যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় বাংলাদেশীসহ নিহত ৪

নিহত পুলিশ সদস্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি বহুতল অফিস ভবনে বন্দুকধারী হামলা করেছে। এতে সন্দেহভাজন হামলাকারী এবং এক পুলিশ সদস্যসহ চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত পুলিশ সদস্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস জানিয়েছেন, মিডটাউনে হামলায় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন যাদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। এই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্য বাংলাদেশী অভিবাসী বলেও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তির গাড়িতে একটি এম-ফোর রাইফেল এবং গুলিবিদ্ধ ম্যাগাজিনসহ একটি রিভলবার পাওয়া গেছে। তার নেভাদা রাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।
সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে নিষ্ক্রিয় করার পর ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কথা জানিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ।
তবে কী কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি।
‘একজন লোককে স্ট্রেচারে করে বুকে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এক পথচারী আমাকে বলেছিলেন যে- তিনি প্রায় অনেকগুলো গুলির শব্দ শুনেছেন,’ এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন ঘটনাস্থলের কাছেই থাকা বিবিসি নিউজের সংবাদদাতা ইন্দ্রানি বসু।
তিনি জানান, ‘নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আমি লেক্সিংটন অ্যাভিনিউ এবং ৫১ স্ট্রিটের সংযোগস্থলে নিউইয়র্ক পুলিশের প্রায় তিনটি গাড়ি এবং দুটি এফডিএনওয়াই ট্রাক দেখতে পাই।’
নিউইয়র্কের এই ঘটনায় বন্দুকধারী ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি পুলিশ।
হামলাকারীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও তিনি কিভাবে মারা গেছেন তা এখনো জানানো হয়নি।
যদিও বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজের মতে, হামলাকারী আত্মঘাতী গুলিতে মারা গেছেন।
এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রের বরাত দিয়ে এই ঘটনায় একজন পুলিশ অফিসারের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানায় বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ।
একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সিটি মেয়র জানিয়েছেন, নিহত অফিসার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা একজন অভিবাসী। মেয়র অ্যাডামস তাকে ‘অফিসার ইসলাম’ বলে উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের কমিশনার জেসিকা টিশ জানিয়েছেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ওই কর্মকর্তার নাম দিদারুল ইসলাম।
তিনি জানান, অফিসার দিদারুল ইসলাম বিবাহিত ছিলেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। তার স্ত্রী তৃতীয় সন্তানের মা হতে চলেছেন।
‘আমরা তাকে যে কাজটি করতে বলেছিলাম তিনি সেই কাজটিই করছিলেন,’ তিনি বলেন।
‘তিনি চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছেন।’
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই এলাকার একটি নজরদারি ক্যামেরায় অস্ত্র হাতে, সানগ্লাস পরা একজন ব্যক্তিকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। যাকে সন্দেভাজন হামলাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত না করলেও ওই এলাকায় একজন সক্রিয় বন্দুকধারী থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা।
হামলাকারী কেন ওই ভবনটিতে হামলা চালিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
লাস ভেগাসের কর্মকর্তাদের মতে, গুলি চালানো সন্দেহভাজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিহাস তাদের কাছে নথিভুক্ত রয়েছে।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ‘তার উদ্দেশ্য এখনো তদন্তাধীন এবং আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি কেন সে এই নির্দিষ্ট স্থানটিকে লক্ষ্য করেছিল।’
যে ভবনটিতে গুলি চালানো হয়েছিল সেটি ছিল একটি বাণিজ্যিক অফিস ভবন।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ জানিয়েছেন, যে দু’জনকে ‘পেইড ডিটেইল’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এটি কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ইউনিফর্ম পরা অফিসারদের নিয়োগের অনুমতি দেয়, তিনি ব্যাখ্যা করেন।
মেয়র অ্যাডামস আরো বলেন, এই ‘ভয়াবহ’ অপরাধ আমাদের সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে- বন্দুক পাওয়া কতটা সহজ।
তিনি বলেন, বন্দুক সহিংসতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক মানুষকে স্পর্শ করেছে।
কিন্তু আজ রাতে যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য প্রার্থনা করছি, মেয়র আরো বলেন।
‘আমাদের অবশ্যই নিরীহ নিউইয়র্কবাসীদের রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হবে,’ তিনি নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশের কাছে মাইক্রোফোনটি তুলে দেয়ার আগে বলেন।