Bangladesh

ইউনূসকে বিচারের নামে সরকারের প্রতারণা অবসানের সময় এসেছে: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শ্রম আইনকে অস্ত্র বানানো বন্ধ করতে হবে এবং অবিলম্বে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। এমন দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেছে, বিচারের নামে সরকারের এই প্রতারণা অবসান করার সময় এসেছে।

গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূস কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। শ্রম আইন ২০০৬ এর অধীনে তিনি বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন। ওই বোর্ডের অন্য তিন সদস্যও (আশরাফুল হাসান, নূরজাহান বেগম, মোহাম্মদ শাহজাহান) একই অভিযোগে অভিযুক্ত।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫০টিরও বেশি মামলার মধ্যে এটিও একটি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বাস করে, ‘সিভিল ও এডমিনিস্ট্রেটিভ’ অঙ্গনের বিষয়গুলোর জন্য মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে তা শ্রম আইন এবং বিচার ব্যবস্থার নির্লজ্জ অপব্যবহার। এগুলো তার কাজ এবং ভিন্নমতের প্রতি রাজনৈতিক প্রতিশোধেরই একটি রূপ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কাল্লামার্ড বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের মামলাটি বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিপর্যস্ত অবস্থার প্রতীক, যেখানে কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতা খর্ব করেছে এবং সমালোচকদের বশ্যতা স্বীকার করতে বুলডোজার চালিয়েছে। আইনের অপব্যবহার এবং প্রতিহিংসার নিষ্পত্তির জন্য বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার অসঙ্গত। ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি’ সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলোর সাথেও তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশও একটি স্টেট পার্টি। বিচারের নামে সরকারের এই প্রতারণা অবসান করার সময় এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার প্রকাশ্যে মুহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করেছেন উল্লেখ করে বলা হয়ঃ ২০১১ সালে, তিনি তাকে “দরিদ্রদের রক্ত ​​চুষে নেওয়ার” জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।

২০২২ সালে তিনি তাকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের “তহবিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করার” জন্য পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। অতি সম্প্রতি তিনি বলেছেন, “অনেক নোবেল বিজয়ী এখন কারাগারে” এবং “আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে”। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, ইউনূসকেও কারারুদ্ধ করা হতে পারে।
মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যেরকম অস্বাভাবিক গতিতে বিচারকাজ চলছে তা বাংলাদেশের অন্যান্য শ্রম অধিকার-সম্পর্কিত মামলাগুলোর তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত। এর মধ্যে রয়েছে ২০২২ সালে বিএম কন্টেইনার ডিপো এবং ২০২১ সালে হাসেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে যে, নিয়োগকর্তাদের অবহেলা এবং নিরাপত্তার মান না মেনে চলার কারণে প্রায় ১০০ জন কারখানা শ্রমিক মারা গিয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই, কোম্পানির মালিকদের কোনো ধরনের অপরাধমূলক দায়বদ্ধতার সম্মুখীন হওয়ার কথা শোনা যায় নি। সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়েই তাদের জবাবদিহিতা এড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশে কাজের অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে এমন একটি এনজিও হলো ‘সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি’। সংস্থাটির মতে কর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা এখনো অনেক দূরের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। তারা ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪,৭০০ জনেরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু রেকর্ড করেছে।

অ্যাগনেস কাল্লামার্ড বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিরলস দুর্নাম রটানো এটাই দেখায় যে বর্তমান সরকার ৮৩ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ীকে হয়রানির মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে কতোটা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

যারা শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করছে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু, মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য শ্রম আইন এবং ফৌজদারি বিচারের অপব্যবহার না করে, কর্তৃপক্ষের উচিত শ্রম অধিকারের ব্যাপক হুমকি যেমনঃ অনিরাপদ কারখানাসমূহ, যেগুলো বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিকের জীবন নাশ করে চলেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার দিকে মনোনিবেশ করা।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার পটভূমি ব্যাখ্যা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছেঃ মামলায় গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির নাম নেই। এতে তার সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত কেবল তিনজন পরিচালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে মামলাটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইউনূসকে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের লক্ষ্যে করা হয়েছে। অভিযুক্ত পরিচালকদের কেউই কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন না। ২০২৩ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এক বিবৃতি জারি করে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যান্য ভিন্নমতের কণ্ঠের প্রতি হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online