়া নয় বরং ভবিষ্যৎ গড়ার ঐতিহাসিক সুযোগ সামনে এসেছে বলে মনে করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক।

অনেকেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সবকিছু বদলে যাবে। দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা আবারো রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবেন। আর বেকায়দায় পড়বেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস।

‘কিন্তু এমন কিছুই হতে দেখা যায়নি বরং সব স্বাভাবিকভাবেই চলছে’, এমনটি লিখেই বাংলাদেশের সংস্কার কাজকে আরো স্বাগত জানিয়ে বিশ্লেষণধর্মী মতামত লিখেছেন সাবেক সিনিয়র মার্কিন ফরেন সার্ভিস অফিসার লেখক জন ড্যানিলোভিস। একজন স্বাধীন বৈদেশিক নীতি বিশ্লেষক হিসেবেও খ্যাতি আছে জন ড্যানিলোভিসের।

তার লেখা অনুযায়ী, শপথ গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারের কিছু রূপরেখা সামনে এসেছে। প্রত্যাশিতভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার সীমান্ত সংকট ও অভিবাসনের বৃহত্তর সমস্যা মোকাবেলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বাণিজ্য সমস্যা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা মোকাবেলার উপরও জোর দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাম্পের কাছে কম গুরুত্ব পেয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

মার্কিন সেক্রেটারি মার্কো রুবিও স্টেট ডিপার্টমেন্টে পা রেখেই পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা নেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোয়াডের বিদেশ মন্ত্রীদের সাথে নিয়ে ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্ব আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে ওয়াশিংটনের এই পালাবদলের সময়ে ডক্টর ইউনূস দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান করছিলেন। প্রায় অর্ধশত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বেশ কয়েকটি প্যানেল ও বিষয়ভিত্তিক ইভেন্টে অংশ নেন তিনি।

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডক্টর ইউনূসের উপস্থিতি তার বৈশ্বিক সেলিব্রিটি ইমেজ এবং সেই সাথে বাংলাদেশের সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন জানায় আন্তর্জাতিক জোট।

কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা ওয়াশিংটন ডিসিতে মিলিত হয়েছি একটি উন্মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিককে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে, আমাদের অঙ্গীকার পুনঃনিশ্চিত করতে যেখানে আইন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সার্বভৌম এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা সমুন্নত রাখা যায়।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কার আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ এটি কোয়াডের এজেন্ডার ভিত্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে যা কিছু করছে, তা কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বারা বর্ণিত লক্ষ্যগুলোর সাথে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানা যাবে।

বিশেষত যখন প্রধান রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ্যে আসবে এবং সিনেটে তা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে। সময়ের সাথে সাথে ট্রাম্প, রুবিও এবং তাদের টিম বাংলাদেশের দিকে মনোযোগ দেবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে জড়িত হবে বলে মনে করছেন লেখক জন ড্যানিলোভিস।

সব মিলে মার্কিন এই পররাষ্ট্র বিশ্লেষকের মত, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ সঙ্গে অংশীদারিত্বে একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে, যার সৎ ব্যবহার করা উচিত বাংলাদেশের।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button