Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

ভারতের খাদ্য সংকট যুক্তরাষ্ট্রের গ্রন্থাগারগুলোকে যেভাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর রেজেনস্টাইন গ্রন্থাগারে দক্ষিণ এশিয়ার বইয়ের এক অনন্য সম্ভার আবিষ্কার করেছিলেন অনন্যা বাজপেয়ী। সালটা ১৯৯৬। সেই সময় ডক্টরেট করছিলেন তিনি।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ভারতের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের (সিএসডিএস) ফেলো অনন্যা বাজপেয়ী বলেছেন, আমি অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড এবং কলম্বিয়ায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দক্ষিণ এশিয়া স্টাডিজের গ্রন্থাগারে সময় কাটিয়েছি। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে যে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে, তার সঙ্গে সেগুলোর কোনও তুলনাই হয় না।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো ১৩২ বছরের পুরনো। সেখানে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত আট লক্ষেরও বেশি বইয়ের খণ্ড রয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানকে ওই অঞ্চলের (দক্ষিণ এশিয়ার) গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

এখন প্রশ্ন হলো দক্ষিণ এশিয়ার এমন ভাণ্ডার যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরিতে পৌঁছাল কীভাবে?

এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে আমেরিকার ‘পিএল-৪৮০’ কর্মসূচির মধ্যে। ‘পাবলিক ল ৪৮০’ বা ‘পিএল-৪৮০’ এমন একটা মার্কিন উদ্যোগ যা চালু হয়েছিল ১৯৫৪ সালে।

‘ফুড ফর পিস’ নামেও পরিচিত এই উদ্যোগ ছিল শীতল যুদ্ধের সময়কার এক কূটনৈতিক বৈশিষ্ট্য।

প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের স্বাক্ষরিত এই আইনের আওতায় ভারতের মতো দেশ স্থানীয় মুদ্রায় মার্কিন শস্য কেনার অনুমতি পায়।

এর ফলে একদিকে যেমন দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার বোঝা হ্রাস পায়, তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের উদ্বৃত্ত শস্য সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানও খুঁজে পায়।

এই খাদ্য সহায়তার অন্যতম বৃহত্তম গ্রহীতা ছিল ভারত, বিশেষত ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে যখন সে দেশে তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা গিয়েছিল।

‘পিএল-৪৮০’-র আওতায় অংশগ্রহণকারী মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ন্যূনতম ব্যয়ে স্থানীয় মুদ্রা তহবিল সরবরাহ করা হতো।এই তহবিল ভারতের একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় লেখা বই, সাময়িকী, ফোনোগ্রাফ রেকর্ড এবং অন্যান্য মাধ্যম কেনার জন্য ব্যবহার করা হতো।

এইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই ডজনেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করেছিল ভারতীয় বই (তবে ভারতীয় পুরাকীর্তি আইনের কারণে এই সংগ্রহ থেকে পাণ্ডুলিপি বাদ দেওয়া হয়েছিল)।

ক্রমে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত অধ্যয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

‘পিএল-৪৮০’ উদ্যোগের প্রভাব কিন্তু হয়েছিল সুদূরপ্রসারী।

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর) ডিজিটাল সাউথ এশিয়া লাইব্রেরির পরিচালক জেমস নাই বিবিসিকে বলেছেন, পিএল-৪৮০ ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো-সহ যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টারও বেশি গ্রন্থাগারের সংগ্রহে বিস্ময়কর এবং অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেছে।

তবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই এনে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রন্থাগারের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করার কাজ কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। এর জন্য একটা বিশেষ দল গঠন করা হয়। তথ্য বলছে, ১৯৫৯ সালে দিল্লিতে ৬০ জন ভারতীয়কে নিয়ে গঠন করা হয় ওই বিশেষ দল।

প্রাথমিকভাবে মনোনিবেশ করা হয়েছিল সরকারি প্রকাশনা বাছাই করার দিকে। পরে তালিকায় বই এবং সাময়িকী অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই কর্মসূচির সময়কাল পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয় ।

দক্ষিণ এশীয় গবেষণার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থাগারবিদ মরিন এল পি প্যাটারসন জানিয়েছেন, ১৯৬৮ সালের মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সংগ্রহ থেকে বই, সাময়িকী এবং অন্যান্য উপকরণ পেয়ে সমৃদ্ধ হতে থাকে ২০টা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে বহু ভাষায় সমৃদ্ধ ভারতীয় গ্রন্থের বিপুল ভাণ্ডার থেকে বই বেছে নেওয়ার কাজ সহজ ছিল না। মি. প্যাটারসন তার লেখায় (১৯৬৯ সালে প্রকাশিত) বর্ণনা করেছেন ‘পিএল -৪৮০’ কর্মসূচির গোড়ার দিকের দিনগুলোতে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল ভারতে কর্মরত ওই বিশেষ দলকে।

বৈচিত্রময় ভারতে বিভিন্ন ভাষায় লেখা বইয়ের ভাণ্ডার, সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংগ্রহের বই বেছে নেওয়াটা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে এমন দক্ষ বই বিক্রেতার, যার বইয়ের বিষয়ে জ্ঞান এবং বিচারক্ষমতা রয়েছে।

প্যাটারসন লিখেছেন, ভারতের আকার এবং এর সাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডারের নিরিখে কোনও একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে এই কাজ একার হাতে পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

তাই বিভিন্ন প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে ডিলার বা কারবারি নির্বাচন করা হয়েছিল। তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট ভাষায় বা ভাষাসমূহে মনোনিবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই সমন্বয় কিন্তু বাস্তবে কাজে দিয়েছিল।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলাররা যে সমস্ত বইয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হতেন না, অনুমোদনের জন্য সেগুলোর শিরোনাম পাঠাতেন দিল্লিতে। আর দিল্লিস্থিত দফতরের কর্মকর্তারা নির্বাচন চূড়ান্ত করে তাতে সিলমোহর দিতেন।

ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখা ভারতীয় কথাসাহিত্য সংগ্রহের বিষয়ে আগ্রহী ছিল এই কর্মসূচি। প্যাটারসন লিখেছেন, এই নীতির আওতায় বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা কাহিনী এবং উপন্যাস বাছাই করা হয়েছিল। পরে অবশ্য অন্য ধরনের বইয়ের উপরে মনোনিবেশ করা হয়।

গবেষণামূলক বই এবং সংশ্লিষ্ট নথির সংগ্রহ করার উপর জোর দেওয়া হয় এবং ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখা কথাসাহিত্য সংগ্রহের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়।

ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে ১৯৬৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি বই এবং সাময়িকী পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ভারত থেকেই গিয়েছিল ৬ লক্ষ ৩৩ হাজারেরও বেশি বই, সাময়িকী ইত্যাদি।

পিএল-৪৮০ কর্মসূচি নিয়ে ১৯৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা গ্রন্থাগারে আয়োজিত এক বৈঠকের বিষয়ে লেখা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা ১০০০ থেকে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস, ভারতে হস্তশিল্প, হিন্দু সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব : এক মনোবিশ্লেষণমূলক অধ্যয়ন-সহ আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাশ্চাত্য গ্রন্থাগারের বিশাল সংগ্রহ ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্য সম্পদ কেড়ে নিয়েছে কি না – এমন প্রশ্নও তুলেছেন ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের লাইব্রেরিয়ান টড মাইকেলসন-আম্বেলাং।

ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় এবং অর্থায়ন হয়েছিল ‘পিএল-৪৮০’ কর্মসূচির হাত ধরে। একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের সাউথ এশিয়া সেন্টারের গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ হয়েছে দুই লক্ষেরও বেশি ‘পিএল-৪৮০’-এর আওতায় আসা বইয়ের হাত ধরে।

মি মাইকেলসন-আম্বেলাং বিবিসিকে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘পিএল-৪৮০’-এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে আসা দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা বই সরিয়ে দিলে সেখানে ‘জ্ঞানের ঘাটতি তৈরি হয়’ – যে ঘাটতি পূরণের জন্য গবেষকদের পশ্চিমের গ্রন্থাগারে যেতে হয়।

সেই সময় ভারত থেকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে সব বই কিনেছে, তার সবই ভারতে এখন পাওয়া যায় কি না তা স্পষ্ট নয়।

ভারতের ফ্লেম বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়া ডডের মতে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সংগ্রহে এমন অনেক বই রয়েছে যা ভারতে এখন আর মেলে না। গ্রন্থাগারের সংগ্রহে থাকা সেই বইয়ের সবগুলোতেই ‘পিএল -৪৮০’ লেখা স্ট্যাম্প দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto