USA

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মারধরে মার্কিন নাগরিক নিহত, তদন্তের দাবি

ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা এক মার্কিন তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন নিহত ব্যক্তির স্বজন ও মানবাধিকারকর্মীরা।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানানো হয়েছে, রামাল্লার উত্তরে সিঞ্জিল শহরে গতকাল শুক্রবার সাইফুল্লাহ মুসাল্লেত নামের কুড়ির কোঠার ওই তরুণকে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা আক্রমণ ও হত্যা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ট্যাম্পা শহরের বাসিন্দা মুসাল্লেতকে ‘ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছেন’ বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘পশ্চিম তীরে একজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়ে আমরা অবগত আছি।’ তবে ভুক্তভোগী পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলে তিনি বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

মুসাল্লেত সাইফ আল-দিন মুসালাত নামেও পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিস্তিনে থাকা স্বজনদের দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানান তাঁর চাচাতো বোন ফাতমাহ মুহাম্মদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান ফাতমাহ।

ঘটনার সময় মোহাম্মদ শালাবি নামের আরও একজন ফিলিস্তিনি বসতি স্থাপনকারীদের গুলিতে নিহত হন বলে জানায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মুসাল্লেত সাইফ আল-দিন মুসালাত নামেও পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিস্তিনে থাকা স্বজনদের দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানান তাঁর চাচাতো বোন ফাতমাহ মুহাম্মদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান ফাতমাহ।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার ঘটনা নিয়মিতভাবে নথিভুক্ত করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। এসব হামলার অনেক সময় ফিলিস্তিনিদের বসতিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, বাড়িঘর ও যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। অনেক সময় এসব হামলাকে গণহত্যার পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করা হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব হামলার সময় প্রায়ই বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপত্তা দেয়, আর ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করতে এলে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, পশ্চিম তীরের এসব ইহুদি বসতি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ বসতি স্থাপনকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বৃহত্তর কৌশলের অংশ বলেও মনে করা হয়।

ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু পশ্চিমা দেশ সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর তাদের হামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে।

ট্রাম্প নিজেই সব সময় বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, কিন্তু ইসরায়েল যদি একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যা করে আর তাতেও যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রকেই আগে না রাখেন, তবে এটা প্রকৃতপক্ষে ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ প্রশাসন।

—এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের উপপরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বসতি স্থাপনকারীদের ওপর তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

২০২২ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৯ জন মার্কিন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন আল–জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহও। কিন্তু এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।

প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কয়েক শ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠীর অভিযোগ, মার্কিন সরকার বারবার ইসরায়েলি সহিংসতা থেকে নিজেদের নাগরিকদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

মুসাল্লেত হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) এ বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

সিএআইআরের উপপরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আগে কোনো হত্যার বিচার করেনি, তাই ইসরায়েল সরকার নির্বিঘ্নে মার্কিন ফিলিস্তিনি ও অন্য ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে চলেছে।’

আহমেদ মিচেল আরও বলেন, ‘ট্রাম্প নিজেই সব সময় বলেন, “আমেরিকা ফার্স্ট”, কিন্তু ইসরায়েল যদি একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যা করে আর তাতেও যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রকেই আগে না রাখেন, তবে এটা প্রকৃতপক্ষে “ইসরায়েল ফার্স্ট” প্রশাসন।’

ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং (আইএমইইউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও সরকারের পূর্ণ সহযোগিতায় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীরা এখন ফিলিস্তিনিদের ওপর আরও বেশি আক্রমণ করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মার্কিন সরকারের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব, ইসরায়েলের বর্ণবাদী সহিংসতা বন্ধ করা। কিন্তু এর বদলে তারা সেটার পৃষ্ঠপোষকতাই দিয়ে যাচ্ছে।’

মুসাল্লেত হত্যার বিষয়ে আল–জাজিরার অনুরোধেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস মুসাল্লেত হত্যাকাণ্ডকে ‘বর্বরতা’ বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের প্রতি বসতি স্থাপনকারী ও তাঁদের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

তবে ইসরায়েল বলেছে, তারা ঘটনা তদন্ত করছে। একই সঙ্গে দাবি করেছে, ‘ফিলিস্তিনিরা একটি ইসরায়েলি গাড়িতে পাথর ছোড়ায়’ সহিংসতা শুরু হয়।

উল্লেখ্য, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ও ইসরায়েলি সেনাদের সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা এ হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto