Bangladesh

হাজার কোটি লুটের আয়োজন!

♦ খরচ হয়েছে ৮২৮ কোটি, আরও ১০০৮ কোটি লোপাটের চেষ্টা, তদন্ত হবে বললেন উপদেষ্টা ♦ শিক্ষায় নতুন কারিকুলামে পুরোনো ফর্মুলায় দুর্র্নীতি

ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম চালু করেছিল বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এ কারিকুলাম বিস্তরণের জন্য নেওয়া হয়েছিল লুটপাটের স্কিম ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’। ওই কারিকুলামে শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত না হলেও স্কিম পরিচালক খরচ করেছেন ৮২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা! কারিকুলামের বিস্তরণে ব্যয় হওয়া এ টাকা বিভিন্নভাবে লোপাট করা হয়েছে- এমন অভিযোগ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগ অনুযায়ী, স্বৈরশাসকের দেশ ছেড়ে পলায়নের পর বাতিল করা হয়েছে বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম। কিন্তু বহাল তবিয়তে থাকা বিতর্কিত স্কিম পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী এবার কারিকুলাম বিস্তরণের নামে আরও ১ হাজার ৮ কোটি টাকা ব্যয়ের আয়োজন করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাধারায় ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম ফিরে এলেও সেই কারিকুলামের বিস্তরণের কথা বলে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের আয়োজন লুটপাট ছাড়া আর কিছু নয়। আওয়ামী লীগ আমলে এই স্কিমের নাম ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’ থাকলে বর্তমানে কৌশলে স্কিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিসেমিনেশন অব ন্যাশনাল কারিকুলাম’।

স্কিমের সংশোধিত খসড়ায় জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক, উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক, মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ-মাদরাসাশিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, রেকর্ড সংরক্ষক, আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ অন্যদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক প্রশিক্ষণেও বড় অঙ্কের অর্থের খরচের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের আবাসিক ওরিয়েন্টেশনসহ বিভিন্ন খাতে বড় অঙ্কের ব্যয়ের প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্কিম পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলীসহ সংশ্লিষ্টরা বাতিল হওয়া কারিকুলাম বিস্তরণের নামে নিজের খেয়ালখুশিমতো কাছের মানুষ নিয়ে মিলেমিশে অর্থ খরচ করেছেন। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভাগবাঁটোয়ারার এ স্কিম। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য রেখে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন বিতর্কিত পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী। সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে চাকরি হলেও চাকরিজীবনের বড় সময় পার করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এ। দীর্ঘ চাকরিজীবনের পর তাঁকে একটি কলেজে বদলি করা হলেও তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী এক নেতার মাধ্যমে তদবির করে এ স্কিমের পরিচালকের পদ বাগিয়ে নেন। আগের কারিকুলাম বাতিলের পর এ স্কিমের ১২ কর্মকর্তা ও সাত কর্মচারীর এখন তেমন কোনো কাজ নেই। তাই অনেকে অফিসেও থাকেন না। অথচ তাদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের প্রতিমাসে ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কাজ না থাকা এ শিক্ষা ক্যাডারদের সরকারি কলেজগুলোয় পদায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে যে বিতর্কিত কারিকুলাম চালু হয়েছিল তা বিস্তরণের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। আগের কারিকুলাম বাতিল হলেও কারিকুলামের স্কিম পরিচালক স্বপদে রয়ে গেছেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, আওয়ামী আমলের লুটপাটের সঙ্গে জড়িত অনেককেই এখনো সরানো হয়নি, এটা দুঃখজনক। বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম বিস্তরণের নামে ৮২৮ কোটি টাকা খরচ করার পর স্কিমের নতুন নামে আরও হাজার কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব দেওয়া স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, যখন যে সরকার থাকে তখন সেই সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। আগের সরকারের আমলে ৭ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, কারিকুলাম বাতিল হলেও প্রশিক্ষণ বিফলে যায়নি। তিনি দাবি করেন, ২০২৬ সাল থেকে শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম শুরু হবে। সেই কারিকুলাম কেমন হবে তা আমলে নিয়েই স্কিম ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে অর্থ অপচয় বা লোপাটের কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন কারিকুলামের বিস্তরণের নামে অর্থের অপচয়, লুটপাটের অনেক অভিযোগ রয়েছে। ব্যয়কৃত এই অর্থের তদন্ত করা হবে। আর কারিকুলাম নিয়ে নতুন করে আর ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto