দেশের ৪০ শতাংশ কৃষক ন্যায্যমজুরি পান না

- সিলেট-খুলনায় সবচেয়ে পিছিয়ে, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রামে কিছুটা এগিয়ে
- ন্যায্যমজুরির বাইরে চার জনের এক জন কৃষক
- টেকসই নয় দেশের অর্ধেকের বেশি কৃষিজমি
- পর্যাপ্ত সেচ নেই ১৮ শতাংশ জমিতে
- সার-কীটনাশকে নিয়ম না মানায় ঝুঁকিতে কৃষিজমি
দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনীতির ভিত গড়ে তুলছে যে কৃষকসমাজ, তাদের এক বড় অংশই ন্যায্যমজুরি থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় কৃষিমজুরি হিসেবে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ টাকার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষক কম মজুরি পান। অর্থাৎ, চার জনের মধ্যে দুই জন কৃষকই এখনো প্রাপ্য আয় পাচ্ছেন না।
বিবিএস পরিচালিত ‘উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষি জরিপ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত ফলাফল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী এবং পরিসংখ্যান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশ কৃষক জাতীয় মজুরি বা তার বেশি আয় করলেও, অঞ্চলভেদে চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। সিলেট বিভাগে ৬৩ শতাংশ কৃষক এবং খুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষক ন্যায্যমজুরি থেকে বঞ্চিত। তুলনামূলকভাবে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে পরিস্থিতি ভালো, এখানে যথাযথ মজুরি পান যথাক্রমে ৭৫ ও ৭৩ শতাংশ কৃষক। ঢাকায় এই হার ৬৭শতাংশ। শহর ও গ্রামের মধ্যেও মজুরির ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। শহরে যেখানে ৭৬ শতাংশ কৃষক ন্যায্যমজুরি পান, গ্রামে এই হার মাত্র ৫৯ শতাংশ।
জরিপে উঠে এসেছে আরো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। দেশের মোট কৃষিজমির ৫৭ শতাংশ এখনো টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় আসেনি। এই জমিগুলোর বড় অংশ কৃষিঋণ, ইনসিওরেন্স কিংবা একাধিক ফসল উৎপাদনসুবিধা থেকে বঞ্চিত। এতে দুর্যোগে ফসলহানির ঝুঁকি আরো বাড়ছে। শহরাঞ্চলে এমন ঝুঁকিতে থাকা জমির হার ৪৪ শতাংশ। গত তিন বছরে দেশের ৭৯ শতাংশ কৃষিজমি অন্তত এক বছর লাভজনকভাবে ব্যবহৃত হলেও, বাকি ২১ শতাংশ জমি কোনো সময়েই লাভের মুখ দেখেনি। শহরাঞ্চলে এই হার আরো বেশি, ২৫ শতাংশ।
সার ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না মানা এবং পরিবেশবান্ধব কীটনাশকের অভাবে কৃষি ও পরিবেশ দুটোই ক্ষতির মুখে পড়ছে। জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪৩ শতাংশ জমিতে সার প্রয়োগে কোনো নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। কীটনাশকের ক্ষেত্রেও ৪৯ শতাংশ জমিতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি উপেক্ষা করা হয়।
সঠিকভাবে সেচ না পাওয়ায় দেশের ১৮ শতাংশ জমি প্রত্যাশিত ফলন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আলেয়া আক্তার বলেন, ‘শুধু উৎপাদন বাড়ালে হবে না, পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। উৎপাদনের উপকরণগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, ‘সার ব্যবহারে অপ্রয়োজনীয়তা উদ্বেগজনক। ইউরিয়াসহ বেশির ভাগ সার আমদানিনির্ভর। অথচ অনেক জায়গায় অতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে। আমরা খামারি অ্যাপ চালু করেছি, তবে তা এখনো জনপ্রিয় হয়নি।’
পরিসংখ্যান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী বলেন, ‘এই জরিপ ভবিষ্যৎ কৃষিনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ সভায় উন্মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন যুগ্ম সচিব দীপংকর রায়।