International

ইরানি হাজারো ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় ইসরাইলের গোপন পরমাণু তল্লাট

জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠী এখনো স্তব্ধ। কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া নেই, শুধু নীরবতা। আর এই নীরবতাই যেন তাদের ব্যর্থতার নিশ্চুপ স্বীকৃতি।

এ যেন হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারা হলো এক আগুন ঝরা পাণ্ডুলিপি। ইরানের গোয়েন্দা বিভাগ দাবি করেছে, তারা ইসরাইলের সবচেয়ে গোপন পরমাণু ও সামরিক নথিপত্র হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তারা এখন শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে রেখেছে তেলআবিবের গোপন স্থাপনাগুলোর দিকে। একটিমাত্র নির্বাহী নির্দেশনা—তারপরই অগ্নিপিণ্ডের বৃষ্টিধারা নামবে সকল গোপনীয়তার বস্ত্র খসে “নগ্ন” হয়ে পড়া ইসরাইলের ওপর।

এই অভাবনীয় ঘোষণার পেছনে রয়েছে ইরানের স্বঘোষিত এক গোয়েন্দা আঘাত। “ইমাম মাহদির অজ্ঞাতনামা সৈনিকরা”, যারা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন, তারা যে আঘাতটি হেনেছেন, তা এতটাই গভীর ও তীব্র যে, জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠী এখনো স্তব্ধ। কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া নেই, শুধু নীরবতা। আর এই নীরবতাই যেন তাদের ব্যর্থতার নিশ্চুপ স্বীকৃতি।

ইরানের জওয়ান নেটওয়ার্কের ভাষায়, “এমন একটি ক্ষত, যা শিকড় ছড়িয়ে গেছে ইসরাইলি শাসনের অস্তিত্বের গভীরে। সময় যত এগোচ্ছে, ততই প্রকাশ পাচ্ছে এর জটিলতা এবং বিস্ময়কর দিকগুলো। আর এই গোপন হানার প্রতিটি পরত যেন সাজিয়ে দিচ্ছে ইসরাইলের ক্রমাগত পতনের রূপরেখা।”

এই অভিযানের ফলাফল হিসেবে ইরান এখন শুধু দাবি নয়, হুমকিও দিচ্ছে, যদি কেউ, বিশেষ করে ইসরাইল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার ভুল করে বসে, তাহলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে তাদের নিজেদের পরমাণু অবকাঠামো।

ইরানের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক হামশাহরি অনলাইনের কথায়, তেহরানের এই অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব গোয়েন্দা সাফল্যকে ‘আল-আকসা স্টর্ম ২’ বলে অভিহিত করেছে ইরানের সামরিক বাহিনী শীর্ষ পর্যায়। মোসাদকে ঘিরে প্রাচীন গালভরা গপ্প আছে—অভেদ্য, অতুলনীয়, ছায়ার ভিতরে এক অলৌকিক সংস্থা! তেহরান এই অভিযানের পর তা ঠুনকো কাচঘরের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, “ইদুল আজহা ও ঈদে গাদিরের মাঝামাঝি এই দিনগুলোতে, খায়বার বিজয়ী ও তাকওয়ার আদর্শ হযরত আলী-এর নামে ইরান জানায়, ইরানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সন্তানেরা যে ঐতিহাসিক অভিযান চালিয়েছে, তা একটি রক্তপিপাসু, শিশু হত্যাকারী শাসনের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছে।”

এই অভিযানে উদ্ধার করা নথিপত্র এতটাই বিপজ্জনক এবং গভীর যে, এতে রয়েছে ইসরায়েলের গোপন পরমাণু স্থাপনাগুলো নাম, অবস্থান, পরিচালকদের নাম-ধাম-পরিচয়-ছবি থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ নীল-নকশাপর্যন্ত সব কিছু। কেবল তাই নয়, পাওয়া গেছে সেইসব গবেষণা নথিও, যেখানে দেখা যায় ইসরায়েল কীভাবে মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ পরমাণুম বোমা তৈরির রাস্তা ধরে বাধাহীন এগিয়ে চলেছে।

অন্যদিকে, যেসব গবেষক এবং বিজ্ঞানীরা ইসরাইলের এইসব কর্মসূচিতে যুক্ত, তাদের অনেকেই অন্য দেশের নাগরিক। এইসব বিদেশি নাগরিকের নাম-ধাম, ঠিকানা, জাতীয়তা—সবই জানা হয়ে গেছে, সব রয়েছে এখন ইরানের হাতে।

তথ্য আছে আরও চাঞ্চল্যকর। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে, তার মূলবক্তব্য তৈরি করেছে ইসরাইল, মিথ্যা প্রতিবেদন বানিয়েছে বারবার। এবং সেইসব মিথ্যাই হুবহু ধব্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলোতেও।

আর এসব তথ্য কীভাবে ইরান হাতিয়েছে? বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের গোয়েন্দা সেনারা এমন কৌশলে প্রবেশ করেছে, যা ইসরাইলের প্রতিরক্ষার একাধিক স্তর ভেদ করে নথিপত্র সরিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছে। এতটাই নিখুঁত পরিকল্পনায় হয়েছে এই অপারেশন যে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েল জানেই না—কতদূর কী হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, কিংবা কীভাবে।

এই সাফল্যের পর ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বা সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে ঘোষণা এসেছে—“আমাদের প্রতিরোধ পরিকল্পনায় এখন পুরোপুরি যুক্ত হয়েছে ইসরাইলের গোপন পরমাণু স্থাপনাগুলো। ইরানের ওপর একটি আঘাত এলে তাৎক্ষণিক পাল্টা আঘাত করা হবে। আক্রমণের মাত্রা বুঝে পাল্টা আক্রমণের ধরন ঠিক করা হবে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে। আর প্রয়োজন কেবল একটি সিদ্ধান্ত।”

এদিকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সেপায়ে পাজদারান বা ইসলামি বিপ্লবীরক্ষী বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এক নম্র বার্তায় বলেন, এই অভিযান হল আল-কোরআনের ওই আয়াতের বাস্তব প্রতিফলন—‘অতএব আল্লাহ তাদের এমন দিক থেকে আঘাত করলেন, যেদিক থেকে তারা ধারণাই করেনি।

সালামি আরও বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের গোয়েন্দা শক্তির যে শিকড় কতটা গভীরে, তা প্রমাণ করে দিয়েছে এই অভিযান। এটি এক নতুন মাইলফলক—আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। এটি শুধু একটি গোয়েন্দা বিজয় নয়, বরং গোটাজালিম শাসকগোষ্ঠীর জন্য এক মনস্তাত্ত্বিক ধস।

এই তথাকথিত “নগ্ন ইসরাইল” যে আজ সামনে এসেছে, তা কেবল শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে—যা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্রদের দিশেহারা করে তুলবে। এক সময় যে ইসরাইল ছিল অলঙ্ঘনীয়, ধারণা তৈরি করা হয়েছিল। আজ সে ধারনা দমকা হাওয়ায় ইরানি অভিযানের দমকা হাওয়ায় উড়ে গেছেতেলআাবিব হয়ে দাঁড়িয়েছে,বিবস্ত্র, উন্মোচিত দুর্বলতা।

এখন প্রশ্ন একটাই, ইরানের সেই নির্বাহী আদেশআসবে কখন?

ক্ষেপণাস্ত্রগুলো, যার প্রতিটিতে বসনো আছে বোমা, নিশানাও তাক করা। তবুও চুপচাপ অপেক্ষার পালা।

এ যেন নিঃশব্দে বাঁশির এক দীর্ঘ টান। শূন্যতাকে চিরে শোনা যাচ্ছে— ইসরাইলের ধ্বংস আসন্ন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles