Hot

দখলের ‘রাক্ষস’ আবুল খায়ের গ্রুপ

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ। সফলতার আড়ালে গ্রুপটির বেপরোয়া দখল, লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতি আর রাজস্ব ফাঁকির চিত্র রীতিমতো ভরকে যাওয়ার মতো। ক্ষমতা, পেশিশক্তি আর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ‘নেকনজরে’ ভর করে গ্রুপটি দুর্নীতিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে এখন ‘রাক্ষুসে’ রূপ ধারণ করেছে। দেশজুড়ে শুধুই দখলের সাম্রাজ্য।

শিল্প স্থাপনের নামে বন-বাদাড়, পাহাড়, নদী, খাল-বিল, লোকালয়, মন্দির-মসজিদ সবই এ গ্রুপের পেটে

দখলের ‘রাক্ষস’ আবুল খায়ের গ্রুপ

গিয়ে ‘হালাল’ হয়েছে। এই গ্রুপের দখলের হাত যতটা লম্বা, ততটাই ছোট সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার তালিকা। দেশের মানুষ ও সরকারকে ঠকিয়ে দুহাত ভরে টাকা কামিয়ে গ্রুপটি সেই টাকাও পাচার করেছে সিনেমা স্টাইলে। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারকে ‘ম্যানেজ’ করে পার পেলেও এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ঠিকই ফেঁসে যাচ্ছে আবুল খায়ের গ্রুপ।

সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজর এখন জমিখেকো এই গ্রুপটির দিকে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ১৯৫২ সালে বিড়ির ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু আবুল খায়ের গ্রুপের। সময়ের বিবর্তনে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্প গ্রুপটি এখন স্টিল মিল, সিমেন্ট, সিরামিক, ঢেউটিন, দুধ, সিগারেট ও বিভিন্ন নিত্যপণ্য নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে।

যেকোনো সফলতার পেছনে পরিশ্রম, মেধা ও দক্ষতাই মূল হাতিয়ার হলেও আবুল খায়ের গ্রুপ হেঁটেছে ‘শর্টকাট’ রাস্তায়, অন্ধকার গলিপথ ধরে। ক্ষমতার দাপটে গরিবের ভিটাবাড়ি দখল থেকে এ গ্রুপের থাবা থেকে বাদ যায়নি উপাসনালয়ও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫২ হাজার বর্গমাইল দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবুল খায়ের গ্রুপের দস্যুতা, ভূমি দখলের সব উদাহরণ। খেটে খাওয়া মানুষের কান্নার নোনাজল উপেক্ষা করে এসব অপরাধ করেও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘ম্যানেজ’ করে সব অপকর্মকে হালাল করে নিয়েছিল তারা। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে আবুল খায়ের গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্টই সাধারণ মানুষের রক্ত, কষ্ট আর ঘামের বিনিময়ে কেনা ও পৈতৃক সম্পত্তির অন্তত ৬০০ বিঘা জমি হাতিয়ে নিয়েছে।

সেখানে এই প্রতিষ্ঠানের নিজের জায়গা মাত্র ২০ বিঘা। শিল্পায়নের নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ সোনাইছড়ি এবং মাদামবিবির হাট এলাকায় দুটি খাল গিলে ফেলেছে আবুল খায়ের স্টিল ও এই গ্রুপের গরু মার্কা ঢেউটিন। গাজীপুরের কালীগঞ্জে এই গ্রুপের দস্যুতার মধ্যে পড়েছে সরকারি খাসজমি, হালট, নদীর জমি থেকে শুরু করে মসজিদ-মন্দিরের জায়গাও। বালু ফেলে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা। এই এলাকায় অন্তত ৭০ বিঘা জমি গিলে ফেলেছে গ্রুপটি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে তাদের জুলুম।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, শাহ সিমেন্টের দখলে রয়েছে মিরেরসরাই ৭২ মৌজার এসএ ৪৫৫, আরএস ৩৬৯, ১০ খতিয়ানের এসএ ৩৭৯, ৩৮০, ৩৮১, ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৪, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৮৭, ৩৮৮, ৩৮৯, ৩৯০, ৩৯১, ৩৯২, ৩৯৪, ৩৯৫, ৩৯৬, ৪০২ থেকে ৪১৭ প্রভৃতি অসংখ্য দাগের সম্পত্তি। এ ছাড়া ৭৩ মৌজাতেও দখল করে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি।

রেকর্ডীয় তথ্যানুযায়ী, আবুল হোসেন দেওয়ান বিগত ২০০১ সালের ২১ মে তারিখের ১৯৯৩ নম্বর দলিলে ১২৮.৮৯ শতাংশ, ২০২০ সালের ৩০ মের দলিলে ৩৫৭ শতাংশ এবং ৩২ জানুয়ারি ২০০১-এর দলিল ৪০২ নম্বরের ২৭৭ শতাংশ, ২৫ জুন ২০১২ তারিখের ৪৮০৭ নম্বর দলিলের ৫০৯.২৫ শতাংশ ও ২৯ মে ২০০৫ সালের ২২০৪ নম্বর দলিল অনুযায়ী ১১০ শতাংশ জমির মালিক। মিরেরশরাই ৭২ নম্বর মৌজায় সর্বমোট জমির পরিমাণ ১৩৮২.১৪ শতাংশ। কিন্তু আবুল হোসেনের পুরো জমিই এখন শাহ সিমেন্টের দখলে।

আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার তোয়াক্কা না করে কালীগঞ্জ পৌরসভার বালিগাঁও মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অনুমানিক প্রায় ৮০ একর ফসলি জমিতে কারখানা বানিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। কারখানার পাশে আরএস ২০৮৭ দাগে ৪৫ শতাংশ জমিতে একটি সরকারি হালট এবং নদীর ৩ একর জমি ছিল। ওই সব জমি দখলে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। হালট দখল করায় ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াত, নদীতে গোসল, মাছ ধরাসহ যাবতীয় কাজে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে সরকারি হালট উদ্ধারের জন্য ২০১৫ সালের ২৩ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। কিছুদিন পর পুনরায় পুরো হলট দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে আবার দখলে নেয় আবুল খায়ের গ্রুপ।

২০১৯ সালের ২ জুলাই আবুল খায়ের গ্রুপের অবৈধভাবে দখলে থাকা কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত আরএস ৪৭ দাগের ১ একর ৭৩ শতাংশ (প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা) সরকারি জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করেন তত্কালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই জমিতে ইকো পার্ক স্থাপনের ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুই দিকে টিনের শেড তৈরি করে পার্কের জমি দখলে রেখেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। এ ছাড়া প্রাচীরের ভেতরে টিন দিয়ে ছোট একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। অবৈধভাবে দখলে নেওয়া ১ একর ৭৩ শতাংশ (প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা) সরকারি জমি ওই ঘরে বসেই পালাক্রমে পাহারা দেন আবুল খায়ের গ্রুপের নিযুক্ত আনসার সদস্যরা।

এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগীরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইলেও কোনো কাজে আসেনি। পুলিশও পালন করেছে নীরব দর্শকের ভূমিকা। জমির বিষয়ে কোনো কথা বললে বা আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা এবং থানা পুলিশের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানি করার নজির ভূরিভূরি। এই গ্রুপ এতটাই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিল যে দিনে-দুপুরেও তারা প্রকাশ্যে বালু ফেলে জমি দখল করেছে। ভেঙে দিয়েছে মানুষের ঘর-বাড়ি।

আবুল খায়েরের দস্যুতা শুধু সরকারি ও ব্যক্তির জমি দখলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দখলের নেশায় আবুল খায়ের সিরামিক মসজিদ ও মন্দিরের জমিও দখল করেছে। গাজীপুরের স্থানীয় মুসল্লি আব্বাস উদ্দিন বলেন, বালীগাঁও মৌজায় বালীগাঁও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নামে আরএস ২০৮৮ ও ২১১৫ দাগে আধা বিঘা জমি ছিল। মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে হাত করে ওই জমিতে বালু ফেলে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলে আবুল খায়ের সিরামিক। একাধিকবার সালিস-দরবার করেও জমি উদ্ধার করতে পারেননি মুসল্লিরা।

বালীগাঁও জয়দেববাড়ী সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুকোমল চন্দ্র দাস অভিযোগ করেন, কারখানার পাশে মন্দিরের বিশাল একটি পুকুর ছিল। প্রাচীন ওই পুকুরে পূজা-পার্বণের ক্রিয়াদি সম্পন্ন করা ছাড়াও দেবদেবী ও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো। একপর্যায়ে বালু ফেলে ওই পুকুরও ভরাট করে আবুল খায়ের গ্রুপ। ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে জানানো হয়। তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে পুকুর দখলমুক্ত করতে তিনি গত ১৯ মে মন্দির পূজা পরিচালনা কমিটি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ দায়েরের পর কম্পানির লোকজন ভয়ভীতি দেখালে তিনি নীরব হয়ে যান।

বিস্তর অভিযোগ জমা পড়লেও প্রশাসনের ভূমিকা খুব একটা চোখে পড়েনি। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী (ফোরশোর) জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগে ২০২০ সালের ২১ আগস্ট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। তখন ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’ অনুযায়ী আবুল খায়ের গ্রুপকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া অবৈধভাবে নির্মিত ওই স্থাপনা দুই মাসের মধ্যে অপসারণ করে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সরায়নি প্রতিষ্ঠানটি। একই জমি ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নদীর জমিতে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল।

এদিকে পেট্রোবাংলার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে তিনটি সংযোগে লোড দ্বিগুণ করে নেওয়ার পাশাপাশি ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার বকেয়া বিলের তথ্য গোপন করেছে গ্রুপটি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৮ মে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হলেও নিরাপত্তা জামানত পরিশোধের দিন অর্থাত্ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত লোড কার্যকর করে রাজস্ব ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে ন্যূনতম মাসিক গ্যাস বিল যথাযথভাবে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিক্রয় জোন-৮ থেকে আবুল খায়ের স্টিল লিমিটেডের শিল্প খাতের ও ক্যাপিটিভ খাতের আলাদা দুটি ছায়ানথি উপস্থাপন করা হয়। রাজস্ব ডিপার্টমেন্টের হিসাবের আলোকে সংশোধিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে ন্যূনতম বিলের ভিত্তিতে ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে পাওনা চার কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৮ টাকা এবং শিল্প খাতে পাওনা সাত কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬ টাকা। এ টাকা আদায়ের জন্য জোন-৮ থেকে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গ্রাহককে পত্র দেওয়া হয়।

নথি চলাচলের রেজিস্টার থেকে দেখা যায়, বিক্রয় জোন-৮-এর বহির্গমন রেজিস্টারের ৯০৪৬ নম্বর ক্রমিকে এবং বিক্রয় দক্ষিণ ডিপার্টমেন্টের আগমন রেজিস্টার ৫৩০৪ নম্বর ক্রমিকে লিপিবদ্ধ আছে। তার পরও বকেয়া পরিশোধ করছে না আবুল খায়ের গ্রুপ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও আবুল খায়ের গ্রুপের উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নির্বাহী কাউকেই পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আবুল খায়ের গ্রুপের চট্টগ্রামের শীতলপুর চৌধুরীপাড়া আবুল খায়ের গ্রুপের ফ্যাক্টরি ইনচার্জ ইমরুল কাদের ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইদানীং অভিযোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কারণ অভিযোগকারীরা আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চায়। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন যেসব অভিযোগ করেছে, তা মিথ্যা; বরং তাদের কমপক্ষে ৩০ জন আমাদের কারখানায় কাজ করেন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor