International

ট্রাম্পকে এখনই যুদ্ধের মাঠে না পেয়ে হতাশ নেতানিয়াহু

ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এ যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

  • চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ২ সপ্তাহ সময় নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
  • আইআরজিসির কাছে যুদ্ধের ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি
  • ইরানের ৩ মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংসের দাবি ইসরাইলের
  • হামলা নিঃশর্তভাবে বন্ধ ছাড়া আলোচনা করবে না তেহরান
  • ইসরাইলে ঢুকল অস্ত্রবাহী এক ডজন জার্মান ও মার্কিন বিমান

ইসরাইল-ইরানের সঙ্ঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত হবে কি না সেই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানকে শর্ত মানার জন্য চাপ হিসেবে তিনি এই ঘোষণা দিলেও এতে অনেকটা হতাশ হয়েছে ইসরাইল। কেননা ইরানের পাল্টা কঠোর প্রতিক্রিয়ায় নাজুক অবস্থায় পড়া ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে দ্রুত যুদ্ধের মাঠে চাইছে। তবে এখনই ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে না পেয়ে কিছুটা মনোক্ষুণœ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ বিষয়ে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজের কলাম লেখক ও বিশ্লেষক গিডিওন লেভি বলেছেন, ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন- এমন ইঙ্গিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার জোট গভীর হতাশায় পড়েছেন। কারণ নেতানিয়াহু চান ট্রাম্প যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হন। গিডিওন লেভি সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন, এই বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে অনন্তকাল। যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এ যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। লেভি আরো বলেন, ইসরাইল যদি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষমও হয়, তবু দীর্ঘমেয়াদে ইসরাইল নিজেদের আর নিরাপদ ভাবতে পারবে না। এই বিশ্লেষক বলেন, ‘কিছুই সমাধান হবে না, কারণ ইরান তার সক্ষমতা আবার অর্জন করতে পারবে।’ তিনি আরো বলেন, ইসরাইলের আরো অনেক নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে, যেগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে না, যেমন গাজা।

এর আগে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলমান যুদ্ধ নিয়ে সর্বশেষ বার্তা জানিয়েছেন তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। লেভিট বলেন, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সঙ্ঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত থাকবে কি না- এমন খবরের মধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সাথে আলোচনা হতে পারে বা নাও হতে পারে তার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব যে আমি যাবো কি না।’

অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে ইসরাইলের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি একে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেন। ইসরাইলের দক্ষিণে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি জানান, ‘প্রায় প্রতিদিন’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেন তিনি। সঙ্ঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়, কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই অনেক সাহায্য করছে।’

আইআরজিসির কাছে যুুদ্ধের ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি : এ দিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের (আইআরজিসি) সর্বোচ্চ পরিষদের কাছে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল। সংবাদমাধ্যমটির খবরে দাবি করা হয়েছে, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাভিজানের একটি গোপন বাঙ্কারে সপরিবারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে খামেনিকে। তার সাথে তার প্রভাবশালী ছেলে মোজতবা খামেনিও রয়েছেন।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ টার্গেট, তবে আপাতত তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই না বেসামরিক মানুষ বা আমেরিকান সৈন্যদের দিকে আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতা হস্তান্তরের এ পদক্ষেপ একটি সম্ভাব্য ‘প্রি-এম্পটিভ ট্রান্সফার অব অথরিটি’, যার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কমান্ড কাঠামো অক্ষুণœ রাখা যাবে, যদি খামেনি নিহত হন।

এদিকে ইসরাইল-ইরান চলমান সঙ্ঘাতের অষ্টম দিনে উভয় পক্ষ একাধিক হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িয়েছে। ইসরাইলের একাধিক আক্রমণে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এর পাল্টা জবাবে ইরানও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল যদি হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে ইরান আগের চেয়ে আরো কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। ইরানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সবসময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ অনুসরণ করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন জায়নবাদীরা সন্ত্রাসী আগ্রাসন বন্ধ করবে এবং স্থায়ীভাবে তা বন্ধ রাখার গ্যারান্টি দেবে।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র বানচাল : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিকে হত্যার একটি ইসরাইলি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়েছে দেশটির গোয়েন্দারা। ইরান সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তেহরানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিকে হত্যায় ইসরাইলের বড়সড় চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়াদিনের খবর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেইন রাঙ্গবারান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের মাধ্যমেই এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এই হত্যাচেষ্টাকে ‘বড় চক্রান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, দেশটির গোয়েন্দা বাহিনীর ‘অজানা সৈনিকেরা’ এই গুরুতর আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।

এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন আব্বাস আরাকচি জেনেভায় জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য নিয়ে গঠিত ইউরোপীয় ত্রয়ীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে ইরান ও ইসরাইলি দখলদার শাসনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে রাঙ্গবারান সরাসরি এই হত্যাচেষ্টার সাথে আরাকচির কূটনৈতিক তৎপরতার যোগসূত্র স্থাপন করেন। তিনি ইঙ্গিত দেন, ইসরাইল এই গুপ্তচর হামলার মাধ্যমে ইরানের অবস্থান দুর্বল করতে চেয়েছিল। রাঙ্গবারান বলেন, এই হুমকি ‘বাস্তব ও গুরুতর।’ তার মতে, এই ষড়যন্ত্র আঞ্চলিক সঙ্কটের গভীরতা এবং আরাকচির কূটনৈতিক ভূমিকাকে প্রতীকী দিক থেকেও আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।

নিজ বক্তব্যে রাঙ্গবারান আরাকচিকে কেবল অভিজ্ঞ কূটনীতিক হিসেবেই নয়, বরং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আরাকচি নিজেকে কেবল একজন কূটনীতিক হিসেবে দেখেন না, বরং তিনি নিজেকে মাতৃভূমির একজন সৈনিক মনে করেন।’ রাঙ্গবারান তার বক্তব্যের শেষে দেশের জনগণকে আহ্বান জানান, যাতে তারা আরাকচি ও তার সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ায় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায় তাদের সমর্থন জানায়। এদিকে, ইরান সতর্ক করে বলেছে, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরাইলি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ছে। এ অবস্থায় উচ্চপদস্থ ইরানি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পারমাণবিক ইস্যুতে এক সময়কার শীর্ষ আলোচক আরাকচি এখন পশ্চিমা কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এক মুখ এবং ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের চাপে ইরানের অবস্থান তুলে ধরার অন্যতম ব্যক্তিত্ব তিনি।

ইরানের ৩ মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংসের দাবি : ইরানের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানী তেহরান এবং অন্যান্য শহরে ১২৫ মিনিটব্যাপী বিমান অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলের বিমানবাহিনী (আইএএফ)। আইএএফের ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান এ অভিযানে অংশ নিয়েছিল। সেই অভিযানে ধ্বংস করা হয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো। একই অভিযানে নিহত হয়েছেন ওই কমান্ডারও।’ খবর আলজাজিরার।

ধ্বংস হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর অবস্থান কোথায় সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি বিবৃতিতে। তেমনি নিহত ওই কমান্ডারের নাম-পরিচয়ও জানা যায়নি। তবে আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত ওই কমান্ডার ধ্বংস হওয়া উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে ছিলেন এবং ‘ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার’ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইসরাইলের বৃহস্পতিবার রাতের অভিযান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু বলেনি তেহরান, তবে শুক্রবার ভোর থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে দেশটি।

হামলা বন্ধ না হলে আলোচনা নয় : ইরান ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তেহরান আলোচনায় বসবে না বলে আবারো জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। আরাকচি বলেছেন, ‘আমেরিকানরা আলোচনা চায় এবং কয়েকবার বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘এই অপরাধের অংশীদার হওয়ায় আমেরিকার সাথে আমাদের কোনো আলোচনা নেই।’

রয়টার্স জানায়, গত সপ্তাহে ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাত শুরুর পর প্রথমবারের মতো পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকের জন্য জেনেভায় গেছেন আরাকচি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছেন, শত্রুর আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ এবং ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অভিযান চিরতরে অবসানই আরোপিত এই যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ। অন্যথায় শত্রুদের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া আরো বেশি গুরুতর এবং ভয়াবহ হবে, বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি। সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের এই প্রেসিডেন্ট।

ইসরাইলে মাইক্রোসফট কার্যালয়ের কাছে হামলা : ইসরাইলে বহুজাতিক আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের কাছে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিরসেবা শহরে এ হামলায় কার্যালয়টির কাছে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ইসরাইলের দাবি, এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু আবাসিক ভবনও। গতকাল শুক্রবার বিবিসির লাইভ আপডেটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অগ্নিনির্বাপককর্মী ও প্যারামেডিকসরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরাইলের গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্ক লক্ষ্য করে ইরান হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সোরোকা হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইরানের হামলায়। হাসপাতালে হামলার বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। হাসপাতালে হামলার উদ্দেশ্য নয়। তবে মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের কাছে হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য এখনো আসেনি।

ইরানে হাসপাতালে হামলার প্রমাণ আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাঠাবে রেড ক্রিসেন্ট : গত এক সপ্তাহে ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানের পাঁচটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন বহু রোগীর সেবা ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান। শুক্রবার ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি এ তথ্য জানান। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হাসপাতালের রোগীরাও। ইরানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। কোলিভান্দ বলেন, ‘বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও তৈরি করেছে।’ হাসপাতালে এসব হামলার প্রভাব এবং এর প্রমাণ রেডক্রসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

ইসরাইলে ঢুকল অস্ত্রবাহী একডজন জার্মান ও মার্কিন বিমান : ইরানের হামলায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটি ইরানের হামলা ঠেকাতে ক্রমেই ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। ইসরাইলের আয়রন ডোম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিয়ে একের পর এক মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মান থেকে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ইসরাইলে নামছে এক ডজনের বেশি বিমান। গতকাল শুক্রবার মিডল ইস্ট মনিটরের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ইরানের সাথে চলমান সঙ্ঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে ১৪টি সামরিক কার্গো বিমান ইসরাইলে এসে পৌঁছেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, এসব বিমান সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ বহন করছে, যা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি’ জোরদারে সহায়তা করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৮০০টিরও বেশি সামরিক কার্গো বিমান ইসরাইলে এসেছে। তবে এসব বিমানে কী ধরনের সরঞ্জাম এসেছে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকেও এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে হিজবুল্লাহ : ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাতে নাক গলানোর ব্যাপারে লেবানিজ প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন হুমকির তোয়াক্কা না করে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে হিজবুল্লাহর বর্তমান নেতা শেখ নাইম কাসেম বলেছেন, ইরানে যা চলছে সেটা ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্রের মিলিত বর্বর আগ্রাসন ছাড়া কিছু নয়। এখানে তারা নিরপেক্ষ থাকবে না। তারা নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সিরিয়ায় বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধি টম ব্যারাকের বক্তব্যের জবাবে ওই বিবৃতি দেন কাসেম। চলমান সঙ্ঘাতে হিজবুল্লাহকে জড়ানোর বিষয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে ব্যারাক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাতে হিজবুল্লাহর কোনো হস্তক্ষেপ হবে খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্ট তার অবস্থানে খুব পরিষ্কার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto