নতুন ইতিহাস গড়ার পরও স্বস্তিতে নেই ইন্টুইটিভ মেশিনস

হিউস্টন-ভিত্তিক ইন্টুইটিভ মেশিনসের ‘অ্যাথেনা’ ল্যান্ডার চাঁদে অবতরণ করেছে। তবে এটি সঠিক অবস্থানে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পূর্বনির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পর সংস্থাটির মুখপাত্র ঘোষণা দেন, অ্যাথেনা চাঁদের মাটিতে পৌঁছেছে। কিন্তু অবতরণের প্রকৃত অবস্থা তখনও বিশ্লেষণাধীন ছিল।
গত বছর ‘ওডিসিয়ুস’ ল্যান্ডার চাঁদে অবতরণ করলেও, তা উল্টে পড়ে গিয়েছিল। এবারও অনুরূপ ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইন্টুইটিভ মেশিনসের প্রধান নির্বাহী স্টিভ অল্টেমাস জানিয়েছেন, ল্যান্ডারের অবস্থান সঠিক নয়, যা শক্তি উৎপাদন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কেন ব্যর্থ হলো অবতরণ?
অ্যাথেনার লেজার অল্টিমিটার যথাযথভাবে কাজ করেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটা উচ্চতা ও গতি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর ফলে অবতরণে সমস্যা দেখা দেয়। আগের মিশনের মতোই এবারও ল্যান্ডারের আকৃতি ও ভারসাম্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ১৫.৬ ফুট উচ্চতার অ্যাথেনা স্থিতিশীল থাকবে কি না, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংশয় ছিল।
নাসার ‘কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস’ (CLPS) প্রকল্পের অধীনে অ্যাথেনা চাঁদে পাঠানো হয়। এতে রয়েছে বরফ খনন পরীক্ষামূলক যন্ত্র, ৪জি সেলুলার নেটওয়ার্ক, তিনটি রোভার এবং ‘গ্রেস’ নামের একটি বিশেষ ড্রোন, যা চাঁদের চিরস্থায়ী ছায়াচ্ছন্ন গহ্বরে প্রবেশ করতে সক্ষম। তবে অ্যাথেনার চূড়ান্ত অবতরণের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে এসব গবেষণা সফল হবে কি না।
ব্যর্থতা সত্ত্বেও আশাবাদী নাসা
ইন্টুইটিভ মেশিনসের প্রযুক্তি প্রধান টিম ক্রেইন বলেন, যে কোনো ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে নামলে, তা মানবজাতির জন্য একটি ইতিবাচক দিন। নাসা এখনও মিশন থেকে যতটা সম্ভব বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
চাঁদে অবতরণ কেন এত কঠিন?
চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকায় প্যারাশুট ব্যবহার সম্ভব নয়, ফলে অবতরণের জন্য নিখুঁত থ্রাস্ট ও নেভিগেশনের প্রয়োজন হয়। ইন্টুইটিভ মেশিনসের প্রথম মিশন ‘ওডিসিয়ুস’ও সফলভাবে নামতে পারেনি, অতিরিক্ত গতির কারণে এটি উল্টে যায়। অ্যাথেনা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, একই রকেটে নাসার ‘লুনার ট্রেইলব্লেজার’ প্রোবও পাঠানো হয়, যা চাঁদের পানির অবস্থান নির্ণয়ের জন্য কাজ করবে। তবে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলাররা এর সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
চাঁদ না কি মঙ্গল?
নাসার সাম্প্রতিক অভিযানের ব্যর্থতা এবং ব্যয়বৃদ্ধির কারণে সংস্থাটি চাঁদের পরিবর্তে মঙ্গলগ্রহ অভিযানে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণে এ ব্যর্থতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।