Hot

এ কেমন মানবিকতা?দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনা, আনিসাকে উদ্বিগ্ন না হতে বার্তা

আনিসা আহমেদ এইচএসসি’র প্রথম পরীক্ষায় বসতে না পারার আক্ষেপ যেন ছুঁয়ে যায় পুরো দেশের মানুষকে। পরীক্ষা দিতে না পারায় তার কান্না আর অসুস্থ মাকে হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার বর্ণনা শুনে আহত, ক্ষুব্ধ করেছে বহু মানুষকে। শিক্ষা বোর্ডের নিয়মের জালে মানবতা হেরে যাওয়ার এই ঘটনাকে বড়ই অমানবিক বলছে মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে এমন অমানবিক ঘটনার জন্ম দেয়া পুরো শিক্ষা কাঠামো নিয়ে। ঘটনা সংশ্লিষ্টদের দায় এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ ঘটনায় নেট দুনিয়ায় আলোড়ন ওঠার পর অবশ্য টনক নড়েছে শিক্ষা বিভাগের। ঘোষণা দেয়া হয়েছে আয়েশার পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়ার।

গত বৃহস্পতিবার সকাল। আনিসা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার। এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন। হঠাৎ আনিসার মা সুবর্ণা আহমেদ অসুস্থতা অনুভব করেন। বুকে ব্যথা নিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। বাবা নেই আনিসার। কী করবেন না করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। মাকে নিয়ে প্রতিবেশীর সহযোগিতায় যান মিরপুর ১ নম্বরে বাড়ির পাশের একটি হাসপাতালে। এরপর আসেন তার আত্মীয়স্বজনরা। মায়ের পাশে স্বজনদের রেখে তিনি রওনা দেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়ে যায় কেন্দ্রে পৌঁছাতে। কিন্তু বাদ সাধে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা। বিলম্বের কারণে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি কেন্দ্রে। পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনেই বসে পড়েন তিনি। দিগ্বিদিক ছুটে বেড়ান। কান্নাভেজা কণ্ঠে আকুতি জানান কেন্দ্রে প্রবেশের। এক হাত মাথায়, আরেক হাতে ফাইল। চোখে পানি। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত লোকজন বিচলিত হলেও গলাতে পারেনি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের মন। আনিসার কান্নার ছবি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। নেট দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকারের তরফে অবশ্য আনিসার পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনিসার মা সুবর্ণা আহমেদ চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। চিকিৎসকরা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানিয়েছেন তিনি শঙ্কামুক্ত। তবে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল টেলিফোনে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন সুবর্ণা আহমেদ। তিনি বলেন, আল্লাহ আমার বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। আমি ভালো আছি। আমাকে জানানো হয়েছে আনিসা পরীক্ষা দিতে পারবে। 

আনিসার মিরপুরে অবস্থিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। 
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা জারি করে শিক্ষা বোর্ড। এরমধ্যে উপস্থিতির বিষয়ে বলা হয়, পরীক্ষার কেন্দ্রে নির্ধারিত কক্ষে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য নির্দিষ্ট আসনে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে বসতে হয়। পরীক্ষার প্রথম দিন অবশ্যই সকাল ৯টার মধ্যে পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যদিন পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করলেই হবে। 
তবে বিশেষ কারণে কোনো পরীক্ষার্থী দেরি করে কেন্দ্রে পৌঁছালে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ারও কেন্দ্রগুলোকে দেয়া আছে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র প্রধান এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশ শেষ হওয়ার পর কাউকে আর প্রবেশ করার সুযোগ না দিতে নির্দেশনা রয়েছে। 

অনেকে বলছেন, মানবিক দিক বিবেচনায় আনিসার পরীক্ষা নেয়া যেতো। আনিসার সঙ্গে থাকা তার খালা গণমাধ্যমকে জানান, মেয়েটির বাবা নেই। সকালে তার মা স্ট্রোক করেছেন। পুরো পরিবারে কেউ নেই যে, দায়িত্ব নিতে পারে। তাই মেয়েটিই মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখান থেকে দৌড়ে এসে পরীক্ষা দিতে এলেও হলে ঢুকতে পারেনি।

এ বিষয়ে বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান বলেন, এখানে মানবিকতা ও আইন দুটোই আছে। এই ঘটনার পর আমি মেয়েকে বলেছিলাম, এমসিকিউ পরীক্ষা তো হয়ে গেছে। এখন তো তুমি পরীক্ষা দিলে পাস করতে পারবে না। কারণ এমসিকিউতে আলাদাভাবে পাস করতে হবে। আমি জানি তার খারাপ লাগছিলো। খুবই স্বাভাবিক। আবার মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে ঢুকতে দিলে দেরি করে আসায় কেন ঢুকতে দেয়া হলো সেটা নিয়েও হয়তো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।

তিনি আরও বলেন, আমি ওই মেয়ের কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে অনুরোধ করেছি যাতে যোগাযোগ করে পরবর্তী পরীক্ষা দিতে আসতে বলেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল হায়দার বলেন, মেয়েটি যখন পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে তখন প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এমসিকিউ পরীক্ষা শেষে এই সময় প্যাকেজিংও হয়ে যাওয়ার কথা। এই সময়ে পরীক্ষা নেয়া কতোটা সম্ভব ছিল এটাও একটা প্রশ্ন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, পরীক্ষার্থীদের জন্য যে নিয়ম আছে এটা তারা পালন করেছেন। তবে এই মেয়েটির পরিস্থিতির বিবেচনায় মানবিকতার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারতেন।

এদিকে, আনিসার বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা না নেয়া হলে তার হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে আইনি লড়াই করতে প্রস্তুত আছেন বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস (কাজল)।

এই পরীক্ষার্থীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জেরে বার্তা এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকেও। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, সেই পরীক্ষার্থীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার বলেন, মানবিক বিবেচনায় ওই শিক্ষার্থীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত আইন ও বিধির আলোকে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তার এ দুঃসময়ে আমরাও সমব্যথি। এ পরীক্ষার্থীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto