ইসরায়েলের সঙ্গে কোন কোন দেশের বাণিজ্য বেশি, কী কেনাবেচা হয়

ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে গত মঙ্গলবার মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে তারা। এর এক দিন আগেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের কারণে ওই পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করার পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মঙ্গলবার ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, ইসরায়েল ও ইইউর মধ্যে একটি বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁরা।
যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েল কতটা বাণিজ্য করে
২০২২ সালের জুলাই মাসে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করে ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্য। এর লক্ষ্য ছিল—দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে বহাল থাকা বাণিজ্য চুক্তিগুলোর আওতায় যেসব খাত পড়ে না, ওই খাতগুলোয় অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করা।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত পরিসংখ্যানের ডেটাবেজ ইউনাইটেড নেশনস কমট্রেডের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ১৯৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল ইসরায়েল। সে বছর ইসরায়েলের ১১তম বৃহত্তম আমদানি অংশীদার ছিল যুক্তরাজ্য। দেশটি থেকে ইসরায়েলের আমদানি করা মূল পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জেট ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ওষুধ ও গাড়ি।
অপর দিকে, ২০২৪ সালে ইসরায়েল যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে, তার মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান অষ্টম। সে বছর যুক্তরাজ্যে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল ইসরায়েল। এর মধ্যে মূলত ছিল হীরা, রাসায়নিক পণ্য, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক।
ইসরায়েলের রপ্তানি বাণিজ্যের একটি মূল চালিকা শক্তি হলো তাদের ইলেকট্রনিকস খাত। এই খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইনটেলের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
যেসব পণ্য ইসরায়েল বেশি আমদানি–রপ্তানি করে
২০২৪ সালে ইসরায়েল ৯ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। রপ্তানি করেছিল ৬ হাজার ১৭০ কোটি ডলারের পণ্য। ইসরায়েলের আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল:
—প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রাংশ।
—প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের গাড়ি, ট্রাক, বাস ও উড়োজাহাজ।
—৮০০ কোটি ডলারের ওষুধসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য।
—৭০০ কোটি ডলারের পেট্রোলিয়াম, কয়লা, সিমেন্টসহ বিভিন্ন খনিজ পণ্য।
—৪০০ কোটি ডলারের রত্নপাথর ও গয়না।
ইসরায়েলের রপ্তানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল:
—প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রাংশ।
—১ হাজার কোটি ডলারের ওষুধসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য।
—৯০০ কোটি ডলারের পালিশ করা হীরাসহ বিভিন্ন রত্নপাথর ও গয়না।
—৭০০ কোটি ডলারের অপটিক্যাল, প্রযুক্তিগত ও চিকিৎসা–সংক্রান্ত সরঞ্জাম।
—৫০০ কোটি ডলারের খনিজ পণ্য।
ইসরায়েলের রপ্তানি বাণিজ্যের একটি মূল চালিকা শক্তি হলো তাদের ইলেকট্রনিকস খাত। এই খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইনটেলের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ইসরায়েলে মাইক্রোচিপ উৎপাদনের কারখানা রয়েছে ইনটেলের। এ ছাড়া দেশটির ইলেকট্রনিকস খাতে বড় ভূমিকা রয়েছে এলবিত সিস্টেমস ও অরবোটেকের মতো প্রতিষ্ঠানের। সামরিক–ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরির জন্য পরিচিত প্রতিষ্ঠান দুটি।
ওষুধ পণ্যের বড় রপ্তানিকারক দেশ ইসরায়েল। দেশটিতে টেভা ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বে হীরা বাণিজ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসরায়েল। বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলারের হীরা আমদানি করে তারা। এরপর পালিশ ও প্রক্রিয়াজাত করে সেগুলো আবার বিদেশে রপ্তানি করে দেশটি।
২০২৪ সালে ইসরায়েল থেকে নেদারল্যান্ডস ২৭৪ কোটি, জার্মানি ২৩৭ কোটি, ভারত ২৩১ কোটি, হংকং ২০০ কোটি, বেলজিয়াম ১৫১ কোটি, ফ্রান্স ১৪৩ কোটি, ইতালি ১২০ কোটি, ব্রাজিল ১১৫ কোটি, স্পেন ৯৭ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়া ৯১ কোটি ও জাপান ৯০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল।
যেসব দেশ ইসরায়েল থেকে বেশি পণ্য কেনে
২০২৪ সালের ৬ হাজার ১৭০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে ইসরায়েল। দেশটির পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলারের ইসরায়েলি পণ্য আমদানি করেছিল ওয়াশিংটন। এরপর আয়ারল্যান্ড ইসরায়েলি পণ্য কিনেছিল ৩২০ কোটি ডলারের। গত বছর ইসরায়েল থেকে ২৮০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল চীন।
২০২৪ সালে ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মূলত হীরা, উচ্চপ্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি), টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম ও রাসায়নিক পণ্য আমদানি করেছিল। সে বছর ইসরায়েল থেকে সবচেয়ে বেশি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আমদানি করেছিল আয়ারল্যান্ড। এর অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। আর গত বছর চীনের আমদানি করা ইসরায়েলি পণ্যের মধ্যে ছিল অপটিক্যাল সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও রাসায়নিক পণ্য।
এ ছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে ইসরায়েল থেকে নেদারল্যান্ডস ২৭৪ কোটি, জার্মানি ২৩৭ কোটি, ভারত ২৩১ কোটি, হংকং ২০০ কোটি, বেলজিয়াম ১৫১ কোটি, ফ্রান্স ১৪৩ কোটি, ইতালি ১২০ কোটি, ব্রাজিল ১১৫ কোটি, স্পেন ৯৭ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়া ৯১ কোটি ও জাপান ৯০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল।
যেসব দেশ ইসরায়েলে বেশি পণ্য বিক্রি করে
বিভিন্ন দেশ থেকে ২০২৪ সালে ইসরায়েল ৯ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। সে বছর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল চীন। যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করেছিল ৯৪০ কোটি ডলারের পণ্য।
ইসরায়েলে ৫৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে তৃতীয় অবস্থানে ছিল জার্মানি।
২০২৪ সালে ইসরায়েলে চীন মূলত রপ্তানি করেছিল ইলেকট্রিক গাড়ি, মুঠোফোন, কম্পিউটার ও বিভিন্ন ধরনের ধাতু। যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করেছিল বিস্ফোরক, হীরা, ইলেকট্রনিকস ও রাসায়নিক পণ্য। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায় ইসরায়েল। সেই অর্থ আবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনতে খরচ করে তারা। আর ইসরায়েলে ২০২৪ সালে জার্মানি রপ্তানি করেছে গাড়ি, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিকস।
এ ছাড়া ২০২৪ সালে ইতালি ৩৬২ কোটি, তুরস্ক ২৮৬ কোটি, রাশিয়া ২৩৭ কোটি, ফ্রান্স ২২০ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়া ২১৫ কোটি, ভারত ২০৭ কোটি, স্পেন ২০৭ কোটি, জাপান ১৯৪ কোটি, নেদারল্যান্ডস ১৫৩ কোটি, ভিয়েতনাম ১৪৫ কোটি ও সুইজারল্যান্ড ১৩৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল ইসরায়েলে।