‘যেন সাইফাই মুভি’: যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের হিমায়িত ভ্রূণ থেকে জন্ম নিল শিশু; নতুন রেকর্ড

৬২ বছর বয়সী লিন্ডা ১৯৯৪ সালে তার সাবেক স্বামীর সঙ্গে আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে ভ্রূণটি তৈরি করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর এক দম্পতির ঘরে এক ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। তার ভ্রূণটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এটি সম্ভবত একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড। খবর বিবিসির।
৩৫ বছর বয়সী লিন্ডসি এবং ৩৪ বছর বয়সী টিম পিয়ার্স গত শনিবার তাদের ছেলে থাডিয়াস ড্যানিয়েল পিয়ার্স-এর জন্মের খবর জানান। এমআইটি টেকনোলজি রিভিউকে লিন্ডসি বলেন, ‘আমার পরিবার মনে করে, এটা যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার গল্প।’
বিশ্বব্যাপী এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় হিমায়িত থাকা কোনো ভ্রূণ থেকে সফলভাবে জীবিত শিশুর জন্ম হওয়ার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০২২ সালে জন্ম নেওয়া এক যমজ সন্তানের, যাদের ভ্রূণ ১৯৯২ সালে হিমায়িত করা হয়েছিল।
সন্তান নেওয়ার জন্য পিয়ার্স দম্পতি টানা সাত বছর চেষ্টা করার পর শেষ পর্যন্ত তারা লিন্ডা আর্চার্ড নামের এক নারীর একটি ভ্রূণ দত্তক নেন। ৬২ বছর বয়সী লিন্ডা ১৯৯৪ সালে তার তৎকালীন স্বামীর সঙ্গে আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে ভ্রূণটি তৈরি করেছিলেন।
তৎকালীন সময়ে লিন্ডা আর্চার্ড মোট চারটি ভ্রূণ তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে একটি থেকে জন্ম নেয় তার বর্তমান ৩০ বছর বয়সী মেয়ে। বাকি তিনটি ভ্রূণ হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও লিন্ডা বাকি ভ্রূণগুলো নষ্ট করতে চাননি, গবেষণার জন্য দিতে চাননি, এমনকি কোনো অজানা পরিবারের কাছেও দান করতে চাননি।
তিনি বলেন, শিশুটির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকাটা জরুরি, কারণ সে তার মেয়ের জেনেটিকভাবে আত্মীয় হবে।
এই ভ্রূণগুলো সংরক্ষণের জন্য তিনি প্রতিবছর হাজার হাজার ডলার খরচ করেছেন। পরে তিনি খুঁজে পান একটি খ্রিষ্টান ভ্রূণ দত্তক সংস্থা—নাইটলাইট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডপশনস। তারা স্নোফ্লেকস নামের একটি প্রোগ্রাম চালায়। এই ধরনের অনেক সংস্থা মনে করে, তারা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি প্রাণ বাঁচাচ্ছে।
লিন্ডা আর্চার্ড যে ‘স্নোফ্লেকস’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভ্রূণ দান করেন, সেখানে দাতারা পছন্দ অনুযায়ী দম্পতি বেছে নিতে পারেন। তারা চাইলে গ্রহণকারীর ধর্ম, জাতি ও জাতীয়তা সম্পর্কেও নির্দিষ্ট পছন্দ জানাতে পারেন।
লিন্ডার পছন্দ ছিল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত, বিবাহিত, শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিষ্টান একটি দম্পতি। তিনি বলেন, তিনি চাননি ভ্রূণ ‘দেশের বাইরে’ চলে যাক।
শেষ পর্যন্ত তার ভ্রূণ লিন্ডসি ও টিম পিয়ার্স দম্পতির সঙ্গে মিলে যায়।
দম্পতির আইভিএফ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা ক্লিনিক, টেনেসির রিজয়েস ফার্টিলিটি জানায়, তাদের লক্ষ্য যেকোনো ভ্রূণই স্থানান্তর করা, সেটির বয়স বা অবস্থা যেমনই হোক না কেন।
লিন্ডসি পিয়ার্স বলেন, তারা কোনো রেকর্ড ভাঙার উদ্দেশ্যে এগোননি, তারা শুধু একটি সন্তান চেয়েছিলেন।
লিন্ডা আর্চার্ড বলেন, তিনি এখনও শিশুটিকে সামনাসামনি দেখেননি, তবে ইতোমধ্যেই তার মেয়ের সঙ্গে শিশুটির চেহারার মিল খুঁজে পাচ্ছেন।