আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করুন

এনসিপির সমাবেশ : শাহবাগ ‘ব্লকেড’ যান চলাচল বন্ধ নিষিদ্ধের রোডম্যাপ ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত রাজপথে জোরালো আন্দোলনের শপথ নেতাকর্মীদের জামায়াত, শিবির, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, খেলাফত আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন দলের একাত্মতা প্রকাশ
আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে ফোয়ারার সামনে জমায়েত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। এতে ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জুলাই ঐক্য, এবি পার্টি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জোরালো আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। যতদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়।
পাঁচটি মামলার আসামি সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার খবর নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর এনসিপি নেতারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। যেখানে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে বক্তৃতা করেন এবং সবাইকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির আন্দোলনে শরিক হতে ডাক দেন। গভীর রাতে এনসিপির প্রধান দুই নেতা নাহিদ ইসলাম ও আকতার হোসেন সেখানে হাজির হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে ফোয়ারার পাশে সমাবেশ করা হয়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে জমায়েতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মঞ্চ থেকে নানা সেøাগান দেয়া হয়। সেøাগানের এক ফাঁকে মঞ্চ থেকে মাইকে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আমাদের লড়াই মাত্র শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির ব্যাপ্তি এক দিনও হতে পারে, এক মাসও হতে পারে। যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা আসছে, ততক্ষণ আমাদের রাজপথে থাকতে হবে।
এদিকে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপিকে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ব্যতীত সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়। আজকের এই শাহবাগ ইতিহাসের অংশ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির মানদ-।’
তবে হঠাৎ করে গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এনসিপির সমাবেশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা নানা মন্তব্য করছেন। কেউ লিখেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করতে এমন কৌশল নেয়া হয়েছে। আবার কেউ লিখেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে দেয়া নিয়ে বিতর্ক ঠেকিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে এই ইস্যু নিয়ে মধ্যরাতে এনসিপি মাঠে নেমেছে।
জুমার পর তীব্র গরমের মধ্যেই মুসল্লি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই জমায়েতে যোগ দেন। জুমার নামাজের পর মঞ্চ থেকে যাদের উপস্থিত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা হাসনাত ও নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন।
এ সময় মঞ্চ থেকে ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’, ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, আওয়ামী লীগের কবর খোঁড়’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ চাই’, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই’ প্রভৃতি সেøাগান দেয়া হয়। সেøাগানের ফাঁকে ফাঁকে কেউ কেউ মাইকে বক্তৃতা করেন এবং প্রতিবাদী কবিতাও আবৃত্তি করা হয়।
এর আগে ফোয়ারা থেকে পরীবাগ অভিমুখী সড়কের ওপর কিছু আন্দোলনকারীকে রং দিয়ে বিভিন্ন সেøাগান লিখতে দেখা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে এসব সেøাগানের মধ্যে আছেÑ ‘চেয়ারের লোভ করে যে, আস্তাকুঁড়ে মরে সে’, ‘ক্ষমতা না জনতা?’, ‘জুলাই ঘোষণা? ইত্যাদি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থানের ঘোষণা দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। পরে রাত ১০টার দিক থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা হাসনাতের সঙ্গে অবস্থানে যোগ দেন। পরে রাত ১টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। এনসিপির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও রাতে বিক্ষোভে যোগ দেন। রাত ১টার পর হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু নেতাকর্মী যমুনার সামনে যান। রাত দেড়টার দিকে এবি পার্টির কিছু নেতাকর্মী যমুনার সামনে উপস্থিত হন। রাত ২টার দিকে সেখানে হাজির হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা। রাতভর বিক্ষোভ চলার পর শুক্রবার সকালে সেখানে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। যমুনার সামনে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঘোষণা দেন, বাদ জুমা যমুনার পশ্চিম পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত করা হবে।
এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সর্বদলীয় সভা ডেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে যারা গুম-খুন ও অর্থ-পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের আবারো রাস্তায় নামতে হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা বিগত ১৬ বছর ধরে হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে। আমাদের তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে দেয়নি। ভোট ডাকাতি করেছে। আওয়ামী লীগ যদি তাদের ভোটাধিকার ফেরত চায় তাহলে আমাদের ১৮ ও ১৪ সালের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আজ বাংলাদেশ দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের। তবে অবাক হচ্ছি, এখনো কেউ কেউ এই গণতান্ত্রিক দাবিকে থামানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ভালো লক্ষণ নয়। ৫ আগস্ট যারা বুলেটের সামনে বুক পেতে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, আজ তারাই এখানে এসেছে। আজো এখান থেকে বিজয় ছিনিয়ে না নিয়ে দেশের জনগণ যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে যে ছাত্র-জনতা ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেই ছাত্র-জনতা আজ দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
শাহবাগ অবরোধ : আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে টানা অবস্থানের পর শাহবাগ অবরোধ (ব্লকেড) করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে থেকে শাহবাগ চত্বরে এসে রাস্তা ‘ব্লক‘ করে দেন তারা। এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টে নিহতদের পরিবার ও আহতরা অংশ নিয়েছেন। এ সময় তারা ‘বাহ ইন্টেরিম চমৎকার, খুনিদের পাহারাদার’; ‘লীগ ধরো, জেলে ভরো’; ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’; ‘খুনি লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’; ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’; ‘ব্যান্ড করো, ব্যান্ড করো, আওয়ামী লীগ ব্যান্ড করো’; ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’ ইত্যাদি সেøাগান দিতে থাকেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা এখন থেকে রাস্তা ব্লক করব। আমরা এখান থেকে গিয়ে শাহবাগ অবরোধ করব। যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হবে না, ততক্ষণ আমরা শাহবাগ ছাড়ব না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকারের) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করব। ‘আওয়ামী লীগকে কোনো কারণে রাজনৈতিক দল বলা হয়’ প্রশ্ন রেখে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টা নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তিনি নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন! আওয়ামী লীগ কোনোভাবে রাজনৈতিক দল নয়। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল তৈরি করে এ দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে দুর্ভিক্ষের কারণে ১৫ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের হাতে এ দেশের মানুষের রক্ত লেগে আছে। আওয়ামী লীগ ভারতের সহায়তায় দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যা করেছিল।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনা ভবনের সামনে ছাত্র-জনতার আহূত সমাবেশে মিছিলসহ যোগ দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুরসহ মহানগরের নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের খুনিদের ন্যায্য বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। অন্যথায় জাতি ক্ষমা করবে না।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ : আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাধারণ জনতার অংশগ্রহণে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। জনগণের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে যমুনা ভবন যেখানে শত শত নাগরিক একত্রিত হয়ে আওয়াজ তোলে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। জনতার হাত ধরে যাত্রা এ আন্দোলনের দাবির পক্ষে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ দৃঢ় ও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় যমুনায় গিয়ে জনতার কাতারে প্রথমে অবস্থান নেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তার কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী এবং অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুনির কাসেমী, সহকারী অর্থসম্পাদক মুফতি কামাল উদ্দিন, মুফতি ইলিয়াস হামিদী, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমুদী, মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আমিন, মাওলানা শরীফ হোসাইন, মাওলানা সানাউল্লাহ খানসহ নেতৃবৃন্দ। গতকাল বাদ জুমা যমুনার সামনে সমাবেশে মিছিল সহকারে হাজির হন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
বিনাবিচারে গণহত্যাকারী আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসরদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদানের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শাপলা ও জুলাইর গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ ও বিচার করার দাবিতে এক বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান। বিবৃতিতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতাকে রাজপথ আঁকড়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা বিনাবিচারে গণহত্যাকারী আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসরদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদানের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সহ¯্রাধিক শহীদের প্রাণের বিনিময়ে ইতিহাসের অন্যতম সফল রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের বৈধতার ভিত্তিতে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু নজিরবিহীন জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও জুলাই বিপ্লবের প্রথম দাবি শাপলা চত্বর ও জুলাইর গণহত্যাকারী আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে সরকার। আমরা মানবতার শত্রু আ.লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দ্রুত নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীসহ সমগ্র ছাত্র-জনতাকে রাজপথ আঁকড়ে থাকার আহ্বান করছি।
খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা ও গণহত্যার দায়ে খুনি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার কার্যকর এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী ও মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। শুরু থেকেই খেলাফত আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে যমুনার সামনে ও শাহবাগ এলাকা অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার রাজপথে জুমার নামাজের ইমামতি করেছেন খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আবুল হাসান কাসেমী। অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি, ঢাকা মহানগর আমির মুফতি মাহবুবুর রহমান, মুফতি আবুল হাসান কাসেমীসহ অন্যান্য নেতাকর্মী।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেছেন, জুলাই রক্তের ওপর পা রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে। স্বপ্ন ছিলো সকল খুনের বিচার হবে, বিদেশে পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে, বিগত ১৬ বছরে ঘটে যাওয়া সকল গুম, খুনের বিচার হবে, সর্বোপরি ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দল নিষিদ্ধ হবে। কিন্ত আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ করছি সরকারের ৯ মাস পার হয়ে গেলেও এসবের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই! দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে আবারও বাংলাদেশ আরেকটি অভ্যুত্থানের দিকে যাবে। গতকাল শুক্রবার বিপণীবাগ পার্টি হাউজে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা-উপজেলা দায়িত্বশীল তারবিয়াতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে দায়িত্বশীল তারবিয়াতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবদিন, মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী।