Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

টাকা পাচার চলছেই

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর প্রভাবশালীদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দুবাইসহ অনেক দেশে বাড়ি-গাড়ি ও সম্পদ কিনেছেন। সাবেক এমপি-মন্ত্রী, নেতাদের অনেকে দেশের অবৈধ সম্পদ বিক্রি করে তা হুন্ডিতে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। বিদেশি বাংলাদেশি মিশন থেকে সম্পদ বিক্রির জন্য অনেকের ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নেওয়ার হিড়িক পড়েছে।

সবশেষ তথ্য বলছে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও ব্যাংকের টাকার পরিমাণ ৩৩ গুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে এই অঙ্ক ছিল ১৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ, ২০২৪ সালে তা এক লাফে পৌঁছেছে ৫৮৯.৫৪ মিলিয়ন ফ্রাঁতে, যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় আট হাজার ৯৭২ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যখন বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের উল্লম্ফন খুবই উদ্বেগের।

তাঁদের মতে, দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ক্ষমতার পালাবদল, বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের সুযোগের ফলে সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখায় আবারও আগ্রহ বেড়েছে।

বিশেষ করে ব্যাংক পর্যায়ের আমানতের এতটা উল্লম্ফন বৈদেশিক বিনিয়োগ বা আমদানি-রপ্তানির নামে অর্থ পাচারের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেও মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশ থেকে অর্থপাচার না হলে সেই অর্থ কোথাও না কোথাও বিনিয়োগ হতো। কেউ টাকা বিনিয়োগ না করলেও ব্যাংকে রাখত। ব্যাংকে রাখলে ব্যাংক সেই টাকা দিয়ে ঋণ দিত।

যিনি ঋণ নিতেন তিনি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সেই টাকা কাজে লাগাতেন। অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া মানে এই টাকা দেশে কাজে লাগছে না।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পাচারের অর্থ ফেরত আনতে টাকাটা দেশ থেকে বেরিয়েছে এবং যেখানে ঢুকেছে, সেটা আইনিভাবে প্রমাণ করতে হবে। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা সরকার শুরু করেছে। অন্তত ফ্রিজ করতে পেরেছে।

এতে পাচারকারী তাঁর অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন না। তার ওপর চাপ তৈরি হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুইচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের যে ব্যাংকিং তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের টাকা ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে, এটা উদ্বেগের বিষয়। সু্ইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে মূলত তিন ধরনের অর্থ রয়েছে। সেখানে এক গ্রুপ ব্যক্তি শ্রেণির, আরেকটা হলো পুঁজিবাজারের তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক। এখানে জমা রাখা সব অর্থ ব্যক্তি পর্যায়ের এবং ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তা নয়। কিন্তু এখানে জমা রাখা অর্থের মধ্যে পুঁজিবাজারের দায়ও আছে। দেশের পুঁজিবাজারের এমন মন্দার সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এই তথ্য আরো খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।’ 

মাশরুর রিয়াজ বলেন, জানুয়ারিতে একটা নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনের সময় ক্রসবর্ডার মানি লন্ডারিং বেড়ে যায়। আগস্টে সরকার পতনের পর যাঁরা দুর্নীতি ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন, তাঁদের নতুন সরকার টার্গেট করবে—এমন আশঙ্কা থেকেও সরকারি আমলা, এমপি, মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাদের নামে-বেনামে থাকা সম্পদ বিদেশে অর্থ সরিয়ে থাকতে পারে। তবে আগস্টের পর থেকে যেহেতু ব্যাংকে লুটপাট কমেছে, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমেছে। তাই আমরা আশা করতে পারি এই সময়ে অর্থপাচার কিছুটা কমেছে। পাচারের অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এটা ফেরত আনা আইনিভাবে খুবই জটিল প্রক্রিয়া। পাচারের অর্থ ফেরত কর্মরত সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্ত সমন্বয় বাড়াতে হবে।  

কত টাকা পাচার, পাচারকারীদের পছন্দের দেশ কোনগুলো

অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে সার্বিকভাবে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। ১০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেম্যান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি থেকে দুই লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে একজনের বিদেশি সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সামনে আরো সম্পদ জব্দ করা হবে।

জমি বেচে অর্থ পাচারের হিড়িক

আওয়ামী লীগ শাসনামলে ক্ষমতা আর পেশিশক্তির বলে মন্ত্রী, এমপি, আমলা, নেতা, পাতিনেতা, এলাকার বড় ভাই হিসেবে পরিচিত যে যেভাবে পেরেছেন জমি কিনেছেন, দখলে নিয়েছেন। তাঁরা কখনো নামমাত্র টাকায়, কখনো বা জোর করে লিখিয়ে নিয়েছেন অসহায় মানুষের জমি। ক্ষমতা হারানোর পর এসব নেতার বেশির ভাগই এখন পলাতক। কেউ দেশে আত্মগোপনে, কেউ বা আরব আমিরাত, কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে।

এই পলাতক নেতাদের অনেকেই এখন নিজেদের নামে-বেনামে কেনা জমিজমা যে যেভাবে পারছেন বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার রাজউক-পূর্বাচল নতুন শহর, রূপগঞ্জ, গাজীপুর, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানেই জমি বিক্রির এমন অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সাবেক ডিবিপ্রধান মনিরুলের গাজীপুরে ৯ বিঘা জমি বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে

বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে (২০২৪ সালের জুলাই থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) পাওয়া গেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৭৯ শতাংশ বেশি। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে তিন শ সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সংস্থাটি জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) মোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ১০৬। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সংস্থাটি বলছে, গত বছরের জুলাই মাসের পর থেকে রিপোর্টিংয়ের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে।

সরকারের উদ্যোগ

ইতিমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং একটি কমিটিও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কিছু কারিগরি সহায়তা লাগবে, পাচার হওয়া অর্থ সম্পর্কে অনেক তথ্যও লাগবে। অর্থপাচার অনেক দিন ধরে হয়েছে; ফেরত আনতেও সময় লাগবে। আমরা কাজ করছি।

গভর্নর বলেছেন, পাচারের অর্থ ফেরত আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পাচারকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে আদালতের বাইরে গিয়ে অর্থ উদ্ধার করা যায়। কাউকে জেলে নিয়ে হয়রানি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

বড় বাধা লেয়ারিং

বিদেশে টাকা পাচারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেয়ারিং করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে অন্য এক দেশে, পরে সেই দেশ থেকে নিরাপদ কোনো দেশে টাকাগুলো পাচার করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে সরাসরি শেষ গন্তব্যে টাকা পৌঁছেনি। এই অবস্থায় যেকোনো বিদেশি কোর্টে এসব টাকা বাংলাদেশ থেকে এসেছে তা প্রমাণ করা কঠিন হবে।

আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন কর্মকর্তা এ কথা জানান। তিনি আরো বলেন, এই লেয়ারিংই হচ্ছে টাকা ফেরত পাওয়ায় বড় বাধা। কোনো দেশই চায় না তার দেশে বিনিয়োগ হওয়া টাকা ফেরত দিতে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে অন্তত পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা। দ্বিতীয় ধাপে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ। তৃতীয় ধাপ, সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে অভিযোগ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আদালতে মামলা। চতুর্থ ধাপে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাচারকারীর বিরুদ্ধে দেশের আদালতের রায় এবং শেষ ধাপে টাকার গন্তব্য দেশের আদালতে আন্তর্জাতিক আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা করে পাচারকারীর বিরুদ্ধে রায় এলেই অর্থ ফেরানো সম্ভব।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে আড়াই শতাধিক তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি ও দুদকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০টির অডিট রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে একটা একটা করে মামলা করা শুরু করেছে দুদক।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে নানা রকম শঙ্কা বিরাজ করে। এ কারণে দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ছাড়াও সমাজের বড় মাপের কালো টাকার মালিকরা ওই সময় সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের চিন্তা করেন। ২০২৪ সালের শুরুতে ছিল জাতীয় নির্বাচন এবং একই বছর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এ দুটি প্রেক্ষাপটে দেশ থেকে টাকা পাচারের প্রবণতা বেড়ে যায়। যে কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে আগের বছরের তুলনায় টাকা জমা রাখার পরিমাণ ৩৩ গুণ বেড়ে যায়। তাঁরা মনে করেন, দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে দীর্ঘদিন থেকে টাকা পাচার হয়ে আসছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচার করা হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থপাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।

পাচারের টাকা ফেরত আসেনি

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য গঠিত টাস্কফোর্স গঠনের পর এখনো এক টাকাও ফেরত আসেনি। তবে জব্দ করা হয়েছে দেড় সহস্রাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, যেখানে পাওয়া গেছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অর্থ ও শেয়ার।

দুদকের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরত আনতে চাইলে প্রথমেই দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এ ছাড়া অর্থপাচার রোধে সরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto