ইংল্যান্ডে ৬৯ বছরে শুষ্কতম বসন্ত, খরা নিয়ে শঙ্কা

এপ্রিল মাসে ইংল্যান্ডের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা আরো নিচে।
ইংল্যান্ডে চলতি বসন্ত মৌসুমে গত ৬৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি। ফলে আসন্ন মাসগুলোতে খরার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, সংস্থাটির মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইংল্যান্ডে এপ্রিল ছিল টানা তৃতীয় মাস যখন বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কাল ছিল ১৯৫৬ সালের পর সবচেয়ে শুষ্ক।
এপ্রিল মাসে ইংল্যান্ডের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা আরো নিচে। তিন মাসের সম্মিলিত বৃষ্টির পরিমাণও বেশিভাগ অঞ্চলে ‘খুব কম’ বা ‘অস্বাভাবিকভাবে কম’ পর্যায়ে ছিল।
উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে বছরের প্রথম চার মাস ছিল ১৯২৯ সালের পর সবচেয়ে শুষ্ক।
এছাড়া মে মাসের শুরুতেও বৃষ্টিপাত ছিল অতি নগণ্য এবং মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এমন শুষ্ক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির উপপরিচালক রিচার্ড থমসন সংস্থাটির জাতীয় খরা গ্রুপের এক সভায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দশকগুলোতে গ্রীষ্মকালীন খরার ঘটনা আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের মধ্যে, কিন্তু এ বছরের শুরুতে কম বৃষ্টিপাতের কারণে খরার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’
পানি সরবরাহ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ইউকে জানিয়েছে, দেশজুড়ে শুষ্ক অঞ্চলে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি স্থানান্তর করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যে আবহাওয়া বৃদ্ধির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৮০-এর দশক থেকে ইউরোপ গড় বৈশ্বিক হারের দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হচ্ছে, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত উষ্ণ হওয়া মহাদেশে পরিণত করেছে।
ব্রিটেনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভয়াবহ ঝড়, বন্যা ও তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে রেকর্ড গড়েছিল।
খরার ফলে ওই বছর ৫০০-র বেশি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল।
ব্রিটিশ সরকারের জলবায়ু পরামর্শ সংস্থা ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিটি গত মাসে সতর্ক করে বলেছে, শুষ্ক ও উষ্ণতর গ্রীষ্মকালের দিকে ঝুঁকে পড়ার অর্থ হচ্ছে- গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ ও খরার তীব্রতা বাড়বে, একই সঙ্গে বাড়বে বৃষ্টির পানি জমে বন্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে পৃথিবী যে উষ্ণ সময় পার করছে, তা সম্ভবত গত ১ লাখ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ সময়।