ফায়দা নিচ্ছে কারা?

পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপরাজনীতি মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার : চাঁদপুরে ইমাম হত্যাচেষ্টা : লালমনিরহাটে থানা ঘেরাও : পুরান ঢাকায় সোহাগ হত্যাকাণ্ড
পুরান ঢাকার একটি নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। পৈশাচিক কায়দায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংস হত্যা গোটা জাতির বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছে। সোহাগকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে শরীরের ওপর উঠে লাফায় খুনিরা। এ যেন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াতকর্মীকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের খুনিদের পৈশাচিক নৃত্যের দৃশ্যের পুরনাবৃত্তি। ভাঙ্গারি ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে সোহাগ হত্যাকা-ের সঙ্গে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের স্থানীয় নেতার নাম জড়িয়ে গেছে। মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংস এ হত্যাকা-ে যুবদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চালানো হচ্ছে। হত্যাকারী যে দলেরই হোক সে ক্রিমিনাল; তাদের আশ্রয় দেয়া অপরাধ। যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যুবদলের পাঁচজনকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, ‘পুলিশ যাদের বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে, তাদের গ্রেফতার হয়নি। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মূল আসামিদের আড়াল করা হচ্ছে অভিযোগ করে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘৯ জুলাই ঘটনা হঠাৎ করে ১১ জুলাই ব্যাপক প্রচার পেলো কেন? আগে কেন প্রচার হয়নি? এখানে কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে?’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই এবং প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত পৈশাচিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটির দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আহ্বান জানিয়ে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানান। প্রশ্ন হচ্ছে, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকা-ের ব্যাপক প্রচারণায় রাজনৈতিক ফায়দা কারা পাচ্ছেন? জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পুরান ঢাকার ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে যুবদলের স্থানীয় নেতার নাম আসায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে উঠেছে। উদ্দেশ্যÑ বিএনপিকে খুনির দল হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা। অথচ সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মারধর এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রামে থানা ঘেরাও করে আসামি ছিনতাইয়ের অঘটন নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে জামায়াত কেবল পাটগ্রামের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে। ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় নেতার নাম ছিল। কিন্তু পটিয়ার ঘটনায় এনসিপি জড়িত থাকায় জামায়াত নীরব থাকে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগরে দু’টি অপ্রীতিকর ঘটনা, গাজীপুরে মসজিদের ইমামকে মারধরসহ সারা দেশে অনেকগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনার পর এনসিপি-জামায়াত নীরব। তাহলে কি বিএনপির এক নেতার ‘নির্বাচন বানচালের ধান্ধা’ এবং যুবদলের সভাপতির ‘সরকারের একটি অংশ’ স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে যথার্থ? দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এনসিপি-জামায়াতসহ কিছু দল এবং সরকারের ভেতরেই একটি গ্রুপ আইনশৃঙ্খলা অবনতির বাহানা তুলে ‘নির্বাচনী পরিবেশ নেই’ বক্তব্য দিচ্ছে। তারা কি রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার লক্ষ্যে শত অঘটন-ঘটনের মধ্যে দু’-একটি ঘটনা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবাদী প্রচারণায় নামছেন?
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাস নৃশংসভাবে হত্যা, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-, ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে র্যাবের নেতৃত্বে সেভেন মার্ডারসহ অসংখ্য পৈশাচিক হত্যাকা-ের ঘটনা শেখ হাসিনা ভিন্নখাতে প্রবাহিতের চেষ্টা করে গণধিকৃত হয়েছে। বিএনপি হাসিনার মতো অস্বীকারের পথ অনুসরণ করে দায় এড়ায়নি; বরং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘জুলাই হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে’ রাজসাক্ষী হওয়ার মতো লালচাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকা-ে জড়িত যুবদলের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘মিটফোর্ড এলাকায় পাথর মেরে মানুষ হত্যার ঘটনায় কিছু রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপিকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। দুই-একটি রাজনৈতিক দল মিছিল করে নিজেদের ফায়দা লুটতে চাচ্ছে এবং বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।’
নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করেছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পুরান ঢাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকা- ইস্যু নিয়ে তিনি বলেছেন, সরকার নৈরাজ্যকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। যারা মব তৈরি করছে, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। প্রশাসনের মধ্যে এখনো স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে, নতুন ভূত জন্ম হচ্ছে। সবাইকে বলব সচেতন হোন, না হয় দেশকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। পুরান ঢাকায় হত্যাকা-ে স্ক্রিনে যাকে দেখেছি হত্যা করতে, তাকে কেন সরকার এখন পর্যন্ত অ্যারেস্ট করেনি? যারা বিভিন্নভাবে মব সৃষ্টি করে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে, সেখানে কি সরকারের কোনো প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে?’
হাসিনা পালানোর আগে উন্নয়নের নামে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে গেছে। ভঙ্গুর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগ করবেন। দু’মাস আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রায় অর্ধশত দেশের বিনিয়োগকারী ৩১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই বার্তা দিয়েছেন। চার কোটি নতুন ভোটারসহ প্রায় ১২ কোটি ভোটার ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নির্বাচনের আকাশে এতদিন যে কালোমেঘ ছিল তা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। হাসিনার সরাসরি নির্দেশে জুলাই-আগস্টে রাজধানীতে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এমন অপরাধের যাবতীয় বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীরা পেয়েছেন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জুলাই-আগস্ট হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখন দোরগোড়ায়; তখন ভারতের নীলনকশা অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে সংসদে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচন, নির্বাচনের আগে হাসিনার বিচার, জুলাই সনদ ঘোষণার দাবিতে মাঠ গরমের চেষ্টা চলছে। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার বিচার ও জুলাই সনদ ঘোষণা প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু ‘নির্বাচনের পরিবেশ নেই’-এমন অজুহাত তুলে নির্বাচন পেছানোর লক্ষ্যে কয়েকটি দল ঐকবদ্ধ হয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালাচ্ছে। ভারতের নীলনকশা বাস্তবায়নে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করা দলগুলো নির্বাচন পেছানোর দাবির পাশাপাশি ‘বিএনপি চাঁদাবাজ দল’ ব্র্যান্ডিং করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রথমে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ট্রিপল হত্যাকা-ের লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। দু’টি ঘটনায় বিএনপি ও যুবদলের নেতারা জড়িত এমন প্রচারণা চালায় জামায়াত, এনসিপি এবং কিছু ভাড়াটে ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও দিল্লির তাঁবেদার গণমাধ্যম। তারা যুবদলের স্থানীয় নেতা ধর্ষণ-ট্রিপল মার্ডারে জড়িত এমন প্রচারণা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিযোগিতায় নামে। কিন্তু পরে দেখা যায়, ধর্ষণ ঘটনা প্রেমজনিত এবং এ কা-ে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত। আর ট্রিপল মার্ডারের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের দূরতম সম্পর্ক নেই। অথচ জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা প্রতিটি সভা-সমাবেশে এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নাম জড়িয়ে মাঠ গরম করেন। এমনকি জাতায়াতপন্থি ইসলামী কয়েকজন বক্তা জলসা ও ওয়াজ মাহফিলে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। ওয়াজ মাহফিল ও ইসলামী জলসায় বিএনপির বিরুদ্ধে ইসলামী বক্তাদের মিথ্যা প্রচারণা তাদের সম্পর্কে মানুষকে কী বার্তা দেয়?
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম পৈশাচিক ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর। মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক অপ্রকৃতিস্থ যুবককে পেটানো হয়। প্রথমে বেঁধে রেখে এবং হলের ক্যান্টিনে জোর করে ভাত খাইয়ে পৈশাচিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় জামায়াত, এনসিপি নীরব ছিল। অতঃপর একের পর এক হত্যাকা- এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ‘মব সন্ত্রাস’ প্রচার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এশিয়া প্যাসিফিক ইউনির্ভাসিটির ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়াও যশোর, খুলনাসহ কয়েকটি এলাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকা- ঘটনায় জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো নীরবতা পালন করেছে। অথচ পুরান ঢাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকা-ে স্থানীয় যুবদল নেতার নাম আসায় ওই দলগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছে। অথচ বিএনপি উদারতা দেখিয়ে ওই হত্যাকা-ের নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছে। দলটির কয়েকজন নেতা বলেছেন, ‘অপরাধকে অপরাধ হিসেবে দেখতে হবে। অপরাধী যে দলের হোক তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। পুরান ঢাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যাকা- জড়িতদের বিচার করতে হবে’। ওই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপরদিকে এ ঘটনায় পুলিশের করা অস্ত্র মামলায় রবিন নামে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগের পৈশাচিক হত্যাকা- নতুন কোনো ঘটনা নয়। দেশে একের পর এক এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকা- ঘটেই চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে সারা দেশে খুন হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৭ জন। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর খুন হন চার হাজার দুজন। প্রতি মাসের হিসাবে ৩৩৩ জন। প্রতিদিন গড়ে খুন হন ১১ দশমিক ১১ জন। এই ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছেন প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের বছর ২০১৪ সালে। ওই বছর চার হাজার ৫১৪ জন খুন হন। পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর গত ১১ মাসে দেশে অনেকগুলো হত্যাকা-, সংঘবদ্ধভাবে ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি এসব ঘটনাকে মব সন্ত্রাস হিসেবে প্রচার করা হয়। পুলিশ প্রশাসনে এখনো হাসিনার অনুগত কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার পেছনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বাহিনী দায় এড়াতে পারে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হলে এবং হত্যাকা-ের পর নিরপেক্ষ তদন্ত হলে নতুন ঘটনা কম ঘটত। মূলত আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বরাবরই থেকেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে পুলিশ দলীয় বাহিনীতে পরিণত হওয়ায় দেশে ওই সময় পেশাদার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য ছিল বেশি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। ঘটেছে নৃশংস হত্যাকা-। দেশের অপরাধ ও সমাজ-বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শাসনকালে ক্ষমতায় টিকে থাকতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। নৃশংস হত্যার ঘটনায় অনেক মামলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল পুলিশের ওপর। এর ফলে পুলিশ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও থেকেছেন জবাবদিহির বাইরে। তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে বেশি সময় পার করেছেন। আওযামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত ও হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে পুলিশ প্রশাসন স্বাভাবিক হতে পারেনি। যার কারণে দেশে মব সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার নির্বাচনে পেছানোর অপচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতির ঘটনাও ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও স্থবির আর্থিক খাত সব কিছুর সমাধান গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকার। জনগণের ম্যান্ডেড নিয়ে যেকোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক। অন্তর্বর্তী সরকার অল্প কিছুদিনের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। তারা চাইলেও সবকিছু করতে পারবে না, এটিই স্বাভাবিক। যত দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে, তত দ্রুত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতে গতি ফিরবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার লাভ করবে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ঢাকা, খুলনা ও চাঁদপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকা-গুলো প্রমাণ করে, সহিংসতা ও বিচারহীনতা আমাদের সমাজকে কতটা গ্রাস করেছে। এই তিনটি ঘটনা আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।