Trending

বিদেশি ঋণের দায় শোধের চাপ, ডলার বাজার অস্থির হতে পারে ফের

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের ১০৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণের বোঝা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে। বিপুল অঙ্কের ঋণের দায় শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। দায় শোধে অনেক ব্যাংকও সমস্যা মোকাবেলা করছে। ওই সব ব্যাংককে অন্য ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে হচ্ছে।

তথ্য বলছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের দায় শোধে মোট সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়েছে। তবে সামনে আরো ১২.৭২ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। অর্থনৈতিক সংকটের এই সময় দায় শোধের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের জোগান পাওয়া কঠিন হতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে ব্যাংকগুলোর জন্য রেমিট্যান্সে ডলার কেনাবেচার সর্বোচ্চ দর ১২২ টাকা নির্ধারণ করেছিল। একই সঙ্গে এক নির্দেশনা জারি করে বলা হয়, ডলার কেনাবেচার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধান এক টাকার বেশি হওয়া যাবে না। নিয়ম ভাঙলে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে ডলারের দর সাড়ে ১২১ টাকা থেকে ১২২ টাকার মধ্যে রেখেছিল।

তবে ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। ফলে দরও বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত দামে সব সময় ব্যাংক থেকে ডলার পাওয়া যায় না। বেশি দাম দিয়ে খোলাবাজার থেকে কিনতে হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট-বিআইবিএমের গবেষণা পরিচালক ও অধ্যাপক ড. শাহ আহসান হাবীব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক দিন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল আছে।

তবে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ এবং এক্সপোর্ট প্রমোশন করতে না পারলে চাপ তৈরি হতেও পারে। তবে মার্কেট ম্যানুপুলেশন কমে গেছে, তাই এ রকম সমস্যা না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এখন প্রতি মাসে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ছয় বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন রেমিট্যান্স ও চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়। যদিও কোনো কোনো মাসে বিদেশি ঋণ আসছে, তবে তার পরিমাণ খুবই অল্প এবং প্রতি মাসে আসছে না বিদেশি ঋণ। অন্যদিকে আমদানি বাবদ প্রতি মাসে গড়ে খরচ হচ্ছে পাঁচ বিলিয়ন এবং বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ছয় বিলিয়ন ডলার আয়ের বিপরীতে খরচ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। অর্থবছর শেষে সামষ্টিক ঘাটতি ডলার বাজারে অস্থিরতা বাড়াতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মোট ১০৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে সরকারি ঋণ ৮৪.৪ বিলিয়ন ডলার। বাকি ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত। সরকারের ৮৪.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার।

কারণ সরকারের বেশির ভাগ ঋণই দীর্ঘমেয়াদি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১.৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। বাকি ছয় মাসে পরিশোধ করতে হবে ২.৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরবর্তী ছয় মাসে বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

অন্যদিকে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৯.৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ছয় মাসেও ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন। সুতরাং ডলার আয় না বাড়ালে অর্থবছর শেষে বিপাকে পড়বে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক খাত। যদিও রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দেখে ডলার সংকট মোকাবেলায় আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো। প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের প্রবাহটাও ভালো। তাই আমরা আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে ডলার সংকট তৈরি হবে না।

কারণ এরই মধ্যে রমজানকেন্দ্রিক প্রচুর পণ্য আমদানি হয়ে গেছে। হজের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারও পরিশোধ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে ডলারের চাহিদা তৈরি হবে না। তা ছাড়া প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য যে ডলার প্রয়োজন হবে তা রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই মেটানো সম্ভব। তাই আমরা আশা করছি এ বছর নতুন করে ডলার সংকট তৈরি হবে না।’

গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোকে সাধারণ আমদানি ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির সব ওভারডিউ পেমেন্ট দ্রুত পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দেয়, নির্দেশনা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর থেকেই ডলারের চাহিদা বাড়ে। গোপনে বাড়তে শুরু করে ডলারের দামও।

একটি বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি হেড বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর ডলারের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। তবে গত কয়েক সপ্তাহে তা আবার অস্থির হতে শুরু করেছে। আমাদের কাছ থেকে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার আগ্রহ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু ব্যাংক বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে আগ্রাসীভাবে প্রতিযোগিতা করছে। ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি স্বাভাবিকভাবে বেশি দর দেওয়া চুক্তিটাই গ্রহণ করব।’

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি আন্ত ব্যাংক বাজারেও চাহিদা মতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রতিদিনই সরকারি এলসি পরিশোধ করতে হচ্ছে। সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ওভারডিউ পেমেন্ট পরিশোধের চাপ আরো বাড়িয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ব্যাংকগুলো কিছুটা বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার কিনছে, যাতে এসব শর্ত পূরণ করা যায়।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইনফ্লো চার্ট দেখলেই বোঝা যায়, কোন ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহ করছে। আমরা ১২২ টাকা রেটে ডলার দিচ্ছি। তবু রেমিট্যান্স আসছে না। অথচ তুলনামূলকভাবে দুর্বল একটি ব্যাংক একই রেটে আমাদের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে।

এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। রেমিট্যান্স মার্কেট রেট সেনসিটিভ (ডলারের রেটের প্রতি সংবেদনশীল)। যে ব্যাংক বেশি দাম দেবে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বেশি রেমিট্যান্স যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online