ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে অর্থনীতি

৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৩৭ শতাংশেরও কম, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, এলসি নেই, নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না, শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় অনেক ছোট-বড় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে ‘নতুন ঋণ’ চাহিদাও নেই। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের অমূলক বক্তব্যে বিপাকে পড়েছে এক ডজন ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরো দুর্বল করা হয়েছে। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ‘ড্যাপ’ বাস্তবায়নের নামে আবাসন খাতে ধস নামানো হয়েছে। জমি বিক্রি নেই, মানুষের হাত খালি, অর্থের প্রবাহ নেই।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে স্বৈরাচার হাসিনার ভারতে পলায়ন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাÐে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ও বিনিয়োগে মন্দার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময়ে সম্মেলনের নামে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা খরচ করেও বিদেশি বিনিয়োগ ছিল শূন্য। আরো উদ্বেগের বিষয়Ñ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সা¤প্রতিক ‘এফডিআই হিটম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশীয় শিল্পের জন্য কাঠামোগত বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে প্রচারণার ঘাটতি আছে। এতে আরো বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগের মাত্র ৪৫ শতাংশ প্রকৃত অর্থে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। বেশির ভাগই আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ বা পুনঃবিনিয়োগ। যা দেশের জন্য উদ্বেগজনক। এমনকি কয়েক দিন আগেও দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করা হয়েছে। এর ফলাফল নিয়েও সংশয় রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তৎপরতায় বিভিন্নভাবে বিনিয়োগের জন্য আমরা আশ্বস্ত হচ্ছি। শুধু বড় বড় বিনিয়োগের হাতছানির খবর পাচ্ছি, কিন্তু ছিটেফোঁটা বিনিয়োগও আসছে না। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, এলসি নেই, নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না, শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় অনেক ছোট-বড় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ভালো নেই। এমনকি ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে ‘নতুন ঋণ’ চাহিদাও নেই। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের অমূলক বক্তব্যে বিপাকে পড়েছে এক ডজন ব্যাংক। দুর্বল এই ব্যাংকগুলোকে আরো দুর্বল করা হয়েছে। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ‘ড্যাপ’ বাস্তবায়নের নামে আবাসন খাতে ধস নামানো হয়েছে। জমি বিক্রি নেই, মানুষের হাত খালি, অর্থের প্রবাহ নেই। শুধু বিনিয়োগ আসবে বা হাতছানি দিচ্ছে বলা হচ্ছে। এতে রাজস্ব আহরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছাড়া বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বিনিয়োগে মন্দাদশা কাটার আপাতত কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গত ৯ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ৩৭ শতাংশেরও কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৪২ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে মার্চে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৭ শতাংশেরও কম, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৯ মাসের ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা কম। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে এখনো ‘সবুজ সঙ্কেত’ দেয়নি। অথচ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ স্বাভাবিক সময়ে আইএমএফের ঋণ পেয়েছে। এদিকে আসন্ন বাজেটও আগের ধারাবাহিকতা বা গতানুগতিক বাজেট। এই সরকার যে বাজেট বাস্তবায়ন করছে, সেটি মূলত আগের সরকারের তৈরি। এতে কাক্সিক্ষত সংস্কার প্রতিফলিত নেই। এসব সঙ্কটের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুতে (জুলাই) সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেও ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র তিন লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে জুনের মধ্যে সংশোধিত বাজেটের আকার অনুযায়ী অবশিষ্ট চার লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এদিকে অর্থ ব্যয় না হওয়ার শঙ্কায় চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট থেকে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এতে সংশোধিত বাজেটের আকার সাত লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। মোট কথা, আর্থিক খাতের সব সেক্টরেই দুরবস্থা বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে উৎসাহ ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন। তারা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিসহ বেশ কয়েকটি বাধার কথা বলছেন। একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠান যোগাযোগহীনতার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। যার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে আগে দেশি বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে হবে, বাড়াতে হবে। দেশের ভেতরে থাকা মন্দাবস্থা আগে দূর করতে হবে। তাহলে বিদেশিরা বিনিয়োগে উৎসাহ পাবে। তবে এ জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনকশা থাকা আবশ্যক বলে মনে করেন তারা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি রফতানি বাজার ধরতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা পদক্ষেপ নিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশে দেশে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ ৯০ দিন স্থগিতের ঘোষণা দেয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এ নিয়ে পৃথক পরিকল্পনা নিতে হবে সরকারের।
দেশের অর্থনৈতিক খাতে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পনা স্থগিত করলেও বিকল্প কোনো মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক রূপরেখা উপস্থাপন করেনি, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে এবং নীতির ধারাবাহিকতা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই সরকার আগের সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা স্থগিত করেছে কিন্তু তার বদলে কোনো নতুন পরিকল্পনা দেয়নি। এতে করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় পড়েছেনÑ সরকারের মেয়াদ, নীতির স্থায়িত্ব বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তারা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তিনি জানান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি অর্থনীতির বিভিন্ন খাত বিশ্লেষণ করে মানদÐ (বেঞ্চমার্ক) স্থাপন করেছে, তবে সেখান থেকে আগামী ছয় মাস বা এক বছরে কোথায় পৌঁছানো হবে, সে বিষয়ে কোনো লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেনি। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য চলতি অর্থবছরের বাজেট নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই সরকার যে বাজেট বাস্তবায়ন করছে, সেটি মূলত আগের সরকারের তৈরি। এতে কাক্সিক্ষত সংস্কার প্রতিফলিত হয়নি, ফলে এর ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম যথাযথভাবে মূল্যায়ন করাও কঠিন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৯ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ সাত হাজার ৬১২ কোটি টাকা। আগের একই সময়ের চেয়ে ব্যয় কমেছে ২৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। একক মাস মার্চে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ব্যয় গত বছরের মার্চে ছিল ২২ হাজার ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের হিসাবে মার্চে উন্নয়ন ব্যয় গত বছরের মার্চের চেয়ে ছয় হাজার ৬৭২ কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরে এক হাজার ৩২৭টি প্রকল্প, ১৭টি উপপ্রকল্প ও উন্নয়ন সহায়তা থোক হিসেবে ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের বিপরীতে মূল এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। তবে বাস্তবায়নে স্থবিরতার কারণে এডিপি সংশোধন করে সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার রেকর্ড পরিমাণ ছোট করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ব্যয় কমানো হয়েছে ১৮ শতাংশ বা ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এতে আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে বাংলাদেশ তার সমজাতীয় এবং রফতানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দীর্ঘদিন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে আছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আনতে বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে। রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল করেছে অনেক আগেই। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করে নতুন করে চেষ্টা করছে। কিন্তু এফডিআই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের মোট এফডিআইর পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম।
এমনিতে বাংলাদেশে খুব অল্প পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তার মধ্যে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য অঙ্কের পুঁজি প্রত্যাহার হয়। এতে দেখা যায়, নিট বা প্রকৃত এফডিআইর পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশ সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার বড় সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে গেছে। এখনো সঙ্কট চলছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারে ধারাবাহিক পতন রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও খুব কম। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারলে এ সমস্যার অনেকটাই কাটানো যেত।
আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্ট-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। ওই বছর ভিয়েতনামে এফডিআই আসে এক হাজার ৮৫০ কোটি ডলার। ভিয়েতনাম রফতানি বাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ। তারা বিদেশি বিনিয়োগ এনে রফতানি খাতে ব্যাপক বৈচিত্র্য এনেছে। অথচ বাংলাদেশ বছরের পর বছর তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
অর্থবছর অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এফডিআইর পরিসংখ্যান তৈরি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট এফডিআই আসে ৪১৯ কোটি ডলারের। এর মধ্যে পুঁজি প্রত্যাহার হয়েছে ২৭৭ কোটি ডলারের। নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১৪২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের এক মাসে আসা রেমিট্যান্সের অর্ধেকেরও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ ব্যালান্স অব পেমেন্ট প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ৮২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে একই সময়ে ১০৩ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ দেশে ব্যবসায় পরিবেশ তথা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো পাঁচটি বড় বাধা রয়েছে। এগুলো হলোÑ বিদ্যুতের সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য ও উচ্চ করহার।
আইএফসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ (২০২৩)। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে গতি প্রত্যাশা করে তার বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগের হার অপর্যাপ্ত। বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করছে না। যে বিনিয়োগ আসছে, তা মূলত দেশে ব্যবসারত বিদেশি কোম্পানিগুলোই করছে। নতুন কোম্পানি কম আসছে।
এবিসি রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রাবন্তী দত্ত বলেন, ঢাকা শহরে জমির অতিরিক্ত দামের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে আবাসন সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি চলে যায় জমির খরচ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে আবাসন কোম্পানিকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া, দীর্ঘমেয়াদে মর্টগেজ (জামানত রেখে ঋণ) সুবিধা দেয়া, করছাড়, প্রণোদনাসহ বেশ কিছু নীতিসহায়তা প্রয়োজন। এছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণে যে সব সমস্যা আছে তার সব সমস্যাই সমাধানযোগ্য।
বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ কম থাকার পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতা। কিছু পুরোনো আইন-কানুনের সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ বিশেষত মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ কিছু কারণ বিদেশি বিনিয়োগে বাধার সৃষ্টি করছে।