Trending

সর্বাধিক বিক্রীত ১০ বৈদ্যুতিক গাড়ি

জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশদূষণ ও জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা ও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব গাড়ি হিসেবে এক দশক ধরে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার যথেষ্ট বিকশিত হয়েছে। টেসলা, বিওয়াউডি, বিএমডব্লিউ, হুন্দাই, মার্সিডিজসহ বিশ্বের বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে পরিবেশবান্ধব যান তৈরির জন্য বড় আকারের বিনিয়োগ করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) ‘গ্লোবাল ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল আউটলুক ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ নিয়ে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাস জানুয়ারি-মার্চে বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইলেকট্রিক্যাল ভেহিক্যাল (ইভি) বিক্রি ২ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৩৫ লাখের বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। ২০২৪ সালে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি। শুধু চীনে ২০২৪ সালে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে, যা দুই বছর আগে পুরো বিশ্বে বিক্রি হওয়া মোট বৈদ্যুতিক গাড়ির চেয়ে বেশি।

বিশ্বে ২০২৪ সালে সর্বাধিক বিক্রীত ১০ ইভি

২০২৪ সালে বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইলেকট্রিক্যাল ভেহিক্যাল (ইভি), বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত (বিইভি) ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড (পিএইচইভি) গাড়ি বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মডেলগুলো নিয়ে একটি পরিসংখ্যান তৈরি করেছে ‘অটোভিস্তা টুয়েন্টি ফোর’।

গত বছর ব্যাটারিচালিত (বিইভি) ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড (পিএইচইভি) উভয় ধরনের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন তথা নিবন্ধনে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

প্লাগ-ইন হাইব্রিড (পিএইচইভি) গাড়ির সরবরাহ আগের বছরের তুলনায় ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ লাখ ইউনিটে। অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত গাড়ির (বিইভি) রেজিস্ট্রেশন বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। এই গাড়ির মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ইউনিট।

যুক্তারাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান. টেসলার ‘মডেল থ্রি’ বৈদ্যুতিক গাড়ি

যুক্তারাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান. টেসলার ‘মডেল থ্রি’ বৈদ্যুতিক গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত

১. টেসলার ‘মডেল ওয়াই’

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বৈদ্যুতিক গাড়ি ছিল টেসলা মডেল ওয়াই। গাড়িটি ব্যাটারিচালিত। টানা তৃতীয়বারের মতো এই গাড়ি শীর্ষস্থানটি ধরে রাখল। একমাত্র ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি হিসেবে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়াসহ বিশ্ববাজারে ১১ লাখের বেশি বিক্রি হয়েছে। গাড়িটিতে একসঙ্গে সাতজন যাত্রী বহনের সুবিধা রয়েছে। এই গাড়িতে ডুয়াল মোটর অল-হুইল ড্রাইভ প্রযুক্তি রয়েছে। গাড়িটিতে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৬০ থেকে ৬৮ কিলোওয়াট। গাড়িটি এক চার্জে সর্বোচ্চ ৫৩৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিবেগে চালানো যায় টেসলার এই বৈদ্যুতিক গাড়ি।

২. টেসলার ‘মডেল থ্রি’

গত বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ লাখ ২৯ হাজার ১৭০টি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে টেসলার মডেল থ্রি, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির মোট বাজারের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। মাঝারি আকারের এই সেডান গাড়ি ২০১৭ সালে বাজারে আনে টেসলা। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বৈদ্যুতিক গাড়ি। এটিই প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি, যা বিশ্বব্যাপী ১০ লাখ বিক্রির মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। ২০২৪ সালে টেসলার মডেল ৩ গাড়ি বিক্রি হয়েছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার ২৯০টি। গাড়িটি এক চার্জে সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এই গাড়ি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬২ কিলোমিটার গতিবেগ তুলতে পারে।

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির ‘সিগাল’ মডেলের গাড়ি

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির ‘সিগাল’ মডেলের গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত

৩. বিওয়াইডির ‘সিগাল’

তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীনের বিওয়াইডি ‘সিগাল’। ২০২৩ সালে গাড়িটি বাজারে আনে বিওয়াইডি। ২০২৪ মডেলটি ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৯৮ ইউনিট বিক্রি হয়, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির মোট বাজারের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এতে পাঁচজন যাত্রী একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারেন। এটি বিওয়াইডির সবচেয়ে কম মূল্যের বৈদ্যুতিক গাড়ি। এই গাড়ির ব্যাটারির ক্ষমতা ৩০ দশমিক শূন্য ৮ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে ৩৮ দশমিক ৮৮ কিলোওয়াট পর্যন্ত। এক চার্জে ৩০৫ থেকে ৪০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে গাড়িটি। প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারে এটি।

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির ‘অ্যাট্টো ৩’ মডেলের গাড়ি

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির ‘অ্যাট্টো ৩’ মডেলের গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

৪. বিওয়াইডি ‘অ্যাট্টো থ্রি’

চতুর্থ স্থান পাওয়া বিওয়াইডির ‘অ্যাট্টো থ্রি’ মডেলের গাড়িটি ২০২৪ সালে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৬ ইউনিট বিক্রি হয়েছে, যা মোট বাজারের ৩ দশমিক ১ শতাংশ। সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক এই এসইউভি এক চার্জে ৪১০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। বিওয়াইডি ব্লেড ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে এই মডেলে, যা দ্রুত চার্জ হওয়ার সুবিধা এবং উন্নত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার।

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং হংগুয়াং মিনি ইভি’ মডেলের গাড়ি

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং হংগুয়াং মিনি ইভি’ মডেলের গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

৫. সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং হংগুয়াং মিনি ইভি’

তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাইক জেনারেল মোটরস ব্র্যান্ডের উলিং হংগুয়াং মিনি ইভি। বিশেষ করে শহরে চলাচলের উপযোগী ছোট আকৃতির এই গাড়ি বেশ জনপ্রিয় ছিল। ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৮২টি ইউনিট, যা মোট বাজারের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এক চার্জে গাড়িটি ১২০-১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির ‘ডলফিন’ মডেলের গাড়ি

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির ‘ডলফিন’ মডেলের গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

৬. বিওয়াইডির ‘ডলফিন’

তালিকার ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে চীনের বিওয়াইডি ডলফিন। ২০২৪ সালে এই মডেলের ২ লাখ ১৭ হাজার ১৮টি ইউনিট বিক্রি হয়েছে, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের ২ শতাংশ। এটি একটি হ্যাচব্যাক মডেল। তুলনামূলক কিছুটা কমদামি হওয়ায় এশিয়ার বাজারে গাড়িটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গাড়িটির দাম ১৩ হাজার ৮৬৫ মার্কিন ডলার। এতে রয়েছে ৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি, যা একবার চার্জ করলে ৪২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার।

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং বিংগো’ মডেলের গাড়ি

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং বিংগো’ মডেলের গাড়িছবি: নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে

৭. সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং বিংগো’

এই তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনা গাড়ি নির্মাতা সাইক জেনারেল মোটরসের ‘উলিং বিংগো’ মডেলের গাড়ি। ২০২৪ সালে বৈদ্যুতিক এই গাড়ির ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৮১ ইউনিট বিক্রি হয়েছে, যা এই খাতের মোট বাজারের ২ শতাংশ। এটি মূলত হ্যাচব্যাক ধরনের শহুরে বৈদ্যুতিক গাড়ি। গাড়িটি এক চার্জে ৪০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুয়াংজু অটোমোবাইলসের ‘এইওন ওয়াই’ মডেলের  গাড়ি

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুয়াংজু অটোমোবাইলসের ‘এইওন ওয়াই’ মডেলের গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

৮. গ্যাকের ‘এইওন ওয়াই’

অষ্টম স্থান পেয়েছে চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুয়াংজু অটোমোবাইলসের ‘এইওন ওয়াই’ মডেল। ২০২৪ সালে এই গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৬টি, যা এই খাতের মোট বাজারের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি মূলত একটি এসইউভি ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি। এতে রয়েছে ৬৩ দশমিক ২ কিলোওয়াট ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি, যা একবার চার্জে ৪৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।

জার্মান গাড়ি কোম্পানি ফক্সওয়াগনের ‘আইডি ৩’ মডেলের গাড়ি

জার্মান গাড়ি কোম্পানি ফক্সওয়াগনের ‘আইডি ৩’ মডেলের গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

৯. ফক্সওয়াগনের ‘আইডি ৩’

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর মধ্যে নবম স্থানে রয়েছে জার্মান কোম্পানি ফক্সওয়াগনের ‘আইডি ৩’ মডেল। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক বাজারে আইডি ৩ মডেলের গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৯টি ইউনিট, যা মোট বাজারের ১ দশমিক ৪ শতাংশ। গাড়িটি একবার চার্জে সর্বোচ্চ ৪৩২ কিলোমিটার চলতে পারে। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ তুলতে গাড়িটির ৭ দশমিক ৪ সেকেন্ড প্রয়োজন হয়।

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চাঙ্গান ব্র্যান্ডের ‘লুমিন’ মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চাঙ্গান ব্র্যান্ডের ‘লুমিন’ মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়িছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

১০. চাঙ্গান ব্র্যান্ডের ‘লুমিন’

দশম স্থানে রয়েছে চাঙ্গান ব্র্যান্ডের ‘লুমিন’ মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি। ২০২৪ সালে এই মডেলের গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯৪টি, যা মোট বাজারের ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ব্যাটারি একবার চার্জ করা হলে এই গাড়ি সর্বোচ্চ ২১০ কিলোমিটার চলতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০১ কিলোমিটার। এটি মূলত শহরে তথা স্বল্প দূরত্বে চালানোর উপযোগী ইভি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto