নির্বাচনের আগেই হিলারির মানসিক সমস্যা সম্পর্কে জেনেও প্রকাশ করেননি পুতিন তুলসী গ্যাবার্ডের দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো তদন্ত প্রতিবেদন ও মতামত সামনে এসেছে। এবার নতুন তথ্য সামনে এল। এতে দাবি করা হয়েছে, ওই বছরের ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের কয়েক মাসেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের গুরুতর মানসিক অসুস্থতার বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বুধবার হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংয়ে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড এ দাবি করেন। রাশিয়া ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল কি না, তা নিয়ে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা-বিষয়ক কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। গোপনীয় প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেই তুলসী এ দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ওই গোপনীয় প্রতিবেদনটিও প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি নিজের ৪৪ পৃষ্ঠার পর্যালোচনা প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনছবি: রয়টার্স
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিলারি তখন ‘মানসিক ও আবেগজনিত সমস্যায়’ ভুগছিলেন। এ জন্য তিনি উচ্চমাত্রার (স্নায়ু) প্রশমনকারী ওষুধ সেবন করতেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতারা হিলারির শারীরিক অবস্থা নিয়ে ‘চরম দুশ্চিন্তায়’ পড়ে গিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাশিয়ার বিদেশবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার (এসভিআর) কাছে হিলারির স্বাস্থ্য নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির (ডিএনসি) হাতে থাকা তথ্য চলে যায়। এতে বলা হয়েছিল, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতাদের চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন, তাঁর এ অবস্থা নির্বাচনী ফলে ‘গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলতে পারে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তাঁর স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত তথ্য ‘সর্বোচ্চ গোপন’ রাখা হয়েছিল। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতারা পর্যন্ত এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবগত ছিলেন না।
প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, হিলারির ‘অনিয়ন্ত্রিত রাগ, মারমুখী আচরণ এবং অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসজনিত’ সমস্যার বিষয়টি পুতিন জানতে পেরেছিলেন। তবে হিলারি জিততে পারেন, এ ধারণা থেকে তা তিনি প্রকাশ করেননি। পুতিনের পরিকল্পনা ছিল নির্বাচনী ফলের পর তা প্রকাশ করা, যাতে হিলারিকে ঘায়েল করা যায়। কিন্তু নির্বাচনে তিনি হেরে যান। জিতে যান রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বর্তমানে ৭৭ বছর বয়সী হিলারি তখন ‘টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহে বাধা (ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ), গভীর শিরায় রক্ত জমাট (ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস) এবং শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগে (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) ভুগছিলেন।
বুধবার প্রকাশ করা গোপন নথি থেকে আরও জানা যায়, রাশিয়ার কাছে একটি ‘ক্যাম্পেইন ই–মেইল’ সম্পর্কেও তথ্য ছিল। যেখানে হিলারির অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। মেইলটিতে ট্রাম্পকে রাশিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল নিজের বিতর্কিত ই–মেইল কেলেঙ্কারি থেকে জনমত অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া।
এসব বিষয়ে জানতে হিলারির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল নিউইয়র্ক পোস্ট। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।