নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে চাঁদে যাচ্ছে ইনটুইটিভ মেশিনস

হিউস্টন-ভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ইনটুইটিভ মেশিনস তাদের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের জন্য প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৩২, ১৭৩২ জিএমটি) সংস্থাটির ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি মন্স মাউটন নামক মালভূমিতে অবতরণের পরিকল্পনা করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চাঁদে অবতরণ করেছিল। যদিও তাদের ল্যান্ডার পাশ ফিরে পড়ে যায়। এবার, সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নাসা এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। ইনটুইটিভ মেশিনসের ১৫.৬ ফুট (৪.৮ মিটার) উচ্চতার ছয়কোণা ল্যান্ডার ‘অ্যাথেনা’ চাঁদের বুকে অবতরণ করবে, যা উচ্চতায় প্রায় একটি জিরাফের সমান।
অ্যাথেনার বিশেষ মিশন
এই মিশনে থাকছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি। তিনটি রোভার এবং ‘গ্রেস’ নামক বিশেষ একটি হপিং ড্রোন চাঁদে পাঠানো হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রেস হবে প্রথম ড্রোন, যা এমন একটি গহ্বরে প্রবেশ করবে যেখানে কখনো সূর্যের আলো পড়েনি।
মিশনে থাকা অন্যতম প্রধান রোভার ‘ম্যাপ’ একটি ৪জি নেটওয়ার্ক পরীক্ষায় অংশ নেবে, যা ভবিষ্যতে নভোচারীদের স্পেসস্যুটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। জাপানি সংস্থা ডাইমনের তৈরি ‘ইয়াওকি’ রোভারটি যে কোনো অবস্থানে পতিত হলেও টিকে থাকার উপযোগী, যা এটিকে আরও কার্যকর করে তুলবে। এছাড়া, ‘অ্যাস্ট্রোঅ্যান্ট’ নামক ক্ষুদ্র রোভারটি চুম্বকযুক্ত চাকায় ভর করে বড় রোভার ‘ম্যাপ’-এর গায়ে লেগে থাকবে এবং তাপমাত্রা পরিবর্তন পরিমাপে সহায়তা করবে।
এই মিশনে রয়েছে ‘প্রাইম-১’ নামক বিশেষ একটি ড্রিল, যা চাঁদের মাটির নিচে বরফ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান করবে। এই গবেষণা ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
সফল অবতরণের চ্যালেঞ্জ
ইনটুইটিভ মেশিনসের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো চাঁদের মাটিতে সঠিকভাবে অবতরণ করা। চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল না থাকায় প্যারাশুট ব্যবহার করা সম্ভব নয়, ফলে নির্ভুল থ্রাস্ট ও নেভিগেশন ব্যবস্থা দিয়ে অবতরণ করাতে হবে।
এর আগের মিশনে ‘ওডিসিয়াস’ ল্যান্ডারটি খুব দ্রুতগতিতে নামতে গিয়ে এক পাশে উল্টে পড়েছিল। যার ফলে সৌর প্যানেল যথেষ্ট শক্তি উৎপন্ন করতে পারেনি। এবার সেই ভুল এড়াতে উন্নত ক্যাবলিং ও লেজার অল্টিমিটার ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চতা ও গতি পরিমাপ নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত বুধবার স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে ‘অ্যাথেনা’ উৎক্ষেপণ করা হয়। তবে একই রকেটে থাকা নাসার ‘লুনার ট্রেইলব্লেজার’ উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, মার্কিন সরকার চাঁদে নভোচারী পাঠানোর পরিবর্তে মঙ্গল অভিযানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে। তবে আপাতত, এই মিশনের সফলতা ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।