USA

চুক্তিতে রাজি না হলে ইসরায়েলি হামলা হবে ‘আরও নৃশংস’: ইরানকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের আলোচনার মধ্যেই দেশটিতে বড় হামলা চালাল ইসরায়েল। এই হামলার জন্য তেহরানকেই দুষছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষ্যমতে, পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে না নেওয়ায় এ হামলা হয়েছে। ইরানকে পরমাণু চুক্তিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, দেশটিতে আরও বড় হামলা হতে পারে।

শুক্রবার ভোররাতে ইরানের পরমাণু প্রকল্প, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এসব হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ আরও বেশ কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

এই হামলার পর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘এরই মধ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে এবং বহু মানুষ মারা গেছেন। তবে এই হত্যা এবং আরও নৃশংস হামলার পরিকল্পনা থামাতে এখনো সময় আছে। সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগে এবং একসময় পরিচিত ইরান সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে ইরানকে অবশ্যই একটি চুক্তি করতে হবে।’

এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, শুক্রবার রাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানতেন। তবে এই হামলায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ভাষ্যও একই। তিনি বলেছেন, নিজেদের সুরক্ষার জন্য ইসরায়েল এককভাবে এই হামলা চালিয়েছে। তবে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ করেছে ইরান।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে বহু আগে থেকে পশ্চিমা বিশ্বের আপত্তি রয়েছে। ইরানের দাবি, বেসামরিক উদ্দেশ্যে তারা পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। তবে তা মানতে নারাজ ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের ভাষ্য, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতেই তেজস্ক্রিয় পদার্থ সমৃদ্ধ করছে তেহরান। আর ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র এলে তা এ অঞ্চলে বড় ঝুঁকি তৈরি করবে।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে একটি পরমাণু চুক্তি করে ইরান। ওই চুক্তি অনুযায়ী ইরান নিজেদের পরমাণু প্রকল্প সীমিত করবে। এর বিনিময়ে পশ্চিমারা তেহরানের ওপর থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। নিজের প্রথম মেয়াদে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর তেহরানের সঙ্গে এ–সংক্রান্ত চুক্তি করতে আবার তৎপর হয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের নতুন আলোচনার মধ্যস্থতা করছে ওমান। এ নিয়ে ওমানের রাজধানী মাসকাট ও ইতালির রাজধানী রোমে বেশ কয়েক দফায় বৈঠক করেছে দুই পক্ষ। তবে তা থেকে চুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আসেনি। আলোচনার আগেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনিকে হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান না এলে সামরিক পথ বেছে নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করছে না এবং ২০০৩ সালে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প পুনরায় শুরু করা হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের যে মূল্যায়ন রয়েছে, সম্প্রতি তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

শুক্রবার ভোররাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর সকালে হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দেন ট্রাম্প। এর আগে বৃহস্পতিবার তিনি বলেছিলেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চান বলেও জোর দিয়েছিলেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto