মঙ্গল কেন মরু গ্রহ

দূর থেকে মঙ্গল গ্রহকে একটি বিশাল লোহার লাল বলের মতো মনে হয়। আর তাই লাল রঙের মঙ্গল গ্রহ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। অনেকেই মঙ্গল গ্রহে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান রয়েছে বলে ধারণা করলেও নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অতীতে মঙ্গল গ্রহে বিভিন্ন নদী বিক্ষিপ্তভাবে প্রবাহিত হলেও সেগুলো কোটি কোটি বছর আগে শুকিয়ে গেছে। নদীগুলোর পলি ও ধুলাবালুর কারণে মঙ্গলগ্রহ এখন প্রায় পুরোটাই মরুভূমির মতো একটি বিরান গ্রহ।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বর্তমানে দূর থেকে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রাচীন নদী ও হ্রদের চলার পথ দেখা যায়। আর তাই ধারণা করা হচ্ছে, একসময় পৃথিবীর মতোই পানির প্রবাহ ছিল মঙ্গল গ্রহে। সেই গ্রহে বর্তমানে বেশ কয়েকটি রোভার প্রাণের আদি আবাসের সন্ধান করছে। লাখ লাখ বছর আগে মঙ্গলগ্রহ কতটা বাসযোগ্য ছিল, সেই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে রোভারগুলো। এরই মধ্যে মঙ্গল গ্রহে কার্বনেট খনিজ সমৃদ্ধ শিলার খোঁজ পেয়েছে কিউরিওসিটি রোভার। এই কার্বনেট পৃথিবীর চুনা পাথরে পাওয়া যায়।
মঙ্গল গ্রহের শিলা বিশ্লেষণের মাধ্যমে গ্রহটির অতীত সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মঙ্গল গ্রহে তরল পানির উপস্থিতি ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। সেই সময়ের ১০ কোটি বছর পর গ্রহটি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে মঙ্গল গ্রহের গভীরে তরল পানির কিছু অংশ এখনো থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এডউইন কাইট জানিয়েছেন, মনে হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ কিছু সময়ের জন্য বাসযোগ্য ছিল। গ্রহটিতে যেসব মরূদ্যানের খোঁজ পাওয়া গেছে, তা পৃথিবী থেকে কিছুটা আলাদা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইড আছে, যা গ্রহকে উষ্ণ করে। পৃথিবীতে দীর্ঘ সময় ধরে কার্বনেটের মতো পাথরে কার্বন ধারণের বিষয়টি খেয়াল করা যায়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত গ্যাসকে বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে আনে, যা ধারাবাহিকভাবে জলবায়ু চক্র তৈরি করে। একই ধরনের একটি চক্র মঙ্গল গ্রহেও ছিল। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল গ্রহের আগ্নেয়গিরির গ্যাস নির্গত হওয়ার হার দুর্বল ছিল বলে তাপমাত্রার ভারসাম্য দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে।