Hot

তদন্তে ধীরগতি, বাড়ছে ক্ষোভ: জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চলা নৃশংসতায় গত ৪ঠা আগস্ট রাজধানীর মিরপুর ১০-এ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিএএফ শাহীন কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শহীদ আহনাফ। আন্দোলনে যেতে বাবা-মা নিষেধ করলেও তা শোনেননি আহনাফ। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফোনে আহনাফ তার মাকে জানিয়েছিলেন তিনি মিরপুর ১০ নম্বরে আছেন। এটাই ছিল আহনাফের সঙ্গে তার মায়ের শেষ কথা। সেদিন সন্ধ্যায় একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেয়েই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আহনাফের লাশ খুঁজে পান পরিবারের সদস্যরা। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাদির কবরে পাশে দাফন করা হয় আহনাফকে।

এ ঘটনায় গত ৩রা অক্টোবর আহনাফের মা জারতাজ পারভীন সাফাত অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, পুলিশ বাহিনী সদস্যদের দ্বারা এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। যা তদন্ত সংস্থা খুঁজে বের করবে। এজন্যই নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। লক্ষ্য সন্তান হত্যার সুষ্ঠু বিচার। কিন্তু আভিযোগ দায়েরের প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হলেও মামলা হিসেবে অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালে না আসা। তদন্তের ধীরগতি। আসামিদের দ্বারা হুমকিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে আহনাফের মা-সহ জুলাই আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য একের পর এক তারিখ দিলেও কোনো রিপোর্ট দাখিল না করতে পারা, তদন্ত সংস্থার প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, বিপুলসংখ্যক অভিযোগের বিপরীতে ছোট তদন্ত সংস্থাসহ নানা কারণে মামলার তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। এসব কারণে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে আন্দোলনে নিহত পরিবার ও আহতদের মাঝে। এ ছাড়াও ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফর্মাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে, আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষের। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ায় তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নৃশংসতায় অনেকের প্রাণ চলে গেছে, আবার কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা, কেউ চোখ হারিয়েছেন। আহতদের অনেকে পঙ্গুত্ব আর অন্ধত্ব নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। হাজারেরও বেশি নিহত এবং ১০ হাজারের বেশি আহতদের আত্মত্যাগের কারণে এই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। ফলে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু মামলা করার পরে এতদিন অতিবাহিত হলেও আমার মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদ আহনাফের মা মানবজমিনকে বলেন, আন্দোলনে যেসব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো কিংবা হামলা করেছে তাদের অনেকেই এলাকায় ফিরে আসছে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দাখিলের পরে আমার বাসায় আওয়ামী লীগের লোকজন এসে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে গেছে। আমি কাদের নামে অভিযোগ দাখিল করেছি তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। পরে আমি যখন বলি এই অভিযোগের ব্যাপারে বিএএফ শাহীন কলেজে প্রশাসন এবং শহীদ আহনাফের বন্ধুরা তদারকি করছে। তখন তারা ফিরে গিয়েছে। এভাবে আর কয় দিন। আমরা দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর অগ্রগতি দেখতে চাই।

যাত্রাবাড়ীর আলোচিত হত্যাকাণ্ড শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাইকে পুলিশ খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নিউজ চ্যানেলে ব্যাপক প্রচারও হয়েছে। আমি পুলিশের ৮ জন এবং আওয়ামী লীগের ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। এই ঘটনা সবার চোখের সামনে ঘটেছে। কিন্তু আমার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের এখন পর্যন্ত কয়েকটি তারিখ দিলেও এর অগ্রগতি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। এ ছাড়াও গত ৯ই এপ্রিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নেয়ার জন্য যে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। সে ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রবিউল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৩০টি, কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩৯টি অভিযোগ কমপ্লেইন রেজিস্ট্রারভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও মিসকেস হিসেবে ২২টি মামলার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক অভিযোগের বিপরীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩ এর সেকশন (৮)১ এর অধীনে মাত্র ২৪ সদস্যর তদন্ত সংস্থা কাজ করছে। এই তদন্ত সংস্থায় অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার ৭ জন, এসিস্ট্যান্ট পুলিশ সুপার ৩ জন এবং ওসি পদমর্যাদার ১১ জন কর্মকর্তা কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের ক্যাডার র‌্যাংকের এসব কর্মকর্তা সাধারণত তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করে থাকে। কিন্তু মামলার তদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে পুলিশের এসআই কিংবা ওসিদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলেও এর উপরের র‌্যাংকের কর্মকর্তাদের তেমন অভিজ্ঞতা থাকে না। সুতরাং মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করতে থানা এবং আদালতে তদন্ত কাজের ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এসআই এবং ওসি পদমর্যাদার আরও জনবল নিয়োগ দেয়া উচিত।

এ ছাড়া এত বিপুলসংখ্যক অভিযোগের বিচার শুধুমাত্র একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। দ্রুত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ালে গতি ফিরবে বিচারকাজে। এতে সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রতিফলন ঘটবে। এদিকে ট্রাইব্যুনালে আরও আইটি এক্সপার্ট নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। বিগত সরকারের আমলে প্রায় ২০ জনের মতো জনবল ছিল। মামলার অভিযোগপত্র এবং তদন্ত রিপোর্ট লিপিবদ্ধকরাসহ যাবতীয় কাজের জন্য। কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা ট্রাইব্যুনাল এবং তদন্ত সংস্থায় মিলিয়ে ৪ জনের মতো।  এত অভিযোগ এবং তদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে আইটি সেক্টরে আরও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিলে গতি ফিরতে পারে ট্রাইব্যুনালের কাজে। 

এদিকে জুলাই আন্দোলনকে ঘিরে চলমান সহিংসতায় থানায় করা মামলার আসামিদের সহজে ধরা গেলেও ট্রাইব্যুনালের মিস কেসগুলোর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সঙ্গে সঙ্গেই খবর পেয়ে যাচ্ছে। ফলে আসামিরা পালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরপরই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে এসব তথ্য। যার কারণে প্রায় ২০ জনেরও অধিক পুলিশ কর্মকর্তা গাঢাকা দিয়েছেন। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এখানে কোনো না কোনো জায়গা থেকে ফাঁস হচ্ছে। এটা আমরা খুব উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে সম্ভবত এই ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো একটা মহল এর সঙ্গে জড়িত বা প্রসিকিউশনের মধ্যে, অফিসেও থাকতে পারে। আমরা বিষয়টাকে গভীরভাবে উদ্বেগের সঙ্গে বিশ্লেষণ করছি এবং তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি। আমরা এটার জন্য দায়ী যাকে পাবো, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের মামলায় আসামি ধরতে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা লাগবে। রুল ৬ এবং রুল ৯ অনুযায়ী পরোয়ানা ছাড়া ধরা যাবে না আসামিদের। ফলে যখন ট্রাইব্যুনাল থেকে কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় তখন ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ এটা ফাঁস করছে। ফলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা আসামিদের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া। কিন্তু থানার মামলাগুলোর ব্যাপারে এমন বিধি-নিষেধ না থাকার কারণে যখনই আসামিদের অবস্থানের তথ্য পাওয়া যায় তখনই তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে। এজন্য ট্রাইব্যুনালের বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের মত বিশ্লেষকদের।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বক্তব্য: এসব অভিযোগের ব্যাপারে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করছি, জুলাই আন্দোলনে কিছু আহত এবং শহীদ পরিবার ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও বিচার কাজের ধীরগতি সহ বিভিন্ন অভিযোগ তাদের। কিন্তু আমরা যথন ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্তে তাদের সাক্ষী হিসেবে ডাকি তখন তারা আসে না। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মামলার তদন্ত হচ্ছে না, বিচারের কিছুই হচ্ছে না, কেন আমাদেরকে টাকা দেয়া হচ্ছে না, আমাদেরকে কেন বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না সহ নানা অভিযোগে বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু বিচারের কাজে সহায়তার জন্য ডাকলে তারা আসছে না। তারা সাক্ষী দেয়ার জন্য কিংবা তাদের কাছে রক্ষিত গণহত্যার অডিও-ভিডিও চাইলে তারা দেয় না। আমরা প্রায় ১০০০ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষী নিয়েছি। আমরা এগুলো পর্যালোচনা করে দেখবো, কার সাক্ষী বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে ডাকবো।

তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা অন্য সব মামলার মতো নয়। এর প্রসেডিং থানায় করা মামলার মতো না। আমরা জুলাই-আগস্টে বিভিন্ন স্পটে যে গণহত্যা হয়েছে, ঐসব স্পটে তখন যারা কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেছে। যার র্নিদেশ মতো গুলি চালিয়েছে, শেখ হাসিনাসহ সব আসামির বিরুদ্ধে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা ঐ দিন কারা স্পটে ছিল তদন্ত করে তাদের নাম বের করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্তে মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় সিনিয়র অফিসার দিয়ে মামলার তদন্ত করা হয়। সুতরাং ট্রাইব্যুনালের মামলায় ইন্স্পেক্টর পদমর্যাদার নিচের কোনো কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা নেই। তবে তদন্ত সংস্থার জনবল বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারকে কিছু রিকোয়ারমেন্টের কথা বলেছি, সরকার তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ছাড়াও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসছে। দ্রুতই শুরু হবে ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচার কাজ। 

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) বিধিমালা-২০১০ এর প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রক্রিয়া চলছে বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন চিফ প্রসিকিউটর। আর ট্রাইব্যুনালেন আইটি এক্সপার্ট এর সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধের জন্য ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও তদন্ত সংস্থায় জনবল সংকট রয়েছে। আমরা এই জনবল বাড়ানোর ব্যাপারেও সরকারকে জানিয়েছি, দ্রুতই তা বাড়ানো হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo