Hot

নির্বাচনমুখী রাজনীতি

নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এলে বিনিয়োগ বাড়বে, চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি, তাই এখন নির্বাচন ঘিরে সবার আগ্রহ -মাহমুদ হাসান খান
ফেব্রুিয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে এ বিষয়টি মোটামুটি স্পষ্ট হওয়ায় দেশে নির্বাচনী একটা আমেজ শুরু হয়েছে -অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী
দেশের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আলোচনা। বিশেষ করে গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) একান্ত সাক্ষাতের পর নির্বাচন নিয়ে কারো কারো মনে যে সামান্য সন্দেহ ছিল- তারও অবসান হয়েছে। আগামী ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসছে রোজার আগেই অনুষ্ঠিত হবে- এটি এখন অত্যন্ত পরিষ্কার। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে সিডিউল ঘোষণা বাকি। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছর ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এর প্রথমিক ধাপ হিসেবে কমিশন সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী উপকরণ কেনাকাটা শুরু করবে। সব মিলিয়ে দেশে নির্বাচনের ট্রেন যে গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করেছে- তা এখন স্পষ্ট।

কিছুদিন আগেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার দাবি করে আসছিল। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যরা বলছিলেন, নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। আর অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বলছিল- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হলে ভালো হয়। তবে প্রধান উপদেষ্টা তার সর্বশেষ ভাষণে আগামী বছর এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়ার পর, জামায়াতে ইসলামীর আমির তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী এপ্রিলে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। তিনি তখন রোজার আগে নির্বাচন হলে ভালো হয়- এমন যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। এ ছাড়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বরাবরই আগে বিচার ও সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচনের দাবি করে আসছিল। প্রধান উপদেষ্টা তার সর্বশেষ ভাষণে এপ্রিলে নির্বাচনের হবে এমন ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপিও ও তার মিত্ররা এর প্রচন্ড বিরোধিতা করে। তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন তারিখসহ রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এতে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে এক ধরনের মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে আদৌ নির্বাচন হবে কি-না এ ধরনের অমূলক সন্দেহ তখন অনেকের মনে উঁকি দিতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের মধ্যমে সে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কেটে যায়। লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় বলা হয়Ñ আগামী রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এমন ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরে আসে। লন্ডন বৈঠকের পরই মূলত দেশের রাজনীতিতে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নানামুখী আলোচনায় কিছুটা অনিশ্চয়তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু গত ২৬ জুন সিইসি কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে একান্ত বৈঠকের পর সব অনিশ্চয়তার মেঘ এখন কেটে গেছে। আগামী ফেব্রæয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোতেই এখন চলছে প্রস্তুতি।

নির্বাচনের সময় বা তারিখ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি এত দিন আপত্তি করে এলেও এখন তারাও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে সারা দেশে তাদের ৩০০ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটে যাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীদের কাছে। সারা দেশে তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলছে। এনসিপিতেও চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। দল গোছানো থেকে শুরু করে তারাও প্রার্থী বাছাই করছে। এতদিন দলের নিবন্ধনের ব্যাপারে তারা চুপচাপ থাকলেও একেবারে শেষ সময়ে তারা নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছে। নির্বাচনের ট্রেনে বলা যায়Ñ তারাও এখন যাত্রী হয়েছে।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়েও দল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি এরই মধ্যে মিত্র দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছে। সর্বশেষ গত ২৬ জুন বিএনপি গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আগামী ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এটি এখন অনেকটাই স্পষ্ট। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রন্তুতি চলছে। যে যার মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, নির্বাচনের সময়টা স্পষ্ট হওয়ায় দেশের অর্থনীতিসহ সর্বত্রই একটি স্বস্তির হাওয়া বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব কর্মকাÐ এখন নির্বাচনমুখী।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলার চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই ফ্যাসিবাদের পতনের পরও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা স্থবিরতা বিরাজ করছিল। দ্রæত গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণের জন্য একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ ছিল দেশে-বিদেশে সর্বত্র। লন্ডন বৈঠকের পর আগামী ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবেÑ এ বিষয়টি মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। এরপর থেকে এখন দেশে নির্বাচনী একটা আমেজ শুরু হয়েছে। বলা যায়, এখন দেশের রাজনীতি আগামী নির্বাচনকে ঘিরেই চলবে।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন কষ্টকর। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেও সেখানে স্থবিরতা কাটছিল না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় আটকে ছিল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। সবারই প্রত্যাশা ছিলÑ দ্রæত একটি নির্বাচনের। লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচনের সময় স্পষ্ট হওয়ায় দেশে একটি স্বস্তি ফিরে এসেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এলে বিনিয়োগ বাড়বে। চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি। তাই এখন নির্বাচনকে ঘিরে সবার আগ্রহ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto